পরিবারেরের বড় ছেলে আব্দুল করিম । তিন ছোট ভাই-বোনকে রেখে মাঝ বয়সী পিতা এক দুর্ঘটনায় মারা যান । বাবার মৃত্যুর সময় আব্দুল করিম ক্লাস সেভেনে পড়ুয়া কিশোর । ইচ্ছা ছিল পড়াশোনা করে ভালো একজন ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করবে । কারন, তার চোখের সামনেই চিকিৎসার অভাবে মারা গিয়েছিল তার দাদি । তাই সেদিন সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডাক্তার হবে যাতে আর কোন মানুষ তার দাদির মতো চিকিৎসার অভাবে মারা না যায় । কিন্ত বাবার মৃত্যুর পর পরিবারেরের দায়িত্ব কাধে তুলে নিতে হয় আব্দুল করিমকে । এই দায়িত্ব নিতে গিয়ে তাকে ছাড়তে হয় স্কুলের ক্লাসরুম, ভুলে যেতে হয় তার স্বপ্নকেও ।
কাজের সন্ধানে বেরিয়ে যায় আব্দুল করিম । কয়েকদিন ঘোরাঘুরির পর অবশেষে পার্শ্ববর্তী লালমিয়া কাকুর মুদির দোকানে তার একটা কাজ মেলে ।
অল্পদিনের মধ্যেই লালমিয়া কাকুর আস্থা কুড়াতে সক্ষম হন আব্দুল করিম । তারপর থেকে বেতন বৃদ্ধি পায় । বেতনের টাকাগুলো পাঠাতে লাগলো বাড়িতে মায়ের কাছে । সংসার চালানোর পাশাপাশি ছোট ভাইকে পড়াশোনা করে মানুষের মতো মানুষ করা আর ছোট দুই বোনকে সম্মানের সাথে বিয়ে দেওয়ার চিন্তা মাথায় নিয়ে আব্দুল করিম সময় পার করতে লাগল ।
লাবলু । আব্দুল করিমের ছোট ভাই । দুই ভাইকে একসাথে দেখলে আব্দুল করিমকে বড় ভাই বলে কেউ ভাবে না । মেলা চিন্তাভাবনা, কঠোর পরিশ্রম আব্দুল করিমের শরীরকে বেড় উঠতে দেয়নি । ছোট ভাই-বোনদের দিকে তাকিয়ে নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন । কিন্তু যে চিন্তা নিয়ে আব্দুল করিম সব সুখ-শান্তি ত্যাগ করেছিলেন তা আজ নিষ্ফল হয়ে গেছে ।
লাবলুকে কখনো কোন কষ্ট বুঝতে দেয়নি আব্দুল করিম । সে নিজের ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছাটা ভাইকে দিয়ে পুরন করাতে চেয়েছিল । লাবলু মেডিকেলে ভর্তি হয়েছিল বটে, কিন্তু সে ডাক্তারি শেষ করবর পূর্বেই এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় ।
লাবলুর চলে যাওয়াটা কেউ বিশ্বাস করতে পারছে না । এ রকম একটা ভদ্র ছেলে সমাজে পাওয়াটা খুবই দুষ্কর । এমন ছেলেটার বিদায় গোটা এলাকা নিস্তব্ধ হয়ে গেছে ।
এ ঘটনাটির পর কয়েকবার স্ট্রোব করছে আব্দুল করিম । নিজের আদরের ছোট ভাইকে হারিয়ে দ্বিতীয় বারের মতো আবার এতিম হয়ে গেছে । সেদিন সে নতুন করে আবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, নিজের ছেলেকে ডাক্তার বানিয়ে সে তার ইচ্ছা পূরন করবেই ।
অতীতের সব কিছু ভুলে গিয়ে নতুন কর কাজ শুরু করেছে আব্দুল করিম । বৃদ্ধ মায়ের সেবা করার পাশাপাশি নিজের ছেলে রাহুলেকে একজন মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তোলার চেষ্টায় রত ।
সে একজন ডাক্তার হয়ে তার ইচ্ছা পূরন করার পাশাপাশি ভালো নৈতিক চরিত্রবান একজন মানুষ হিসেবেও গড়ে উঠবে । এটাই তার ইচ্ছা । তাই নিজের কাছে থাকুক বা না থাকুক ছেলের প্রয়োজন পুরন করার জন্য সব সময় চেষ্ঠা করতেন আব্দুল করিম । রাহুলও তার বাবার অবস্থা বুঝতো । বাবা কষ্ট পায় এমন কাজ থেকে বিরত থাকত । সর্বদা পড়াশোনা নিয়ে লেগে থাকতো । এভাবেই তার ছাত্রজীবন পার করতে লাগলো ।
অবশেষে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে রাহুল দেশের নামকরা একটি মেডিক্যাল কলেজ থেকে ডাক্তারি শেষ করে তার বাবার ইচ্ছা পুরন করলো । এখন আব্দুল করিম অনেক খুশি । তার ছেলে ডাক্তারি পাস করেছে । এখন তার দাদির মতো আর কাউকে চিকিৎসার অভাবে মারা যেতে হবে না । তাই, ছেলের প্রতি আব্দুল করিমের একটাই উপদেশ মাত্র । সে যেন নিঃসার্থভাবে মানুষের সেবাই নিজেকে নিয়োজিত রাখে । তার দাদির মত আর কোন আদম সন্তান মারা না যায় । রাহুল তার বাবার এই উপদেশ শুনে মানুষের সেবাই নিয়োজিত রাখার সহান ব্রত নিয়ে পথ চলা শুরু করলো ।