হাতে কয়েকটা গোলাপ ফুল নিয়ে বাবা দরজা দিয়ে রুম এ ঢুকতে ঢুকতে বলছেন নে মা এবার একটু ভালো করে সেজে নে। পাত্রপক্ষ এই আসলেন বলে। আর মা সেই ফুল গুলা খোঁপায় গুঁজে দিয়ে কপালে একটা লাল টিপ দিয়ে বললেন আর এসব নিয়ে ভাবিস না মা। কি করবো বল ভাগ্যের লিখন তো কেউ খন্ডাতে পারে না। আমরাও পারি নি। আর যে চলে যাওয়ার সে তো গেছেই তার কথা ভেবে আর কি হবে। সে তো আর ফিরে আসবে না। নে এবার একটু ভালো করে সেজে নে। পাত্রপক্ষ একটু আগেই ফোন করেছিলেন ওনারা হয়তো এতক্ষনে বাসার কাছে চলে এসেছে। এই বলে মা রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। আর আমার দুচোখ দিয়ে অঝোরে জল পড়ছে।
আসুন আসুন। কিছুসময় বাদে মা দরজা খুলে দিয়ে বললেন। বসুন আমরা তো আপনাদের জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। তা পথে আসতে আপনাদের কোনো সমস্যা হয় নি তো? না না কি আর সমস্যা হবে এইতো এতটুকু রাস্তার ব্যাবধান। কোনো সমস্যা হয় নি। আপনারা বসুন আমি আপনাদের জন্য চা নাস্তার ব্যবস্থা করি বলে মা রান্না ঘরে চলে গেলেন। কিছু সময় বাদে মা আর আমি পাত্রপক্ষের জন্য নাস্তা নিয়ে গেলাম। সেখানে গিয়ে আকাশ কে দেখে আমি হঠাৎ যেন চমকে গেলাম। ঠিক একই ভাবে আকাশ ও আমাকে দেখে চমকে গেলো।
আজ থেকে প্রায় চার বছর আগের কথা। আকাশ আর আমি একই কলেজ এ পড়তাম। ও আমার থেকে দুই বছরের সিনিয়র ছিল। কলেজে প্রায় ওর সাথে দেখা হতো মাঝে মাঝে দুই একটা কথা ও হতো। এভাবেই আস্তে আস্তে আমাদের মধ্যে একটা ভালোলাগা ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরী হলো। আমরা একসাথে কত জায়গায় ঘুরেছি একসাথে হেটেছি। দুজন দুজনকে অনেক কাছ থেকে জেনেছি। আর আকাশ রোজ গোলাপ ফুল এনে আমার খোঁপায় গুঁজে দিয়ে বলতো তোমাকে সারাজীবন এভাবেই দেখতে চাই।
কিন্তু আমাদের এই ভালোলাগার মুহূর্ত গুলো কেমন যেন ফিকে হয়ে গেল খুব তাড়াতাড়ি। আমার গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট হতে না হতেই বাবা আমার বিয়ে ঠিক করলেন একজন সরকারি চাকরিজীবীর সাথে। আমি মোটেও বিয়ের জন্য রাজি ছিলাম না। এমনকি বাবা কে আকাশ এর কথা বলেছিলাম কিন্তু আকাশ তখন ভালো কোনো চাকরি করতোনা বলে বাবা আমার কথা শুনতে নারাজ। সেদিন অনেক কেঁদেছি অনেক কষ্ট পেয়েছি কিন্তু শেষ পর্যুন্ত কিছুই আটকাতে পারি নি। বাবা মায়ের ইচ্ছায় আমার বিয়ে হয়ে গেল।
সেদিন থেকে আকাশের সাথে আর কোনো যোগাযোগ ছিল না। এভাবেই তিনটি বছর কেটে গেল। হঠাৎ একদিন আমার স্বামী বাস এক্সিডেন্ট এ মারা গেলেন। আমার জীবনের সমস্ত আলো জানো নিভে গেল। আমি যেন অন্ধকার দেখতে লাগলাম। কিন্তু তারপর ও নিজের জীবনের কথা ভেবে নিজের ভবিষ্যত এর কথা ভেবে আমি ঘুরে দাঁড়ালাম।
এরপর এক বছর কেটে গেল আমি একটা বেসরকারি কোম্পানি তে চাকরি করি। বাবা মায়ের সাথেই থাকি। কিন্তু এভাবে আর কতদিন। বাবা মায়ের প্রতিদিনের এক কথা অনেক তো হলো এবার একটা বিয়ে করে নে। সারাজীবন কি আমরা থাকবো। তোরো তো মাথার উপরে একটা ছাতার দরকার।
অবশেষে আমি বিয়ের জন্য রাজি হলাম। বাবা মা পাত্র দেখতে লাগলেন। বিয়ে ঠিক করার আগে মা আমাকে পাত্রের একটা ছবি দিয়েছিলেন কিন্তু আমি আর পাত্রের ছবি টা দেখি নি কারণ মন থেকে আমি একদমই চাইনি বিয়ে করতে।
চার বছর পরে আবারো সেই আকাশের সামনে আমি। আকাশ এখন অনেক বড়ো একটা সরকারি চাকরি করে । সেও সবকিছু ভুলে বিয়ে করে সুখে থাকতে চেয়েছিলো কিন্তু তার কপালেও সুখ সয় নি। হয়তো পারিবারিক কিছু ঝামেলার কারণে তার বিচ্ছেদ হয়ে যায়।
অবশেষে পারিবারিক ভাবেই আমাদের বিয়ে হলো। সবকিছু ভুলে আমরাও আবার নিজেদের মতো করে গুছিয়ে নিলাম আমাদের জীবন।