সত্যিকারের ভালোবাসায় টর্নেডোর অভাব হয় না। আর স্বার্থ ছাড়া ভালোবাসা গুলোর মধ্যে কোন টিপস ও ট্রিক্স থাকেনা বিধায় কেউই বাঁচতে পারেনা সেই টর্নেডোর কবল থেকে। যারা একসাথে থাকার প্রতিজ্ঞায় নামে, তারাই হয় বিজয়ী। তাদের উল্লাসের শেষ নেই। আর যারা ভয় পেয়ে নিজেদের মধ্যে দূরত্ব বাড়িয়ে দেয়, তারা কি? কাপুরুষ? সত্যি বলতে কাপুরুষেরও তো একটা সম্মান আছে।
ভালোবাসা নিয়ে অনেকের অনেক লেখা তো পড়েছেন। আশা করি এমন কোন আর্টিকেল খুঁজে পাননি যেখানে বলা হয়েছে, সত্যিকারের ভালোবাসা কিভাবে তৈরি হয়। এটা যার যার মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপার। আর এই ভালোবাসা এতটাই ব্যাপক হয়ে যে, তা ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব। এইধরণের ভালোবাসাগুলো তৈরি হয় খুব নীরবে..
একদিন আরো একটি ইমু আইডির সাথে আমার যোগাযোগ হয়। নাম- ইশিতা মুফতাদির ঈশানি। পরিচয় দেয়, সে আমাদের বাকলিয়া কলেজের ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের একজন ছাত্রী। আমাদেরই সেকশনের। কোন একটা সমস্যার কারণে দীর্ঘদিন কলেজে যেতে না পারে সে অনেক পিছিয়ে গিয়েছে। এমনকি আইসিটি’র প্র্যাক্টিক্যাল গুলোও সে মিস করেছে। কারো কাছ থেকে আমার ইমো আইডিটা নিয়ে আমার সাথে মূলত যোগাযোগ করতে চাইছিল এবং পড়ালেখায় সাহায্য চাচ্ছিল..
আমি ও আমার সাধ্যমতো তাকে সাহায্য করি। অতঃপর গল্প-গুজব হয় আমাদের মধ্যে কিছুক্ষণ। সে তার পরিচয় দেয়, নাম এনা। আমিও আমার পরিচয় দিতে গেলে সে বলল, আমার পরিচয় নাকি লাগবে না। সে তার বান্ধবীর কাছ থেকে সব জেনে নিয়েছে। আমি একটু আনন্দিত হই। এভাবে অনেক্ষণ কথা চলতে থাকে আমাদের মধ্যে।
ধীরে ধীরে তার সাথে আমার কথা বলার পরিমাণটা বেড়ে যায়। তার প্রতি এক প্রকার আচ্ছন্ন হয়ে যাই আমি। এই মোহের টানে আমি প্রায় ভুলেই যাই, সুমাইয়া নামের মেয়েটার সাথে অনেকদিন কথা বলা হয়না আমার..
[ এই গল্পের ৪র্থ পর্ব পড়ুন 👉 পর্ব ৪ ]
[ এই গল্পের ৩য় পর্ব পড়ুন 👉 পর্ব ৩ ]
[ এই গল্পের ২য় পর্ব পড়ুন 👉 পর্ব ২ ]
[ এই গল্পের ১ম পর্ব পড়ুন 👉 পর্ব ১ ]
দিন যায়, আর যোগাযোগ বাড়তে থাকে ইশিতা’র সাথে। হঠাৎ একদিন সুমাইয়া আমাকে কল দেয়..
– কিরে, কেমন আছিস?
– এইতো আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তোর কি অবস্থা?
– আগে তোর কথা বল.. ঠিক, ভালো আছিস তো?
– এইতো আছি কোনরকম। তুই এতদিন যোগাযোগ করিস নি কেন রে?
– না আসলে বুঝতে পারলাম যে তুই ভালো আছিস; তাই আর যোগাযোগ করিনি..
– এটা কোন কথা হলো! এতদিন পর কথা বলছিস, তাও সুন্দর করে বলছিস না। কিছু হয়েছে তোর?
– হা হা! আরে যা হয়েছে সব তো তোরই হয়েছে।
– বুঝালমনা..
– হৃদয়..
– হাঁ বল.. এতদিন কথা বলিসনি কেন?
