কোন চিন্তা ভাবনা ছাড়াই অফিসের তিন বন্ধু সাজেক যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়ি। রাত 10.00 ঘটিকায় ফকিরাপুল থেকে রওনা দিয়ে সকাল 7.00 ঘটিকার দিকে খাগড়াছড়ি পৌছাই। সকালের নাস্তা করে সাজেকের উদ্দেশ্যে রওনা দিব, কিন্তু সমস্যা হচ্ছে চান্দের গাড়ী তে অনেক খরচ, কিন্তু আমরা অন্য কোন দলের সাথে মিলতে ও পারছিনা। আমরা মাত্র 03 জন কি করব ভেবে পাচ্ছিনা।
মজার ব্যাপার হল নাসির নামে এক স্কুল শিক্ষক একাই সাজেক যাওয়ার জন্য খাগড়াছড়ী পৌছেছেন। বুজলাম তারও আমাদের মত কোন অভিজ্ঞতা নেই। তার কথাবার্তায় ভাল মানুষ মনে হওয়ায় আমাদের সাথে নিয়ে নেই। চার জনে একটা সিএনজি 5000 টাকায় ভাড়া করে রওনা দেই সাজেকের উদ্দেশে।
আর্মি চেক পোষ্টে সিএনজিটা থামাল, আমরা পাহাড়ী পাকা পেপে, জামবুরা দেখে লোভ সামলাতে পারলামনা। তাই বক্ষন শুরু। বক্ষন শেষে আর্মি চেকপোষ্ট এ নাম, গাড়ীর নাম্বার লিপিবদ্ধ করে আমার আবার যাত্রা শুরু করি। পাহাড়ের উচু নিচু পথ যে কি মনোরম দৃশ্য সৃষ্টি করেছে তা ভাষায় প্রকাশ করার মতনা।
রাস্তার দুপাশে মাঝে মাঝে উপজাতীয়দের ছোট ছোট বাড়ি দেখা যাচ্ছে। মাঝে মাঝে উপজাতীয়দের ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা হাত নাড়ছে। এস দেখতে দেখতে সাজেকে মূল পাহাড়ে উঠার সময় সিএনজিটি একটু থামায়। আমরা পাশেই একটা ছোট ঝর্না দেখতে পাই। আমরা হাত মুখ ধোয়ার উদ্দেশে ঝর্নাটির কাছে যাই, কিন্তু এত সচ্ছ ও ঠান্ডা পানি দেখে কেইউ গোসল করার লোভটি সামলাতে পারিনি।
লুঙ্গি পড়ে খালি গায়ে গোসল করার এক অন্য রকম অনুভুতি। আমাদের দেখা দেখি আরও কিছু পর্যটক ও আমাদের সাথে যোগ দেয়। সারা রাত বাসে চড়ে আবার দুপুর পর্যন্ত সিএনজি তে চড়ে শরীরের যে পরিমান ক্লান্ত হয়েছিল, এই ঝর্নার ঠান্ডা পানি সব ক্লান্তি ধোয়ে নিয়ে গেল। অবশেষে আবার যাত্রা শুরু করে দুপুর 1.00 ঘটিকার দিকে সাজেক পৌছে আরেক বিরম্বনা। আমরা আগে থেকে হোটেল ভাড়া করে যাইনি।
তাই কোন হোটেল বা রেষ্টহাউসে আসন ফাকা নাই। অনেক ঘুরাঘুরির পর এক উপজাতীর 2টি রুম ভাড়া নিয়ে নেই। সাজেকের দুইটি ব্যাপার আমার মন কেড়েছে, প্রথমত আমরা সাজেকে একটু খুলা যায়গায় দাড়িয়ে ছবি তুলছিলাম হঠাৎ একগুচ্চ মেঘ পূরো সাজেক কে গ্রাস করল, আমি আমার হাতের আঙ্গুলে ফাক দিয়ে মেঘ যেতে দেখলাম, দ্বিতীয়ত পর দিন সকালের ঘটনা, সকালে ঘুম থেকে উঠে বাথরুমে যাব, কিন্তু তাদের বাথরুমের অবস্থা খুব খারাপ ছিল বলে, একটা সামনে হেটে যাই, ঠিক তখন আমার চারপাশে চোখ পড়ে, আমিতো অবাক আমার মনে হল আমি একা এক মেঘের দ্বীপের মধ্যে দাড়িয়ে আছি।
চার পাশে শুধু মেঘে আর মেঘ, উপরে, নিচে যে দিকেই তাকাই। এ এক অন্য রকম অনুভূতি। বাসায় এসে সবাইকে ঘুম থেকে উঠিয়ে আমরা কংলাক পাহাড়ের দিকে রওনা দেই। অনেক কষ্ট করে পাহারে উপরে উঠে মনে হয় পৃথিবী যদি এত সুন্দর হয় তাহলে বেহেস্ত না যানি কত সুন্দর। অবশেষে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে আমার ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।