প্রতিটি মানুষের সব চাওয়া পাওয়া কখনো পূরন হয় না। কিছু কিছু চাওয়া থেকে যায়। আর সেই চাওয়া আজীবন তার হৃদয়কে দগ্ধ করতে থাকে। আজকে এমনি একটি গল্প আপনাদের মাঝে শেয়ার করবো। শুরু……
হঠাৎ ঝরের মতো ঘরে প্রবেশ করেই আমার অগোছালো কাপড়গুলো আনলায় গোছাতে গোছাতে বলতে শুরু করলো ঘরটাকে কি করে রেখেছা? কি দুর্গন্ধ বের হচ্ছে তোমার ঘর থেকে। আমি তখন টেবিলে বসে সিগারেট খাচ্ছিলাম। পিছন ফিরেই আমি হতবাক হয়ে গেলাম। আমি যেন বোবা হয়ে গেছি৷ আমি নিষ্পলক চোখে তার দিকে চেয়ে রইলাম। সে যেন তোতাপাখির মতো কথা বলেই চলছে।
“চেহারাটা কি করে রেখছো? মাথাটা পাখির বাসা করে রেখেছো। চুল কাটোনা কতদিন? খাওয়া- দাওয়াও তো মনে হয় ঠিক মতো কর না।” আমি এখনো তার দিকে চেয়েই রয়েছি। সে আবার বলতে শুরু করলো, “আমার কথা কি কারো কানে ঠুকছে নাকি আমি এসেছি বলে বিপদে ফেলেছি।আমি চাই না আমার জন্য কেউ বিপদে পড়ুক। আমি চলে যাচ্ছি।” বলেই সে যেতে উদ্ধত হলো। এবার আমার যেন হুশ ফিরলো। সুমি তুমি কখন এলে? আমি এসেছি কেবল দেখলে নাকি? আমি ভাবলাম এখন প্রসঙ্গটা এড়িয়ে যাওয়া উচিত। তা না হলে স্বভাবমতো সে শাসন শুরু করবে, এমনটি অতিরিক্ত রেগে গেলে মারতেও পারে। আমি বললাম, হঠাৎ করে আমার এখানে এলে যে! সুমি বললো, কেন এখানে আসা নিষেধ আছে নাকি। নাকি আমার বিয়ে হয়েছে বলে মন থেকে আমাকে মুছে ফেলেছো? আমি বললাম, না ঠিক তা নয়!
তাহলে কি?
আমি বলতে চাচ্ছি তুমি যে এখানে এসেছো সৈকত কি জানে?
তোমার কি মনে হয় আমি আমার প্রাক্তন প্রেমিকের কাছে আসবো আর আমার স্বামী আমার হাতে টাকা ধরিয়ে দিয়ে বলবে যাও প্রেম করে আসো।
তবে?
আমি সৈকতের সাথে ঝগড়া করে এসেছি। সব সম্পর্ক চুকে এসেছি। আমি আর ওর কাছে ফিরে যাব না। তুমি যদি আমাকে ফিরিয়ে দাও দিতে পার। আমি অন্য কোথাও যাব তবু ওর কাছে ফিরে যাব না। বলে সে চুপ করে গেল৷ আমিও কিছু বলছি না। মহূর্তেই আমার ঘরটি যেন দ্বিপ্রহের মতো নির্জন হয়ে গেল। একটু পর সুমি সব নিরবতা ভেঙ্গে বললো, খুব ক্ষিদে পেয়েছে ঘরে কি কোন খাবার আছে? আমি বললাম বিস্কুট আছে। মা বাড়িতে নেই বড় আপার বাড়িতে গেছে। তুমি যদি খেতে চাও রান্না করে খেতে হবে। সুমি বললো, রান্নাঘরটা কোনদিকে? আমি রান্নাঘর দেখিয়ে দিলাম। সুমি রান্নাঘরে গেল রান্না করতে।
আমি টেবিলে বসে আর একটি সিগারেট ধরালাম। একটুপর রান্নাঘর থেকে আওয়াজ আসলো তরকারি কি রান্না করবো। আমি চিৎকার করে বললাম ফ্রিজে মাছ আছে বের করে রান্না কর। ৩০ মিনিট পর আবার রান্নাঘর থেকে আওয়াজ আসলো খাবার রেডি কারো যদি খেতে ইচ্ছে হয় আসতে পারে আমার খুব খিদে পেয়েছে আমি খেলাম।
আমি টেবির থেকে উঠে খেতে গেলাম। গিয়ে দেখি আমার খুব শখের খাবার পুঁটি মাছের ঝোল রান্না করেছে সুমি। আমি কিছু না বলে খেতে বসলাম। অনেকদিন পর এভাবে তৃপ্তি করে খাচ্ছি। সুমি বললো তরকারি কেমন হয়েছে? আমি জানি ভালো হয়নি। আমি বললাম খুব ভালো হয়েছে। দেখনা কত তৃপ্তি করে খাচ্ছি। সুমি বললো থাক আর বলতে হবে না৷ মিথ্যে প্রসংশা করার দরকার নেই। আচ্ছা আর রক টুকরো মাছ দেই। আমি বললাম দাও। সুমি এক টুকরা মাছ আমার পাতে তুলে দিতে দিতে বললো আমায় বিয়ে করবে। আমি তোমার সাথে থাকতে চাই। আমাকে ফিরিয়ে দিও না প্লিজ। আমি সুমির মুখের দিকে তাকালাম। দেখলাম সুমি কাঁদছে। আমি খাওয়া শেষ করলাম। ঘরে গিয়ে আবার একটি সিগারেট ধরালাম। সুমি এসে বললো কি হলো আমাকে বিয়ে করবে না? তুমি যদি আমাকে বিয়ে না কর আমি আত্মহত্যা করবো তবু ওই নরপিশাচের কাছে আর ফিরে যাব না। বলে সে আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।
এমন সময় শুনতে পেলাম মা আমাকে ডাকছেন। কিরে সাদিক ঘুম থেকে উঠবি না? বেলা কয়টা বাজে। তোর জন্য কি সকাল আরো দেরিতে হবে। মায়ের চিৎকার চেচামেচিতে আমার ঘুম ভাঙ্গল। আমার টেবিলে থাকা সুমির ছবিটাতে হাত বুলাতে শুরু করলাম। মা ঘরে ঠুকে বললো কিরে আবারো সুমির কথা ভাবছিস? আমি কিছু বলতে পারলাম না আমার চোখ দিয়ে এক ফোটা জল মাটিতে গড়িয়ে পরল।