– আমার প্রশ্নের উত্তর দিলে তোর প্রশ্নের উত্তর আমি দেব।
– হ্যাঁ বল কি প্রশ্ন..
– আচ্ছা, ইশিতা -টা কে?
– ও, এনার কথা বলছিস এনা হচ্ছে আমার কলেজ ফ্রেন্ড কেন কি হয়েছে?
– আমার তো মনে হয় কলেজ ফ্রেন্ডের থেকেও কিছুটা বেশি..
– আরে নাহ.. কি যে বলছ!
– আচ্ছা?!?
– কেন কি হয়েছে?
– না আসলে তেমন কিছু না.. তোদের রোমান্টিক মেসেজগুলো দেখে আমি আমার আগের হৃদয়টাকে মিস করছিলাম অনেক…
এবার টনক নড়লো আমার! আসলে “ইশিতা” নামে আদতেও কি কেউ ছিল? নাকি এটা সম্পূর্ণ একটা পরীক্ষা ছিল, যা সুমাইয়া আমার কাছ থেকে নিয়েছে..
– হৃদয়.. আসলে আমি দুঃখিত! ওটা আমারই আইডি ছিল..
– . . . . সুমাইয়াআআ . . . .
– ইশিতাকে নিয়ে ভালো থাকিস কেমন? আল্লাহ হাফেজ।
(টুঁট..টুঁট..টুঁট…)
আমি আকাশ থেকে পড়লাম! মাথার ভেতর কেমন যেন শব্দ তৈরি হচ্ছে.. কলিজাটা জেনারেটর মেশিনের মত কাঁপছে আমার.. চারপাশটা হঠাৎ করে যেন অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে..
অতঃপর নিজের শরীরের উপর ভারসাম্য হারিয়ে ফেলি আমি.. এরপর কি হয়েছে আর কিছুই জানা নেই আমার
চোখ দুটো মেলে প্রথমে আমার মা’কে দেখতে পাই আমি। মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন…
– বাবা কি হয়েছে তোর?
– আরে না মা কিছু হয়নি।
– এই কিছুক্ষণ আগে তোকে রান্নাঘর থেকে তুলে আনলাম অজ্ঞান অবস্থায়; আর তুই বলছিস কিছু হয়নি।
– এমনি খারাপ লাগছিলো মা..
– তুই কি আমাকে বলবি না তোর কি হয়েছে?
অতঃপর মায়ের কথার চাপে আমি বানিয়ে বানিয়ে কিছু একটা বলে দেই। সত্যিটা বলার সাহস পাইনি। সত্যি কথাটা বললে মা হয়তো আর সহ্য করতে পারতেন না..
সে ইমোতে আমাকে ব্লক দিয়েছে কবেই..
কিছুদিন আমি অনেক চেষ্টা করেছি তার সাথে যোগাযোগ করার। কোন লাভ হয়নি। তার মায়ের কন্টাক্ট নাম্বারে এ যোগাযোগ করেছি। তাতেও কোনো লাভ হয়নি। নাম্বারগুলো থেকে আমাকে ব্লক করে দেওয়া হয়েছে। অবশেষে বাধ্য হলাম তার বাবার নম্বরে ফোন দিতে। তাও দেখি মোবাইল বন্ধ।
প্রতিটা দিন, প্রতিটা রাত, প্রতিটা ঘণ্টা আমি তার সাথে একটিবার কথা বলার জন্য আকুল হয়ে থাকি। শেষমেষ আমি আমার এক বন্ধুর নাম্বার থেকে তাকে কল দিই। তার মাকে কল দিই। তারা একবার ধরে; আর আমার কন্ঠ শোনা মাত্রই কল কেটে দেয়।
আজ ২টা বছর হতে চলেছে, আমার আহাজারি কেউ শুনতে পায়না। একটুখানি কথা বলার অবকাশ আমি পাইনি, না পেয়েছি ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ। সত্যিই কি ভালোবাসায় ভুল করা অমার্জনীয়?
বিশ্বাস করুন, কসম খেয়েছি আর কোনদিন কোনরকম ভুল করবোনা। একটিবার আমাকে ক্ষমা করা হোক। আমাকে আমার হারানো ভালোবাসাটা ফিরিয়ে দেওয়া হোক। এটা আমার আত্মার কামনা..
তার অভাবে মধ্যরাতে শ্বাস নিতে কষ্ট হয় আমার…