আসসালামু আলাইকুম সুপ্রিয় পাঠক এবং পাঠিকাগণ। কেমন আছেন আপনারা সবাই?আশা করি আপনারা সকলে যে যার অবস্থানে ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন।আপনারা সকলে নিজ নিজ অবস্থানে ভালো থাকুন এবং সুস্থ থাকুন সেই কামনাই ব্যক্ত করি সবসময়।
চলে এসেছে এসাইনমেন্ট সিরিজ। এসাইনমেন্ট সিরিজের ধারাবাহিকতায় আমি আজ নিয়ে এসেছি অষ্টম শ্রেনীর বাংলা এসাইনমেন্ট। আশা করি শিক্ষার্থীদর উপকার হবে।
প্রশ্নঃ” বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ” শিরোনাম এ একটি প্রচন্ধ রচনা কর।
বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ
ভূমিকা: হাজার বছরের বাঙালি জাতির ইতিহাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (১৯২০-১৯৭৫) শ্রেষ্ঠতম বাঙালি। গণতান্ত্রিক মূল্যচেতনা, শােষণ মুক্তির আকাঙ্ক্ষা এবং অর্থনৈতিক অধিকার। প্রতিষ্ঠা- এ ত্রিমাত্রিক বৈশিষ্ট্যই বঙ্গবন্ধুর জাতীয়তাবাদী ভাবনার মূল কথা। বাংলাদেশের কথা বলতে গিয়ে অনিবার্যভাবে এসে যায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা।
জন্ম ও পরিচয়: ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ মধুমতির তীরে গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন। যার জন্ম না হলে বাংলাদেশ নামে স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হতাে না। যার হাত ধরে বাঙালি জাতি দীর্ঘ সংগ্রামের পরিক্রমায় ২৪ বছরের পাকিস্তানি শাসকদের অপশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করে ছিনিয়ে এনেছিলেন একটি লাল সবুজের পতাকা, স্বাধীন – সার্বভৌম বাংলাদেশ। তার পিতার নাম শেখ লুৎফর রহমান এবং মাতার নাম সায়েরা খাতুন। দুই ভাই এবং চার বােনের মধ্যে তিনি পিতা – মাতার ৩য় সন্তান।
শিক্ষাজীবন: মাত্র ৭ বছর বয়সে ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে শেখ মুজিবুর গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয় ভর্তি হন। এখানেই তার প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন হওয়ার পর ১৯২৯ সালে তিনি ভর্তি হন গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে। এরপর ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ গােপালগঞ্জ মিশনারি হাইস্কুলে বঙ্গবন্ধু সপ্তম শ্রেণীতে ভর্তি হন।
এই স্কুল থেকেই ১৯৪২ সালে নাগাদ তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। তারপর উদ্দেশ্যে ১৯৪৪ সালে কলেজ থেকে আই.এ এবং এবং ১৯৪৭ সালে বি.এ পাস করেন। ওই বছর ভারত বিভাগের পর শেখ মুজিবুর আইন অধ্যায়নের উদ্দেশ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হন।
রাজনৈতিক জীবন: রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর এর জীবন কাহিনী অত্যন্ত বর্ণময়। তিনি তার জীবদ্দশায় মােট তিনটি দেশের নাগরিকত্ব ভােগ করেছেন প্রথমটি ব্রিটিশ ভারত, দ্বিতীয়টি পাকিস্তান রাষ্ট্র , এবং তৃতীয়টি সবচেয়ে উল্লেখযােগ্য ভাবে তার নিজের প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র। কৈশােরকাল থেকেই তিনি মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারের পক্ষে ছিলেন সোচ্চার।
আটচল্লিশ ও বায়ান্নর রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, চুয়ান্নর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, আটান্নর সাময়িক শ্বাসনবিরােধী আন্দোলন, বমিটির শিক্ষ আন্দোলন চিমটিৱচয় দফা উনসত্তরের মহান গণঅভুত্থান মন্তরের নির্বাচন, একাত্তরের গৌরবােজ্জ্বল মুক্তিযুদ্ধ বাঙালির প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তিনি পালন করেন নেতৃত্বের ভূমিকা।
