কফি-বর্তমান বিশ্বে খুবই জনপ্রিয় একটি পানীয়। নিয়মিত কফি পানে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে আসে, টাইপ-২ ডায়েবিটিস এর ঝুঁকি কমে। তাছাড়া কফি আমাদের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিকরে, ডিপ্রেশন দূর করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। এটি আমাদেরকে এনার্জেটিক ও সতেজ করে তোলে, আমাদের মনকে প্রফুল্ল রাখে।
শুধু শরীর নয়, কফি আমাদের ত্বকের জন্য ও অনেক উপকারী। চলুন জেনে নেওয়া যাক এটি আমাদের ত্বকের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ –
কফি আমাদের ত্বককে এক্সফলিয়েট করে মৃত কোষ ও ময়লা দূর করে। এটি আমাদের ত্বকের রক্তসঞ্চালন বাড়িয়ে ত্বককে উজ্জ্বল করে। এটি আমাদের ত্বককে টানটান করে তোলে।এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের বলিরেখা দূর করে, বয়সের ছাপ কমায়, ত্বকের ভাঁজ ও ঝুলে পড়া রোধ করে। তাছাড়া এটি আমাদের ত্বকের ডার্ক সার্কেল দূর করতে অধিক কার্যকরী। এটি চোখের নিচের কালো দাগ, রোদে পোড়া দাগ দূর কপ্রে থাকে।
চলুন জেনে নিই আমরা কিভাবে কফি দিয়ে ঘরোয়াভাবে ফেসিয়াল করতে পারি-
স্ট্যাপ-১: ক্লিনজিং
ক্লিনজিং এর জন্য আমরা ১ চা চামুচ কফি পাওডার এর সাথে ১ চা চামুচ গরুর দুধ মিশিয়ে একটা পেস্ট তৈরি করে নিন। আপনার হাতের কাছে যদি গরুর দুধ না থাকে তাহলে গুড়া দুধ দিয়েও করতে পারেন। তারপর এই প্যাকটি স্কিনে এক হাত বা দুই হাত(আপনার সুবিধামত) দিয়ে ভালোভাবে ম্যাসেজ করে নিবেন। এভাবে আপনি ২ থেকে ৩ মিনিট ম্যাসেজ করুন। ফলে আপনার স্কিন থেকে ময়লা অনেকাংশই দূর হয়ে যাবে। ২-৩ মিনিট ম্যাসেজ করার পর নরমাল পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন।ফেসওয়াশ যেমন আমাদের মুখের ময়লা দূর করে এটিও ঠিক তেমনি আমাদের মুখের ময়লা দূর করে মুখজে উজ্জ্বল করে তোলে।
স্ট্যাপ-২: স্টিম নেওয়া
এটা আপনি স্টিম মেশিন দিয়েও করতে পারেন। আর যদি তা না থাকে তাহলে তাওয়াল দিয়েও করে নিতে পারেন। সেজন্য একটি তাওয়ালকে আপনার সহ্য করার মতো গরম পানিতে ভিজিয়ে ভালো করে চিপিয়ে সেটা মুখে দিন। তাওয়াল ঠান্ডা হয়ে গেলে আবার গরম পানিতে ভিজিয়ে নিন। এভাবে পুরো প্রসেসটা ৩ থেকে ৪ বার করতে পারেন। স্টিম নেওয়ার ফলে আপনার স্কিনের পোর বা লোমকুপ গুলো ওপেন হয়ে যাবে।
স্ট্যাপ-৩: স্ক্রাবিং
স্ক্যাবের জন্য আমাদের প্রয়োজন আধা চা চামুচ চিনি, আধা চা চামুচ কফি, ২/৩ ফোঁটা অলিভঅয়েল বা নরকেলের তেল।এক্ষেত্রে যাদের অয়েলি স্কিন তারা তেলের পরিবর্তে সামান্য পরিমাণ মিশিয়ে করতে পারেন। উপাদান গুলোকে মিশিয়ে(পুরাপুরি না গলিয়ে)আলতো হাতে মুখে এপ্লাই করুন। জোরে জোরে ম্যাসেজ করা যাবেনা। স্ক্রাবিং আমাদের স্কিনের ডেড সেল গুলো তুলে ফেলতে সাহায্য করে এবং নতুন কোষ সৃষ্টিতে সাহায্য করে। এক্সপার্টদের মতানুসারে, স্ক্রাবিং সপ্তাহে অন্তত পক্ষে ১ দিন করা প্রয়োজন। স্ক্রাবিং টা আপনি ২ থেকে ৩ মিনিট করে নরমাল পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
স্ট্যাপ:৪- ফেসপ্যাক
ফেসপ্যাক আমাদের উক্ত ফেসিয়ালের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পার্ট। ফেসপ্যাকের জন্য আমাদের প্রয়োজন- ১ টি স্পোন কফি পাওডার, ১ টি স্পোন মধু, ১ টি স্পোন বেসন, অ্যালোভেরা জেল আর টক দই। সব গুলো উপাদান ভালোভাবে মিশিয়ে একটা পেস্ট তৈরি করুন। এবার এটি আপনার মুখে ভালোভাবে এপ্লাই করে নিন। ৭/১০ মিনিট অপেক্ষা করে নরমাল পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই স্ট্যাপটা আপনার স্কিনের ব্রাইটনেস বাড়িয়ে দিবে, স্কিনকে স্মোথ করে তুলবে। আপনি চাইলে শুধু এই স্ট্যাপটা সপ্তাহে ১ দিন করে এপ্লাই করতে পারেন। তো মুখ ধুয়ে ফেলার পর আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন আপনার স্কিন কতটা ব্রাইট হয়েছে।
এভাবে ঘরোয়াভাবে ফেসিয়াল করলে আপনার সময় ও টাকা দুটোই বাচঁবে।
এই ফেসিয়াল টা মাসে ১ বার বা ১৫ দিন পর করতে পারেন।
এভাবেই আমরা চাইলে আমাদের ঘরোয়া উপাদান গুলো দইয়ে খুব সহজেই স্বল্প সময়ের মধ্যে পার্লারে না গিয়ে ফেসিয়াল করতে পারি। এটির ফলে আমাদের স্কিন বাজারের ক্যামিকাল গুলো থেকে রক্ষা পাবে।
আমাদের সবার উচিত বাজারের ক্যামিকাল পন্য গুলো ব্যবহার না করে এভাবে ঘরোয়া উপাদানের মাধ্যমে আমাদের স্কিনের পরিচর্চা করা। কারণ বর্তমান বিশ্বে স্কিন ক্যান্সারের পরিমান দিন দিন বেড়েই চলেছে। আর এর পিছনে মূল কারণ হলো বাজারের ক্যামিকাল পন্য গুলোর ব্যবহার। তাই আমরা সবসময় চেষ্টা করবো ক্যামিকাল পন্য গুলো থেকে দূরে থাকতে।