আজকে যে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে যাচ্ছি, সেটি হচ্ছে, আপনাদের খুবই পরিচিত একটি বিষয়, যেটা বাংলাদেশ থেকে শুরু করে পুরো পৃথিবীর মানুষই কম বেশি জানেন। আর সে বিষয়টি হল, আনারস এবং দুধ একসাথে খেলে কি কি সমস্যা হতে পারে? কিংবা একটু আগে পরে খেলে কি কি সমস্যা হয়?
আমাদের নানী-দাদীরা তো বলে থাকে, যে আনারস এবং দুধ একসাথে খেলে নিষ্ক্রিয়ার ফলে মানুষ একেবারে মারাই যায়।
এটা একটা গুজব। কেন?
যখন এই বিষয়টা পুরো পৃথিবীতে মানুষের মধ্যে একটি আলোড়ন সৃষ্টি করলো, তখন বিজ্ঞানীরা এ বিষয়টির উপর রিসার্চ করলেন। তারা একটি ইঁদুরকে আনারস এবং দুধ একসাথে মিশিয়ে খাওয়ালেন এবং পরবর্তীতে দেখতে পেলেন, ইঁদুরটার কিছুই হলো না। অর্থাৎ ইঁদুরটি একদম সুস্থ। তো বুঝা গেল, এটা একটা গুজব।
আনারস এবং দুধ একসাথে খেলে আসলে কি হয়?
বেসিক্যালি, আপনাদের এমন একটা প্রশ্ন অবশ্যই আছে, যে এত কথা শুনি এটা সম্পর্কে এমনি এমনি গুজব বললেই হল। কিছু না কিছু তো হয়। বেসিক্যালি আনারস হচ্ছে একটি টক জাতীয় খাবার। এর মধ্যে একটা এনজাইম থাকে যেটা অন্য কোন খাবারে থাকে না। সে এনজাইমের নাম ব্রুমেলাইন (BROMELAIN)। এই এনজাইমটা হচ্ছে মূল কালপিট।
এটি কি করে? এটি প্রোটিনকে হজম করে। তো যখন আপনি প্রচুর পরিমাণে আনারস খাচ্ছেন এবং সাথে দুধ খাচ্ছেন, ওইযে আনারসের মধ্যে যে ব্রুমেলাইন (BROMELAIN) এনজাইমটা আছে, সেটি প্রচুর পরিমাণে প্রোটিনকে ব্রেক ডাউন করা শুরু করে। এর ফলে, আপনি আপনার পেটে ব্যথা অনুভব করেন। কিন্তু আপনি যদি আনারস এবং দুধ একসাথে মিশিয়ে খান, তাহলে আপনার কোন সমস্যা হবে না। কিন্তু কারোর কারোর ক্ষেত্রে অতিরিক্ত দুধ এবং আনারস খেলে ওই এনজাইমটার কারণে পেটে ব্যাথা হতে পারে, বমি বমি লাগতে পারে, একটি খারাপ অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে।
যে কারণে আপনি ভয় পেতে পারেন
আনারস এবং দুধ একসাথে খাওয়ার কারণে, আপনার খুবই কষ্ট হচ্ছে এবং এই ব্যাপারটা আপনার ফ্যামিলি মেম্বারদের বললেন, যে আমার তো খুব কষ্ট হচ্ছে এবং খুবই খারাপ লাগতেছে। তখন আপনার ফ্যামিলি মেম্বার আপনাকে জিজ্ঞাসা করবে, যে কি হয়েছে? তুমি কি খেয়ে ছিলা? উল্টাপাল্টা কিছু খাইছ কিনা? আপনি বললেন, না আমি তো তেমন কিছু খাইনি, তবে আনারস এবং দুধ খেয়েছি। আর সাথে সাথে আপনার নানী, দাদী, চাচী এরা যদি থাকেন, তখন বলবেন,
‘হায় হায়! তুমি কি করছো, আমরা তো শুনেছিলাম যে, এলাকার অমুকের পুত্র এগুলো খেয়ে তারপর মারা গেছে।’
তাদের এই অবস্থা দেখে আপনি নিজেই হাপিয়ে যাবেন। তখন হয়তো আপনি মনে মনে বলবেন, হায় হায়! আমি কত বড় ভুল করে ফেলেছি।
বাস্তবে, তেমন কিছু হওয়ার সম্ভাবনা নাই। কিন্তু তখন আপনি ভয়ঙ্কর একটা ভয় পেয়ে যাবেন। আর এই ভয়টাই সবচেয়ে বেশি খারাপ।
কেন খারাপ?
সেটা একটা উদাহরণের মাধ্যমে বোঝা যাক,
ধরুন, একজন আসামি, তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হবে সাপের কামড় দিয়ে। তো তার চোখ বাঁধা হয়েছে কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, সেখানে সাপ না এনে দুটি পিন দিয়ে তাকে আঘাত করা হয়েছে। কিন্তু তার তো চোখ বন্ধ। সে ভাবছে সাপে কামড় দিয়েছে, আর এই ভাবনা থেকে শক খেয়ে মারাই গেল। একই বিষয়, সেই আসামীর মতো, আপনার ফ্যামিলিও হয়তো আপনাকে সেই ভয় দেখিয়ে যাবে, যে এগুলো খেয়েছো, ওখানে যেতে হবে, সেখানে যেতে হবে, ইত্যাদি বলে আপনার ভয়ের মাত্রা এতোটুকু বাড়িয়ে দিবে, যে আসলেই আপনার সেই সাপে কামড় দেওয়া ব্যক্তিটির মতো অবস্থা হয়ে যাবে।
তখন করণীয় কি?
বেসিক্যালি এটাতে ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই। এটি এমনি এমনিই ঠিক হয়ে যাবে। যদি সেই ব্যাথাটা আপনি সহ্য করতে না পারেন, তাহলে অবশ্যই আপনাকে একজন নিকটস্থ ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
আর যারা গ্যাস্ট্রিক আলসারে ভুগছেন, তারা অবশ্যই খালি পেটে আনারস খাবেন না। কারণ আনারস একটি অ্যাসিটিক ফুড আর এটিতে সাইট্রিক এসিড থাকে। আপনি যখন অ্যাসিটিক ফুড খালি পেটে খাবেন, তখন আপনার বুক জ্বালাপোড়া করবে। তাই ভাত বা অন্য জাতীয় খাবার খেয়ে তারপর আনারস খাবেন।