সম্মানিত পাঠক ভাই ও বোনেরা,
আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন আপনারা? নিশ্চয়ই ভালো আছেন? আর ভালো থাকুন এটাই আমাদের কাম্য। বন্ধুরা আপনাদের জন্য নতুন একটি বিষয়ের উপস্থাপন করা হয়েছে যার শিরোনাম দেখেই হয়তোবা এতক্ষনে বুঝতে পারছেন বিষয়টি কি।
আজ এখন এই মুহূর্তে যে বা যারাই আমার এই প্রবন্ধটি পড়ছেন তদের মানষিক অবস্থা যদি হতাশা ও বিষাদগ্রস্হ থেকে থাকে প্রবন্ধটি পড়ার ইতি টানলেই মন অবশ্যই প্রশান্ত হয়ে যাবে। সম্মানিত ভাই ও বোনেরা সামনে আসছে গ্রাম বাংলা তথা সমগ্র দেশ বা জাতির জাতীয় ঐতিহ্য পহেলা বৈশাখ। আমারি খুশি লাগছে এখনি।
আমার এখনি রবি ঠাকুরের ছন্দে সুর মিলাতে ইচ্ছে করছে ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো,,,,,,,,,,,’ হা বন্ধুরা পহেলা বৈশাখ শুধু রবি ঠাকুরেরই নয় শত লেখকের শত সাহিত্যিকের কলমের কালিতে রঞ্জিত হয়েছে বিভিন্ন ভাবগতি ও স্বতন্ত্র ধারায়। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামও স্বতন্ত্র ধারায় পহেলা বৈশাখকে নিয়ে লেপন করেছেনঃ-
ঐ নূতনের কেতন ওড়ে কাল বোশেখির ঝড়। তোরা সব জয়ধ্বনি কর
তোরা সব জয়ধ্বনি কর।
কবি মুকুন্দরামের কলমেও খচিত হয়েছে এমন কিছু
বৈশাখে অনলসম বসন্তের খরা
তরুতল নাহি মোর করিকে পসরা।
শশ্বত জগৎবিখ্যাত সনেট কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের সনেটেও স্থান পেয়েছে আমাদের এই চৈত্র সংক্রান্তী সমাপ্তির পরের দিন পহেলা বৈশাখঃ-
ভূতরুপে সিন্ধুজনে গড়ায়ে পড়িল
বৎসর কালের ঢেউ, ঢেউর গমনে
নিত্যগামী রথচক্র নিরবে ঘুরিল।
,,,,,,,,,,,,, শব্দ চয়নে আরো চরন রয়েছে এই কবির। সেগুলো এখানে আর চয়ন করবো না। এবার (আমি)সাহিত্যেকের কলমে পহেলা বৈশাখ কিভাবে ফুটে উঠেছে সেটাই পড়ুন।
ওরে মোর কৃষ্ণচূড়া
এসে যা এসে যা
এসেছে মোর নব বৃক্ষে
নব পল্লবী সূচনা।।
ঘরে ঘরে খোকন সাজে
সাজে বৃক্ষ রাজি।
বাংলা বধূর লাল শাড়িতে মুই
বোশেখি সাজ দেখি।।
পান্তা ইলিশের গন্ধ ছুটছে
আয়রে আয় দেখে যা।
ওরে মোর কৃষ্ণ চুড়া
এসে যা এসে যা।।।
তো বন্ধুরা শুধু ছড়া দিয়েই নয় বাস্তবে পহেলা বৈশাখকে আমরা কতখানি মুল্যায়ন করছি সেটাও কিন্তু দেখার বিষয়। এবার আসি পহেলা বৈশাখ কি এ ব্যপারে একটু জানা দরকার। বন্ধুরা ১৫৫৬ সালে মোঘল সম্রাট আকবর সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হওয়ার আগেই খাজনা সম্পর্কিত জটিলতা দুর করার জন্যই এই বাংলা সালের প্রবর্তন করা হয়।
আর ১৫৫৬ সালের ৫ নভেম্বর থেকেই বাংলা সনের আবির্ভাব ঘটে। দিনপঞ্জিকার ঘুর্ননের ফলে আজ তা ১৪ ই এপ্রিল। তখন থেকে ওই দিনই কৃষকরা তাদের পাওনা খাজনা মিটাতো, বাড়ি বাড়ি গিয়ে মিস্টি বিলাতো। এরপর থেকেই ব্যবসায়ীরা তাদের পাওনা টাকা আদায় করার জন্য চৈত্র মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতো। আর চৈত্র মাস থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত একটি বিষেশ আয়োজন ও অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়েই পুরাতন বছরের সকল দেনা পাওনা পরিষদ করতো।
