জাতির বীর সন্তানদের জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।
আজ হাজারো রক্তস্রোত সেই অমর একুশে ফেব্রুয়ারি। আমাদের অত্যন্ত শোকের এবং গর্বের একটি দিন। হাজারো ভাইয়ের রক্তের বিনিময়ে আমরা প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এই দিনটি শুধু বাঙালি জাতিকে নয়, এ দিবসটি পৃথিবীর সব ভাষাভাষী মানুষের।
শুধু বাংলাদেশের নয়, বাংলাদেশের বাইরে পৃথিবী হাজার মানুষ এই দিনটিকে শ্রদ্ধাভরে পালন করে।
কিন্তু এই এই দিনটি বাংলাদেশের জন্য একটু ভিন্ন রকম।
কারণ রক্তস্রোতের মধ্য দিয়ে আমরা এই ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছি হয়তো ভাষার জন্য কোন জাতি এভাবে রক্ত দেননি।
এই দিনটি সব বাধা অতিক্রম করে বাংলা ভাষা কে নিজের মাতৃভাষাকে পাথেয় করে এগিয়ে যাওয়ার দিন। এই ভাষার আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠা করার জন্য সালাম,রফিক,বরকতসহ যারা আত্মদান দিয়েছেন আজকের এই দিন থেকে জাতি তাদের শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করছে।
এছাড়াও এমনিতেই শুক্রবার সপ্তাহের ছুটির দিন। তারপরে আবার আমাদের একুশে ফেব্রুয়ারি জাতীয় ছুটির দিন। সবকিছু মিলিয়ে সকালের শুরুর সঙ্গে সঙ্গে দেশের সব সরকারি, আধা সরকারি,স্বায়ত্তশাসিত, যাবতীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে।
তৎকালীন পাকিস্তান সরকার ঘোষণা দিয়েছিল,”উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা”। কিন্তু আমাদের বীর সম্পন্ন সেটা মানতে পারেন নি। তারপর শুরু হয় ৫২এর ভাষা আন্দোলন।
১৯৫২ সালের ৩১শে জানুয়ারি বাংলার বীর সন্তান মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর সভাপতিত্বে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা পরিষদ গঠিত হয়। ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা শহরের সব স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা উদ্যোগে কেন একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করা হবে তা নিয়ে হরতাল-অবরোধ শুরু করেন। শুরু হয় বিপ্লবী প্রতিবাদ। পাকিস্তান সরকার বাংলা ভাষাকে বিলুপ্ত করার প্রতিবাদে বিশাল বড় ধর্মঘট পালন করা হয়।
সেই ধর্মঘট পুরো দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। অবশেষে একুশে ফেব্রুয়ারি ধর্মঘট যাতে পালন করতে না পারে সেজন্য তৎকালীন পাকিস্তান সরকার খাজা নাজিমুদ্দিন ১৪৪ ধারা আইন ঘোষণা করেন।
কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বীর সন্তানেরা ১৪৪ ধারা আইন ভঙ্গ করে রাজপথে নামেন। শত্রুদের বিক্ষোভের সময় পুলিশ নির্মমভাবে গুলি চালায়।
নিহত হন রফিক,সালামব,জব্বার ,শফিউরসহ নাম না জানা আরো অনেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রক্তের বন্যা বয়ে যায়। এরপর পুরো দেশজুড়ে বিক্ষোভ অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। পরে উপায়ন্তর না দেখে এই রক্তকে আন্দোলনের কাছে পরাজয় মেনে নেয় পাকিস্তান সরকার। বাংলাকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র ভাষা স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়।
একুশের পথ ধরে শুরু হয় বাঙালি জাতির ঐতিহাসিক মুক্তির সংগ্রাম।