আসসালামু আলাইকুম প্রিয় ভাই ও বোনেরা, আমাদের দেশে প্রায় সবাই জীবনের কোনো না কোনো সময়ে পড়াশোনা কিংবা কর্ম সূত্রে পরিবার থেকে একা হয়ে মেসে জীবন যাপন করে।সেখানে অনেকেই থাকে তবুও সে একা।কারণ, বাবা-মা ছাড়া পরিবার ছাড়া সে নিজনবাড়ি থেকে অন্য এক শহরে থাকে।আর পরিবার ছাড়া থাকা মানেই একা থাকা।সেখানে তার সমবয়সী বা বড়ভাই ছোট ভাই থাকলেও সে একা।
সারাদিন অফিসের কাজে ব্যস্ত বা ছাত্র হলে কলেজ-প্রাইভেটে সারাদিন ব্যস্ত সময় পার করলেও এই হাজার ব্যস্ততার মাঝে মনে পড়ে তার প্রিয় সেই বাড়ির কথা,বাবা-মা ভাইবোনে কথা,কিন্তু কিছু করার নেই সে বাস্তবতা মানতে বাধ্য।তবুও সারাদিন কেটে যায় নানা ব্যস্ততায়।কিন্তু যখনই সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত নামে আর যত রাত যায় তার মনের ভিতর একাকীত্বের পাহাড়টা যেনো বড় হতে থাকে।মনে হতে থাকে আব্বু কি করছে?আম্মু কি করছে?হয়তো টিভি দেখছে,হয়তো বা ঘুমিয়ে গিয়েছে।ছোট্ট ভাইটা হয়তো পড়া শেষে বিছানা প্রস্তুত করে ঘুমানোর আয়োজন করছে।তখন মনে হতে থাকে আমিও তো একসময় এমন সময়ে পড়াশেষে ভাইটার সাথে একসাথে ঘুমোতে যেতাম,আমিও তো একসাথে সবার সাথে বসে টিভি দেখতাম।মাঝে মাঝে মা এসে দেখতো পড়তেসি কিনা।কখনো পড়া বাদে মোবাইল হাতে দেখলে বকা দিতো।
এখন কই সেই বকা,সারাক্ষণ পড়া বাদে মোবাইল নিয়ে থাকলেও কেউ আর বলে না কীরে পড়া রেখে মোবাইল দেখছিস কেনো,কেউ বলে না পড়াবাদে দুজন গল্প করছিস কেনো।কেউ বলেনা। তবুও কেনো জানি মাঝরাতে হঠাৎ করেই শুনতে পাই আম্মুর সেই বকা, শুনতে পাই কীরে পড়া রেখে মোবাইল টিপিস কেন।
আধরাতে যখন ঘুম ভেঙে যায় তখন ঘুমের ঘোরে মাঝে মাঝে মনে হয় আমার নিজ বাড়িতেই আছি আবার মাঝে মাঝে তো আম্মু বলে ডেকেই উঠি কিন্তু পরক্ষণেই মনে পড়ে যে আম্মু আমার থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে!
আবার হয়তো ঘুমিয়ে যাই অথবা ভাবতে থাকি আম্মু কি ভালো আছে?আম্মু কি ঘুমিয়েছে?
এসব ভাবতে ভাবতে আবার ঘুমিয়ে যাই।ঘুম ভেঙে যখন সকালে উঠি তখন আম্মু নাস্তা হয়সে? বলতে গিয়েও থমকে যাই!
এটাই মেসের জীবন,এটাই পরিবার ছেড়ে একা থাকা।
আমিও গত ১বছর আগে ছোট থেকে যে ঘরে বড় হয়েছি ছোট থেকেই যে এলাকায় বড় হয়েছি সেই চেনা মুখগুলো ছেড়ে, পরিবার ছেড়ে পড়াশোনার সূত্র ধরে বাড়ি থেকে ৪০কিলো দূরে এসে বসবাস করছি।৪০ কিলো দূরত্ব টা একেবারে খুব বেশি না হলেও এই অচেনা শহরে থেকে মনে হয় যেনো শত শত মাইল দূরে চলে এসেছি সবাইকে ছেড়ে।
মেস লাইফে অনেক সমসয়ার সম্মুখীন হতে হয় অনেক সমস্যার মোকাবেলা করতে হয় যার সাথে আগে পরিচয় ছিলোনা।
আর বোয়া খালার কথা কি বলবো,
এই ব্যাপারে শুধু একটা বাক্য বললেই সবাই বুঝতে পারবেন,
” এই শহরে প্রেমিকার থেকেও বোয়ার রাগ-অভিমান-ডিমান্ড বেশি”
রান্না খারাপ হলেও কিছু বলা যাবেনা বললে হয়তো খালা রাগ করে আর আসবেনা।
বোয়া একদিন আসলে দুইদিন আসেনা।কাল দুপুরে আসবো মামা, এটা বলে এর পরের দিন সকালে এসে নানা অযুহাত দিতে শুরু করে।যার সবকটায় শুধু শুধু যা সেও বুঝে আমিও বুঝি কিন্তু কিছুই বলা যাবেনা।
সব চাকরিতেই সবাই বস কে বা মালিক কে ভয় পায় কিন্তু এইদিকে আমাদের ভয় পেতে হয় বোয়াকেই।
বোয়া যখন আসেনা তখন একবেলা না খেয়েই কাটিয়ে দেই অনেকসময় আবার যখন দেখি পরের বেলায়ও আসছে না তখন জীবন বাচাতে হলেও রান্না করতে হয় , যে আমি বা আমরা কখনো রান্নাঘরেই যাইনাই এর আগে। পরিস্থির টেলায় মানুষ সব শিখে যায়।
এটাই মেসের জীবন।কিছু করার নেই।মধ্যবিত্ত পরিবারে যখন জন্ম নিয়েছি তখন সপ্ন পূরণ করতে এমন যুদ্ধ বাধ্যতামূলক। মেসের জীবনে নিজ দায়িত্বেই সব কাজ করতে হবে,পড়াশোনা খাওয়া দাওয়া টিকমতো ঘুম। কেউ এসে মার মতো বলবে না পড়ছিস না কেনো?কেউ না খাবনা বলার পরও বার বার এসে বলবে না খেয়ে নে! কেউ বলবেনা ঘুমিয়ে পড় নাহয় শরীর খারাপ করবে এমনকি এই শীতের দিনে গোডল না করলেও মার মতো কেউ বকবে না।এখানে তুমি স্বাধীন, কিন্তু তুমি যদি এর ভুল সুযোগ নেও তাহলে তুমি শেষ।তোমাকে এই স্বাধীনতাকে কাজে লাগাতে হবে সঠিকভাবে যার জন্যে তুমি এখন এখানে আছ।
এই হলো আমার মেসের জীবন,আর এটাই কমন মেসের জীবন।মেস জীবনের যারা ভূক্তভোগী তারা অনেকটা বা সবটাই মিল পাবে।এমন কেউ থাকলে কমেন্ট করে শেয়ার করবেন আমার সাথে।
সবটা পড়ার জন্যে ধন্যবাদ।আসসালামু আলাইকুম।