এমনিভাবে সামনে আসা নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর জন্য আয়োজন করা হতো বর্নাঢ্য অনুষ্ঠানের। আর এটা শুধু একা সম্রাট আকবরের প্রাসাদেই হতো না, এটা সমগ্র রাজ্যের সকল প্রজারাই নিজে থেকেই মহা আয়োজনে নিজেদের সাজাতো, আনন্দ করতো ও নিজেদের পরিপাটি করে রাখতো। সর্বপরি সবাই ওই দিনটাকে একটা পবিত্র দিন মনে করে শুদ্ধ বস্ত্র পরিধান করে ইশ্বরকে ডাকতো আর ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়েই দিনের সমাপ্তি টানতো। এর একটাই লক্ষ্য ছিল পুর বছরটা যেন তাদের খুব ভালোভাবেই কাটে।
কালের পরিক্রমায় ধীরে ধীরে ওইসব আয়োজন ও অনুষ্ঠান এখন এই প্রজন্মেও এসে পড়েছে। আর তাইতো আমরাও এই বৈশাখী দিনে সাজিয়ে ও মাতিয়ে উঠি বর্নাঢ্য অনুষ্ঠান ও সাজে। এবার আসি আমি কিভাবে দিনটিকে উপভোগ করি? খুব ভোরে উঠি। সবাই স্নান করি,বাড়ি ঘরের আশ পাশ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে পরিপাটি করে রাখি। মা-বাবাকে এক স্থানে বসিয়ে দেবতা জ্ঞানে পূজা করি। ভাই বোনরা মিলে রাখি বাঁধী। এসব ঘরের পর্ব। এগুলো শেষ করে নগর কির্তনে বের হই।
দিনের পুরো সময়টাই ইশ্বরের প্রতি মগ্ন থেকেই কাটাই। বন্ধুরা এগুলো শুধুই আমারই বৈশাখী আয়োজন, কিন্তু গ্রামের অন্যদের আয়োজনটা একটু ভিন্ন ধরনেরই হয়ে থাকে। সকাল হতেই দেখা যায় রং বেরং কাপড় পড়া লোকজনের সমাগম। সবার মধ্যেই একটা নতুন নতুন ভাবধারা সংকেত দেখা যায়।বিকালে মাঠের কিনারা ঘেসে আয়োজন করা হয় বর্নাঢ্য অনুষ্ঠানের। এ অনুষ্ঠান হয়তো সপ্তাহ জুড়েই চলতে থাকে। রাস্তায় রাস্তায় মানুষের মেলায় যাওয়ার একটা লাইন দেখতে পাওয়া যায়। কারো হাতে মেলা থেকে নিয়ে আসা বাঁশি ও ফুলানো বেলুন দেখতে পাওয়া যায়। দূর থেকেই শুনতে পাওয়া যায় হাজারো সাউন্ড বক্সের শব্দ। বানরের খেলা,
সাপ ও বেজির সামরিক যুদ্ধের খেলাও মজে বেশ। নাগরদোলার কথা তো আর বল্লামই না, এটাতো চিরাচরিত নিয়ম যে নাগরদোলা না থাকলে বৈশাখের মেলার কোন ইমেইজই থাকে না। ঘোড়া দৌড়, সাইকেল খেলা, বায়স্কোপ এমনকি যাত্রারও আয়োজন করা হয় আমাদের এই বৈশাখী মেলায়।
কিন্তু দুখের বিষয় হলো পহেলা বৈশাখ ১৪২৮ আর হয়ে উঠছে না তেমন কোন আনন্দের, আনন্দটা শুধু হৃদান্তরেই থেকে যাবে বহিঃপ্রকাশ আর হচ্ছে না। এটাই সবচেয়ে দুখ ও ব্যাথাজনক।
মহামারী করোনা কেড়ে নিলো সারা বাংলার ঐতিহ্যবাহী উন্মুক্ত বৈশাখী আনন্দ। তবুও হাল ছাড়বে না বাংলার নগর কৃষক। করোনা প্রটোকল মেনেই ঘরোয়া বোশেখী আয়োজন করতেও দ্বিধা বোধ করবে না তারা। যার যার অবস্থানে থেকেই ঘরোয়া পরিবেশে আয়োজিত হোক আমাদের হৃদয়ের পহেলা বৈশাখ।
সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।
মাস্ক পরুন ঘরে থাকুন।
করোনা প্রটোকল মেনে চলুন।
সরকারি নির্দেশনা মেনে চলুন।।