মুক্তিযুদ্ধ সংঘটনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা: বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের প্রধান শক্তি – উৎসব ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। গণতান্ত্রিক অধিকারের পক্ষে তিনি ছিলেন সর্বদা বজ্রকণ্ঠ। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণ একটি জাতিকে জাগ্রত করেছে, সবাইকে মিলিয়েছে এক মােহনায়, সবাইকে করে তুলেছে স্বাধীনতামুখী- এমন ঘটনা বিশ্ব – ইতিহাসে বিরল।
হাজার বছরের অপেক্ষার শেষে ৭ মার্চের ভাষণ গােটা জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছে। স্বাধীনতার স্বপ্নে, মুক্তির সংগ্রামে। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ এ সূত্রেই অনন্য অতুলনীয় ঐতিহাসিক। ব্যক্ত হয়েছে যে, একটি ভাষণ ছিল। একটি জাতিরাষ্ট্র নির্মাণের মৌল শক্তি ও রাজনৈতিক দর্শন।
-১৯৭১ সালের মার্চ মাসে তদানীন্তন রাফাত হয়াহিয়া খান ঢাকায় আসেন এবং তার নির্দেশে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যা চালানাের পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকে। ২৫ শে মার্চ রাত বারােটা কুড়ি মিনিটে শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা ঘােষণা করেন এবং তার খানিকক্ষণের মধ্যে তিনি গ্রেফতার হন। তার পরদিনই রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খান সামরিক আইন জারি করে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘােষণা করেন এবং সমগ্র পাকিস্তানি জুড়ে সেনাবাহিনী ব্যাপক নিধন যজ্ঞ শুরু করে।
বিশেষ করে হিন্দুদের কে লক্ষ্য করে সমগ্র বাংলাদেশ জুড়ে রাজাকার। বাহিনীর সহযােগিতায় ব্যাপক দমন – পীড়ন শুরু হয়। অন্যদিকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে ও পুলিশ রেজিমেন্টে কর্মরত বাংলার মদস্যগণ বিদ্রোহ ঘােষণা করে মুক্তি আন্দোলনের উদ্দেশ্যে গঠিত মুক্তিবাহিনীতে যােগ দান করে।
এই পর্যায়ে মুজিবনগরে প্রতিষ্ঠিত অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই মুক্তিবাহিনী এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘটিত যুদ্ধটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ রূপে পরিচিত।
তারপর ওই বছরের ডিসেম্বর মাস নাগাদ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সরকারের যােগদানের পর পাকিস্তানি বাহিনী মুক্তিযােদ্ধা এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। বাংলাদেশের তথা বাঙালির স্বাধীনতা লাভ সম্পর্ণ হয়। শেখ মজিবুর করাচির কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে দিল্লি হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের ঢাকায় ফিরে আসেন এবং রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ৫ লাখ মানুষের সামনে বক্তৃতা দেন।
ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড: যে দেশকে স্বাধীন করার জন্য তিনি আজীবন লড়াই করেছেন সেই দেশেরই একদল সেনা কর্মকর্তার হাতে ১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট ধানমন্ডি রাষ্ট্রপতি ভবনে বঙ্গবন্ধু তার সম্পূর্ণ পরিবার এবং সকল ব্যক্তিগত কর্মচারীসহ নিহত হন। তিনি নিজের জন্মস্থান টুঙ্গিপাড়ায় তার কবরে চিরশয্যায় শায়িত আছেন।
উপসংহার: বঙ্গবন্ধু আজীবন স্বপ্ন দেখেছেন ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক মানবিক বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধুর সে স্বপ্ন এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। তার সুযােগ্য কন্যা জননেন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ দ্রুতগতিতে উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে- এগিয়ে যেতে হবে আরও অনেক দূর।
ধন্যবাদ সবাইকে।সামনে নতুন কোন টপিক নিয়ে হাজির হবো আমাদের সামনে।
মাস্ক পড়ুন
সুস্থ থাকুন