রিভিউ
অভিমানিনী
লেখক মৌরি মরিয়ম
এই সময়ের জনপ্রিয় লেখিকা মৌরি মরিয়ম এর প্রকাশিত দ্বিতীয় বই এটি।অভিমানিনী উপন্যাসটি ২০১৯ সালে অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়।এর পূর্বে ২০১৮ তে মৌরি মরিয়মের প্রথম উপন্যাস প্রেমাতাল এর মাধ্যমে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।
লেখক কথনঃ
মৌরি মরিয়মের পৈতৃক নিবাস বরিশালের গৌরনদী তে হলেও ছোটবেলা কেটেছে রাজধানীর ধানমন্ডিতে। ২০১৫ সালে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতক করেছেন।
বইপড়ার নেশা থেকেই লেখালেখির শুরু। লেখালেখির শুরুটা স্কুল ম্যাগাজিন থেকে।এখন পর্যন্ত তার প্রকাশিত বইয়ের মোট সংখ্যা ৭।
ভ্রমণ ও রান্না তার শখ।
উৎসর্গ কথাঃ
অভিমানিনী বইটির উৎসর্গ নিয়ে লেখিকার রয়েছে ব্যক্তিগত জীবনের যন্ত্রণার গল্প ।
উৎসর্গ পৃষ্ঠাতে উল্লেখ করা আছে, “আমার বাবা কে। যে সামনা সামনি আমাকে বকে তবে পেছনে আমাকে নিয়ে গর্ব করে।”
তবে এই উৎসর্গ কথাটি প্রিয় বাবাকে জানানো হয়নি লেখিকার। তার আগেই প্রিয় বাবা পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেছেন অজানা না -ফেরার দেশে।
চরিত্র সমূহঃ
নীরব, মানসি, দিতিয়া, অর্পি, অদ্রি, দিহান, সৌরভ প্রমুখ।
প্রথমেই অর্পি, অদ্রি কে নিয়ে কথা বলা যাক। অর্পি, অদ্রির দূর্ঘটনা বশত তাদের বড়চাচা নীরবের ব্যক্তিগত ডায়েরি পড়ে যায়, যা তাদের বাড়ির পারিবারিক লাইব্রেরিতে ছিল । অদ্রি, অর্পির চেয়ে বয়সে বড়। সে অর্পিকে বারণ করে যেন সে বড়চাচার ব্যক্তিগত ডায়েরি না পড়ে । তবে ডানপিটে স্বভাবের অর্পি তা শোনে না, এবং অদ্রিকে নিয়েই সে ডায়েরি পড়া শুরু করে , এবং পড়া শুরু করে জানতে পারে তার বড়চাচার সাথে থাকা অন্য কারো সম্পর্কের কথা।
তবে সে মানুষটি তাদের চাচি দিতিয়া নয়।
মানসি নামের অন্য এক জন।
তবে ডায়েরির সুত্রে তারা জানতে পারে মানসির সাথে নীরবের বিয়ের কথা, এবং অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে অদ্রি মুলত ছোটবেলায় তার মা এর চেয়ে মানসির কাছে থাকতে পছন্দ করতো, মানসি বাদে কেউ অদ্রি কে ঘুম পাড়াতে পারতো না। অথচ, অদ্রি- অর্পি কখনো মানসি নামটি তাদের বাড়িতে শোনেনি পর্যন্ত!!!!
ডায়েরির সুত্র ধরেই অভিমানিনী গল্পের ঘটনা আবর্তন।
নীরব ও মানসির বিয়ের পর যখন দুই পরিবারের লোকজন তা জানতে পারে তখন না চাওয়া সত্ত্বেও তাদের বিচ্ছেদের স্বীকার হতে হয়। পরস্পরকে পাগলের মতো ভালবাসা দুজন মানুষের বিচ্ছেদ এই গল্পের কাহিনিকে করেছে যন্ত্রণাদায়ক।
নিরব- মানসি’র বিচ্ছেদের পর, পারিবারিক চাপে নিরবের জীবনে আসে দিতিয়া।
দিতিয়ার চরম ধৈর্য, তার সহ্যশক্তি তাকে প্রিয় চরিত্রগুলোর একটি বানিয়েছে।
এবং সর্বশেষ মানসির আত্মহত্যা তাকে এই গল্পে করে গেছে অমর।
তার সুইসাইট নোটে লেখাগুলো এমন ছিল, বাবা আমি তোমার সব কথা মুখ বুঝে সহ্য করেছি তবে, নিরবকে ছাড়া অন্য কোন মানুষকে আমি আমার জিবনে আনতে পারবো না।তাই চলে গিয়ে তোমাকে হারিয়ে গেলাম।
অসাধারণ কিছু কথোপকথনঃ
১.সেদিন চৈত্র মাস ছিল কিনা জানি না,তবে তোর এই দৃষ্টিতেই আমার সর্বনাশ”
২.আমি উপরের তাকাতেই যে দৃশ্য দেখতে পেয়েছিলাম যা দেখে বুক হু হু করে ওঠলো, মানসী বারান্দায় দাড়িয়ে ওড়নায় দিয়ে মুখ চেপে কাঁদছে, যত তুচ্ছ কারনেই কাঁদুক না কেন আমি বুকে জরিয়ে ধরতাম ও চোখ মুছে দিতাম এবং আদর করতাম আর আজ সত্যি অনেক বড় কারনে কাঁদছে, আমি দূর থেকে দেখছি শুধু!
আমি কি অমানুষ! সেই মুহূর্তেও একটু কাঁদতে পারিনি”
৩. তুই তো ওকে মানসী বানিয়ে দিয়ে খালাস! ওকে ওভাবে দেখে আমার উপর দিয়ে কি মানসিক চাপ যাবে তা তো ভাবিসনি।
অসাধারণ প্লট, চরিত্র – আবর্তন, ঘটনা – সঞ্চালন অভিমানিনী কে করেছে তুমুল জনপ্রিয়।
এখনও অমর একুশে বইমেলায় তাম্রলিপি থেকে প্রকাশিত এই বইটি পাঠকরা সংগ্রহ করতে আসে।
বইটি এখন ও রকমারি ডট কম সহ বিভিন্ন বূকশপে পাওয়া যাবে ।