বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি না হলেও বাংলাদেশ আবারও শ্রীলংকা সফরের মাধ্যমে মাঠে ফিরতে যাচ্ছে। আনুষ্ঠানিকভাবে সূচি প্রকাশিত না হলেও ৩ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে তা অনেকটাই নিশ্চিত। এই সিরিজের মাধ্যমে দীর্ঘ ৭ মাস পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরছে বাংলাদেশ । এই সিরিজটি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ এর অংশ হওয়ায় সিরিজটির গুরুত্ব আরও বেড়ে গিয়েছে। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ এর আগের ৩টি ম্যাচেই ইনিংস পরজয় বরণ করেছে বাংলাদেশ। তাই টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ এ প্রথম পয়েন্ট অর্জনের জন্য সিরিজটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শ্রীলংকা সিরিজকে সামনে রেখে ব্যক্তিগত অনুশীলন শুরু করেছে ক্রিকেটাররা।গত ১৯ জুলাই থেকে দেশের বিভিন্ন ভেন্যুতে ব্যক্তিগত অনুশীলন শুরু হয়েছে ক্রিকেটারদের। আগামী মাসের মধ্যভাগে দলগত অনুশীলন শুরু হতে পারে। সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে শ্রীলংকা যাওয়ার কথা রয়েছে বাংলাদেশের।শ্রীলংকাতে ৩টি টেস্টই কলোম্বোতে হতে পারে।
করোনা পরিস্থিতির কারণে এই সিরিজের দলটি ২০-২২ সদস্যের হওয়ার সম্ভাবনা আছে। জিম্বাবুয়ে সিরিজে সুযোগ পাওয়া সবাই এই সিরিজে থাকছেন। চমক হিসেবে থাকতে পারেন পেস বোলিং অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন ও পেসার হাসান মাহমুদ। ১ বছরের নিষেধাজ্ঞা শেষ করে এই সিরিজের মাধ্যমে মাঠে ফিরতে পারেন সাকিব আল হাসান। এছাড়া ইনজুরি থেকে সেরে উঠায় ওপেনার সাদমান ইসলাম,তাসকিন আহমেদ এবং ব্যক্তিগত কারণে জিম্বাবুয়ে সিরিজে না থাকা ইমরুল কায়েসও ফিরছেন।
বাংলাদেশের প্রধান চিন্তার নাম ওপেনিং। গত ১২ বছরে ওপেনিং এ তামিমের যোগ্য সঙ্গী খুঁজে পায়নি বাংলাদেশ এই সিরিজে ওপেনার হিসেবে থাকতে পারেন তামিম ইকবাল, সাদমান ইসলাম, ইমরুল কায়েস, সাইফ হাসান ও সৌম্য সরকার। ওপেনিং এ অটোমেটিক চয়েজ তামিম ইকবাল। তামিম ইকবালের টেস্ট এ ব্যাটিং গড় ৩৮.৬৪ এবং বিদেশে ব্যাটিং গড় ৩৮.৫৩।অর্থাৎ শ্রীলংকাতে তার ব্যাটের দিকেই তাকিয়ে থাকবে বাংলাদেশ । তার ওপেনিং সঙ্গী হওয়ার দৌঁড়ে এগিয়ে আছেন সাদমান ইসলাম। তার ব্যাটিং গড় ২৫ হলেও ওয়েস্টইন্ডিজ এর সাথে তার হাফসেঞ্চুরি, নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধ কন্ডিশন এ এবং আফগানিস্তানের দূর্দান্ত বোলিং এর বিরুদ্ধে তার লড়াকু ইনিংসগুলো তার টেস্ট সামর্থ্যের পরিচয় বহন করে। যদিও শ্রীলংকাতে প্রস্তুতি ম্যাচের পারফর্মেন্স এর ওপরই মূলত নির্ভর করছে তামিমের ব্যাটিং সঙ্গী কে হবেন।
ব্যাটসম্যান হিসেবে স্কোয়াডে থাকতে পারেন শান্ত, মমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, মোহাম্মদ মিথুন, লিটন কুমার দাস এবং মাহমুদুল্লাহ। মুশফিক বাংলাদেশের ব্যাটিং স্তম্ভ। জিম্বাবুয়ের সাথে ম্যাচটি বাদ দিলে আগের ৫টি ম্যাচে বাংলাদেশ নিউজিল্যান্ড,ভারত ও পাকিস্তানের সাথে ইনিংস ব্যবধানে এবং দেশের মাটিতে আফগানিস্তানের সাথে ২২৪ রানে হেরে যায়। কিন্তু এরমধ্যেও মুশফিক ছিলেন ব্যতিক্রম। তিনি শেষ ৫টি টেস্ট এ প্রায় ৬৮ গড়ে রান করেছেন।লিটন কুমার দাসও সর্বশেষ জিম্বাবুয়ে সিরিজে দূর্দান্ত ফর্মে ছিলেন। সর্বশেষ জিম্বাবুয়ে সিরিজে খারাপ ফর্মের জন্য টেস্ট দলে জায়গা না পেলেও এবারে শ্রীলংকা সিরিজে জায়গা পেতে পারেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।
অলরাউন্ডার হিসেবে সাকিব আল হাসান, মেহেদী হাসান মিরাজ এর সাথে জায়গা পেতে পারেন মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। সাকিব আল হাসান এর ফর্ম এই সিরিজের ভাগ্য নির্ধারণ করে দিতে পারে।
বোলার হিসেবে থাকতে পারেন নাইম হাসান, তাইজুল ইসলাম, আবু জায়েদ রাহী,ইবাদত হোসেন, হাসান মাহমুদ, তাসকিন আহমেদ ও মুস্তাফিজুর রহমান দলে জায়গা পেতে পারেন। আবু জায়েদ রাহী বাংলাদেশের পেস বোলিং এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন। নতুন বলে তিনি নিয়মিত উইকেট পাচ্ছেন। স্পিন অ্যাটাকে মূল ভরসা সাকিব আল হাসান এর সাথে তাইজুল ইসলাম এবং নাইম হাসান।
বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা ব্যক্তিগত অনুশীলন শুরু করলেও দলগত অনুশীলনের ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। বাংলাদেশ দলের লোকাল ফিজিও তুষার গত ২৭ আগস্ট বলেন ,” ক্রিকেটাররা দ্রুতই ফিটনেসের উন্নতি করছে।” তিনি আশা করেন আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে ক্রিকেটাররা ম্যাচ ফিটনেস ফিরে পাবেন। বাংলাদেশ দলের ম্যাচ প্র্যাকটিস এর একমাত্র সুযোগ শ্রীলংকাতে এইচপি দলের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচ। অপরদিকে শ্রীলংকা দল জুন মাস থেকে দলগত অনুশীলন শুরু করে এবং বর্তমানে তাদের ঘরোয়া লিগ চলছে। দূর্দান্ত ফর্মে রয়েছেন দীনেশ চান্দিমাল, অ্যান্জেলো ম্যাথিউজ এবং কুশাল মেন্ডিস।
সিরিজ শুরুর আগে নিঃসন্দেহে প্রস্তুতির দিক থেকে আছে শ্রীলংকা দল। তারপরও ২০১৭ সালের শ্রীলংকা সফরের সুখস্মৃতি এবং সাকিব আল হাসান এর দলে ফেরত আসা বাংলাদেশ দলকে নিঃসন্দেহে অণুপ্রেরণা যোগাবে।