আমার আজকের পোস্ট পারফিউম অয়েল বা আতর নিয়ে। সুন্দর গন্ধ আমরা কেই বা অপছন্দ করি! আমাদের আশেপাশে কোনো জায়গা থেকে নাকে নাকে একটু সুন্দর সুবাস আসে, এমন মানুষ খুজে পাওয়া বিরল যে সেই সুবাসের খোজ করবে না।
সুগন্ধি এমনই এক প্রয়োজনীয় সৌখিন উপাদান যে যুগ যুগ ধরে এটা ব্যবহার করা হয়ে আছে। ইসলাম ধর্মের সর্বশেষ, সর্বশ্রেষ্ঠ নবী, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং নিজে সুগন্ধি পছন্দ করতেন, এবং তিনি তার এই পছন্দের ব্যাপারে আমাদেরকে জানিয়ে গিয়েছেন।
যুগের পর যুগ বদলেছে! সব নিত্য নতুন জিনিসে এসেছে পরিবর্তন! তেমনভাবে এই সুগন্ধি তেলেও এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। এখন তো বাজারে রং বে রঙের আর উপাদানের সুগন্ধি প্রচুর পাওয়া যায়। আর এর জন্য আপনাকে বড় কোথাও নয়, আশেপাশের কসমেটিকস এর দোকানে খোজ করাই যথেষ্ট।
তো যাই হোক। এই সুগন্ধি আবার নানান নামে, নানান ক্ষেত্রে বিভক্ত। যেমন- আতর, পারফিউম, বডি স্প্রে ইত্যাদি। এছাড়াও ওয়াশরুমে লাগিয়ে রাখা ওডোনিল আর ঘরের এয়ারফ্রেশনারও সুগন্ধি। একটা মজার কথা হলো আমরা যে বডি স্প্রে বা পারফিউম গায়ে মাখি, তার অন্যতম একটা মূল উপাদান হচ্ছে এই আতর! তো আজকের পোস্ট এই আতর নিয়েই।
বাংলাদেশের মত একটা প্রতিভাবান জায়গায় যেকোনো জিনিসেরই নকট বা ডুপ্লিকেট বাজারে বিক্রি হওয়া অস্বাভাবিক কিছু না। আতরের বেলায়ও ভিন্ন কিছু না।
যখন ছোটো ছিলাম, বা ধরুন যতদিন ঠিক আমি আতর নিয়ে জানাশোনার বাইরে ছিলাম, ততদিন আতরের প্রতি আমার একটা নেতিবাচক মনোভাব কাজ করতো।
এর কারণ আশেপাশের মুরুব্বি বা বাবা চাচাদের যে আতর গুলো মাখতে দেখতাম, তার অনেক গুলা থেকেই উৎকট, কড়া, আর মাথা ঘুরিয়ে বিছানায় চিত করে ফেলার মত স্মেল আসতো। ফলে আতরের ব্যাপারে একটা খারাপ ধারণা সেই ছোটোকাল থেকেই চলে আসতো।
নিজের জন্য বডি স্প্রে বা পারফিউম অয়েলকেই মনোনীত করতাম সব সময়।
এরপরে কি যেন হলো! আতরের বিষয়ে প্রতি আমার একটু আগ্রহ জন্ম নিলো। আমি আতরের দোকান গুলো ঘন ঘন ঘোরা শুরু করলাম! ইন্টারনেটে আতরের ব্যাপারে সার্চ দিতে লাগলাম। ফলাফল স্বরূপ এমন কিছু আবিষ্কার করলাম, যা আমাকে আতরের প্রেমে পড়তে বাধ্য করেছে। আর এখন তো আতরের পক্ষে লিখতেও বাধ্য করছে!
আচ্ছা আতরের ব্যাপারে মূলত দুইটা কনসেপ্ট মাথায় রাখা জরুরী আমাদের সবার। সেটা হচ্ছে আতর দুই প্রকার! একটা হচ্ছে অরগ্যানিক বা সরাসরি প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে বানানো আতর। যা তুলনামূলক অত্যন্ত দাম দিয়ে কিনতে হয়। আরেকটা হচ্ছে সিনথেটিক, অর্থাৎ অরগ্যানিক আতরকে কপি করে কেমিকেল মিশিয়ে একইরকম স্মেইল তৈরি করা যার দাম হাতের নাগালের মধ্যেই।
এই সিনথেটিকের মধ্যেই ভাল খারাপ দুই কুয়ালিটি আছে। যা কেনার সময় অবশ্যই দেখে নিতে হবে।
এখন কিছু আতরের সাথে পরিচয় হওয়া যাক।
শুরু করি আমার প্রিয় আতরের নাম ‘উদ’ দিয়ে।
এরপরে বলল মেশক আম্বর, রুহে কস্তুরি, মুখাল্লাত, রুহ খস, বাখুর, জান্নাতুল ফেরদৌস ইত্যাদি।
উদ হচ্ছে মূলত প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি করা আতরের নাম। যার সিনথেটিকটাও বাজারে পাওয়া যায়। এই উদের মূল উপাদান আগর কাঠ মূলত এক ধরনের অতি বয়স্ক গাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়। বাংলাদেশে সিলেটের মৌলভীবাজারের সুজানগরে এই আগরের গাছ দেখতে পাওয়া যায়। এই উপায়ে আতর সংগ্রহ করার জন্য এসব গাছ থেকে নির্দিষ্ট কাঠ কেটে নিয়ে তা আগুনে জাল দেয়া হয়, এরপর সেখান থেকে যেই তেল টা বেত হয়ে আসে, সেটাই উদ বা আগর আতর।
