Cheap price backlink from grathor: info@grathor.com

আমি ফুটবল বলছি—-

শুনেছি আমার জন্ম হয়েছে ইংল্যান্ডে। তবে আমার জন্মদাতা কে তা আমার জানা নেই। জন্মের পর তোমাদের কাছে আমি যেদিন জেনেছি আমার নাম ফুটবল সেদিন আমি খুব কষ্ট পেয়েছি। এটা ভেবে, যে আমার জন্ম হয়েছে তোমাদের পায়ে পড়ে থাকার জন্য। তোমাদের পায়েই আমার স্থান। তোমাদের পায়েই আমার বাঁচা মরা। শুরুতেই স্রষ্টাই আমার প্রতি বিরুপ আচরণ করেছেন। আমাকে বানিয়েছেন গোলাকার আর মসৃণ করে। তাই নিজ ইচ্ছায় চলতে পারি না আমি। নেই কথা বলার ভাষা, নেই প্রতিরোধ করার ক্ষমতাও। তাইতো তোমাদের পায়ের অত্যাচার অতিষ্ঠ হয়েও সব মুখ বুজে সহ্য করি। পৃথিবীতে এমন লোক বোধহয় পাওয়া কঠিন যে আমাকে একটি বারের জন্যও লাথি দেয়নি। আমার বুকে লাথি মেরে তোমরা আনন্দ পাও, করতালি দাও, বাদ্য বাজাও, উল্লাস কর।
আমাকে সৃষ্টি করে আমার বুকে প্রথম লাথিটা আমার স্রষ্টাই আমাকে দিয়েছেন। তারপর থেকে আমাকে নিয়ে তৈরি হতে থাকে নানা কৌশল। তৈরি হতে থাকে আমার উপর অত্যাচারের নীলনকশা। তোমরা বোর্ড বসিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছ মোট ২২ জন ২ দলে বিভক্ত হয়ে আমাকে আঘাত করবে। একটি বিশাল মাঠের দুই প্রান্তে আমার জন্য পাতা হয় জাল। তারপর একজন পরিচালকের তথা রেফারির তত্ত¡াবধানে শুরু হয় আমার উপর অত্যাচারের উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা। প্রত্যেকের টার্গেট প্রতিপক্ষের জালে আমাকে প্রবেশ করানো। কিন্তু‘ আমি কারো পক্ষে নই। উভয় পক্ষের পায়ের অত্যাচারে আমি এদিক সেদিক ছুটাছুটি করতে থাকি। মাঝে মাঝে অসহ্য যন্ত্রনায় ছটফট করতে করতে মাঠের বাইরে চলে যাই। কিন্তু‘ রক্ষা পাইনা। সেখান থেকেই তুলে এনে আমাকে থ্রো-ইন করানো হয়। রেফারি সাহেব বড়ই ন্যায় বিচারক। একজন আরেকজনকে ধাক্কা দিলে কিংবা অন্যায়ভাবে লাথি দিলে তাদের শাস্তির বিধান করেন। হলুদ কার্ড দেখান প্রয়োজনে লাল কার্ড দেখিয়ে মাঠ থেকে বের করে দেন।কিন্তু‘ তার চোখের সামনে ২২ জন মিলে আমায় লাথির পর লাথি মারছেন তার জন্য কোনো শাস্তির বিধান কিংবা কোনো কার্ডের ব্যবস্থা রেফারি মহাশয়ের কাছে নেই। একটা সময় আমার নিজের অজান্তেই কোনো এক পক্ষের জালে জড়িয়ে যাই আমি। আর তখনই তোমরা লাখো মানুষ গোল গোল বলে আনন্দে চিৎকার করে ওঠো। আমি যে গোল তা বোধহয় তখনই তোমরা বুঝতে পারো। খেলোয়ড়দের কেউ কেউ আবার গোল হজম করার কষ্টে আমাকেই তীব্র ঘৃণায় সজোরে লাথি মারে। যেন তার এ গোল হজম করার জন্য আমিই দায়ী! বিজয়ী দলের দুএকজন খেলোয়াড় অবশ্য মাঝে মাঝে আমায় হাতে নিয়ে খুশিতে চুম্বন করে। আমি তখন চোখের জলে সান্ত¡নার সুখ খুঁজি। এদিকে খেলা শেষে পুরষ্কারের কাপটা নিয়ে হৈ হুুল্লরে মেতে থাকে বিজয়ী দল। চুম্বনের পর চুম্বন দিয়ে কাপের প্রতি তাদের ভালোবাসা প্রকাশ করে। কিন্তু‘ যাকে দিয়ে এই কাপ অর্জন, সেই আমি ফুটবল পড়ে থাকি মাঠের এক কোণায় অবহেলায়, অনাদরে। তোমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুলের ভাষায় ‘ গীত শেষে বীণা পড়ে থাকে ধুলি মাঝে’। অকৃতজ্ঞের মতো তোমরা আমায় ভুলে যাও। অথচ আমিই তোমাদের জন্য বয়ে আনি সম্মান আর গৌরব । উচুঁ করি দেশের মাথা। আমিই তৈরি করি পেলে, ম্যারাডোনা, জিদান, ব্যাকহ্যাম, মেসি, রোনালদোর মতো তারকা। সারাবিশ^ তাদের মাথায় করে নাচলেও আমি থেকে যাই পায়ের নিচেই। অনেক নারীভক্তকে তাদের প্রিয় তারকার ছবি বুকে নিয়ে ঘুমাতে দেখেছি কিন্তু‘ আমায় তারা ছুঁয়েও দেখেনি কখনো। এইতো সেদিন মাঠে অনুশীলন করছিলেন এক তারকা খেলোয়াড়। এক নারীভক্ত সিকিউরিটি ভেদ করে দৌড়ে এসে সেই খেলোয়াড়কে আনন্দে জাপটে ধরলেন। কই আমিতো পাশেই ছিলাম একবার চোখের দেখাও দেখেনি আমায়।
সে যাই হোক। এত কিছুর পরও আমি আমাকে নিয়ে সুখী। আমি Mwe©Z কেন জানো? আমি সারাবির মানুষকে এক সুতায় গাঁথতে পারি। আমি দূর করে দিই মানুষে মানুষে ধর্ম – বর্ণের ভেদাভেদ। আমি খেলোয়াড়সহ সকল মানুষকে শিক্ষা দিই শৃঙ্খলাবোধ, শিষ্টাচার, পারস্পরিক বিশ্বাস, সমন্বয়মুলক সম্পর্ক। বিশ^কাপ এলে সারা পৃথিবী মেতে থাকে আমাকে নিয়ে। সারা পৃথিবীর কোটি কোটি উৎসুক চোখ আমার উপর আছড়ে পরে। আমার মতো এক ক্ষুদ্র ফুটবলের জন্য এর চেয়ে গরবের আর এর চেয়ে প্রাপ্তির আর কী হতে পারে! তাই আমার কোনো দুঃখ নেই, কষ্ট নেই। শুধু তোমাদের কাছে অনুরোধ তোমরা সারাজীবন আমাকে তোমাদের পায়ের তলায় রেখ। আমাকে ভালোবেস। দেশে দেশে অহেতুক যুদ্ধ, মারণাস্ত্রের প্রতিযোগিতা বন্ধ করে তোমরা আমাকে চর্চা করো। আমি ফুটবল পৃথিবী ধ্বংসের পূর্ব পর্যন্ত তোমাদের কাছে থাকতে চাই।

Related Posts

12 Comments

Leave a Reply

Press OK to receive new updates from Firstsheba OK No