বাংলাদেশ বিশ্বের আতরের বাজারের প্রথম সারিতে আছে। বাংলাদেশে যতটুকু অরগ্যনিক আতর তৈরি হয় এই উদ দিয়ে, তার সবটাই মধ্যপ্রাচ্যেত দেশে রপ্তানি করা হয়।
আর সেগুলোর এক ফোটার দামও আকাশচুম্বি।
এই উদের ভেতরে আবার আছে নানা রকম শ্রেণীবিভাগ।
যেমন- ব্লাক উদ, হোয়াইট উদ, গোল্ডেন উদ, আগর উদ ইত্যাদি। এসবগুলোরই অরগ্যানিক এর পাশাপাশি হাই গ্রেড সিনথেটিক টাও বাজারে পাওয়া যায়।
দামের ব্যাপারে বললে এগুলোর অরগ্যানিকটার দাম হবে অত্যন্ত বেশী। সামান্য এক মিলির দাম কয়েক হাজার ছাড়িয়ে যাবে। এবং মিনিমাম তিন মিলি না কিনলে আপনি মেখে শান্তি পাবেন না। তাই আমার পরামর্শ আপনি যদি টাকার বালিশে না ঘুমিয়ে থাকেন, তাহলে এদিকটায় যাওয়ার দরকার নেই। আপনার জন্য আছে সিনথেটিক উদ! এগুলোর দাম অরগ্যানিকের চেয়ে তুলনামূলক অনেক কম।
যেখানে অরগ্যানিক এক মিলি ১০ হাজার, সেখানে এই সিনথেটিক এক মিলি হবে ১ হাজার দামের। বা আরও কমেও পাওয়া যায়। তো এইভাবে ভালো মার্কেটে একটু খোজাখুজি করলেই সাধ্যের মধ্যে উদের সুবাস পাওয়া সম্ভব।
এবার আসি কস্তুরি নিয়ে। কস্তুরি আতরটিও প্রকৃতিক আতর। এটি বানানো হয় মূলত বিশেষ ধরনের হরিনের নাভি থেকে। এই হরিনগুলোকে বলা হয় মাস্ক ডিয়ার। সব জায়গাতে পাওয়া যায় না।
যখন এই হরিণ প্রাপ্তবয়স্ক হয়, সঙ্গীনির জন্য ছোটাছুটি করে ঠিক তখন এই সুগন্ধটা তার নাভি থেকে বের হয়। আর শিকারিরা তখন হরিন শিকার করে এটি সংগ্রহ করেন।
আসল এই কস্তুরি সামান্য পরিমাণের দাম লক্ষ লক্ষ টাকা। এবং এর ঘ্রাণও এত অসাধারণ মাতাল করা যে আপনি একবার এর ঘ্রাণ নিলে আর কখনোই তা ভুলতে পারবেন না। আমাদের প্রাচীন সেই সম্রাটেরা তাদের রাজ দরবারে এই কস্তুরি ব্যবহার করতেন যার সুগন্ধ শতশত বছর পরও রয়ে গেছে।
এমন রেকর্ডও আছে, এই হরিণের কস্তুরি সংগ্রহ করতে যেয়ে এর ঘ্রাণে মাতাল হয়ে অনেকে মৃত্যুবরণ করেছে।
যাইহোক সরাসরি এই কস্তুরির দামও যেহেতু অনেক, তাই সাধারণ পাঠক হয়ত সেসব মন চাইলেও কিনতে পারবে না।
তবে বাজারে বেশ কিছু হাই গ্রেড সিনথেটিক কস্তুরি আছে, যেগুলো ব্যবহার করলে অনেকটাই আসল কস্তুরির মত অনুভূতি দেবে। এক্ষেত্রে একটু ভালো মানেরটা কিনলে গায়ে তিন দিন পর্যন্তও এর এর ঘ্রাণ থেকে যেতে পারে।
মেশক আম্বরের ব্যাপারে বলতে গেলে মূলত সি মেশকই হচ্ছে কস্তুরি। আর আম্বর হচ্ছে এক ধরনের উদ্ভিদ। দুটোর মিশ্রন ঘটিয়েই মেশক আম্বর তৈরী করা হয়। একটু কড়া ধাঁচের আতর। এছাড়াও আরও অনেক রকমের আতর বাজারে পাওয়া যাবে।
বাংলাদেশে বেশ প্রসিদ্ধ আতরের ব্র্যান্ড হলো আল হারামাইন আতর। আপনি চাইলে নেট ঘেটে তাদের আতর গুলো দেখতে পারেন। তাদের দৃষ্টিনন্দন শিশি আর প্যাকেটও মুগ্ধ হওয়ার মত। এছাড়াও আছে বিদেশী ব্র্যান্ড আব্দুস সামাদ আর কোরাইশি, আজমল ইত্যাদি। সব গুলোই খুব ভালো। তবে আপনি যদি একটু কম দামের মধ্যে ভালো কিছু চান, তাহলে আপনার জন্য বেস্ট হবে দুবাইএর আর রিহাব ব্র্যান্ডের আতর। রাশা, সাবায়া, জান্নাতুল ফেরদৌস, উদ সবই পাবেন এখানে। আর রিহাব ছাড়া আর সব ব্র্যান্ড যস খারাপ তা না। বরং
এটা আমার একান্তই ব্যক্তিগত মতামত। নিজের চার পাচ বছরের আতরময় জীবন অনুধাবন করেই এই কথা বললাম আমি।
যাইহোক আজ এপর্যন্তই। আবার আতর সম্পর্কে নতুন কিছু জানলে লিখব ইনশাআল্লাহ।