একজন সদ্য পাশ করা তরুন গ্র্যাজুয়েট তার প্রথম চাকরীর ইন্টারভিউয়ের জন্য যাচ্ছিলো, সে খুবই নার্ভাস ছিলো এবং বারবার একটি ভাবনাই তার মাথায় আসছিলো যে, যদি সে সবকিছুর উত্তর ঠিকমতো না দিতে না পারে তবে কি হবে? সে যখন ইন্টারভিউ কক্ষে ঢুকলো, তখন তার মনে হলো যে তার মাথার ভেতরটা পুরো খালি এবং সে কোনো প্রশ্নেরই ঠিকভাবে উত্তর দিতে পারলো না। কিছুদিন পরে সে জানতে পারলো যে, অন্য একজনকে পদটির জন্য বাছাই করা হয়েছে। তার খুবই খারাপ লাগলো এবং সে নিজেকে দোষারপ করলো কারণ সব প্রশ্নেরই উত্তর তার জানা ছিলো কিন্তু সে ঘাবড়ে গিয়েছিলো।
তার মধ্যে একটা বদ্ধমূল ধারণা তৈরী হলো যে, তাকে দিয়ে কিছুই হবে না। সেদিনের পর থেকে সে সব সামাজিক অনুষ্ঠানে যাওয়া বন্ধ করে দিলো এবং কোনো চাকরীর ইন্টারভিউতেও আর গেলো না। সে সব ধরনের সামাজিক যোগাযোগ বন্ধ করে দিলো, কোনো বন্ধুর সাথেও দেখা করতো না, তাদের কোনো অনুষ্ঠানেও যেতো না কারণ তার খুব একা একা লাগতো যেহেতু তাদের সবারই চাকরী ছিলো। তার জীবন থেকে সে সবকিছুই বাদ দিয়ে দিলো। বেশ কিছু সময় পর সে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে গেলো। সেখানে গিয়ে সে বুঝতে পারলো যে, সে খুবই হীনমন্নতায় ভুগছে। অনেকক্ষণ চুপ থাকার পর সে বললো, “সবাই আমাকে নিয়ে হাসে এবং আমি নিজেকে পৃথিবীর অন্য যেকোনো কিছুর থেকে অনেক বেশী ঘৃণা করি।“
এই তরুণের নিজের সম্পর্কে করা এ ধরনের মন্তব্য থেকে আমরা ধরেই নিতে পারি যে, সে সবসময় নিজেকে একটি ব্যর্থতার স্থানে রাখে, তার জীবনের কোনো কিছুই তার ভালো লাগেনা, এবং কোনো কিছুই সে করতে পারে না কারণ সে নিজের মধ্যে সবসময়ই একটি নেতিবাচক ধারণা ধারণ করে।
বেশীর ভাগ মানুষই যারা এ ধরনের নেতিবাচকতা ধারণ করে তারা ছোটবেলা থেকেই এসব ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হন। এই তরুণের পূর্বের ইতিহাস সংগ্রহের পর তার বেড়ে ওঠার সময় বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত হয়। যেমন, তার বাবা-মা তার কোনো ছোট বা বড় সাফল্যে কোনো সময় প্রশংসা করেন নি, যার ফলে তার মধ্যে কোনো আত্মবিশ্বাস গড়ে ওঠেনি। তার বাবা-মা তাকে কোনো সময় একা কোনো কিছু করতে দেননি বা একা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে দেননি, যার ফলে তার মধ্যে একটি দৃঢ় পরনির্ভরশীলতা গড়ে উঠেছে।
স্কুলে যখন সে হোমওয়ার্ক করে নিয়ে যেতে পারতো না তখন তার শিক্ষক তাকে খুব বকাবকি করতো এবং কখনও কখনও অন্য ছাত্রদের সামনে তাকে শাস্তিও দিতো। এরকম সময়গুলোতে সে খুবই অপমানিত বোধ করতো এবং তার মধ্যে নিজের প্রতি একটি ঘৃণা তৈরী হতে থাকে। তার সহপাঠীরাও তাকে নিয়ে মজা করতো এবং তখন সে প্রতিবাদ করতে না পারায় নিজেকে নিজেই দোষারোপ করতো। যদিও তার খুব কম সংখ্যক বন্ধু ছিলো, তাদের চোখেও সে দয়া দেখতে পেতো এবং ফলে তাদের থেকেও নিজেকে সে দূরে সরিয়ে রাখতো।
একজন শিশুর প্রতি যখন সবসময় নেতিবাচক মনোভাব দেখানো হয়, তখন তার পক্ষে নিজের মধ্যে ইতিবাচক ভাবনা গড়ে তোলাটা প্রায় অসম্ভব হযে ওঠে। তারা তাদের গুণগুলোকে চিহ্নিত করতে পারে না এবং নিজের প্রতি বিশ্বাসও রাখতে পারে না। তাদের মধ্যে সবসময় একটি কথাই ধ্বনিত হতে থাকে যে, ‘তারা কিছুই করতে পারবে না!’
পক্ষান্তরে একজন শিশুর প্রতি সবসময় ইতিবাচক মনোভাব দেখালে, অর্থাৎ তাকে প্রশংসা করলে, ভুল করলে সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিলে, সে ইতিবাচক চিন্তাচেতনা নিয়ে বেড়ে ওঠে। যখনেএকজন মানুষ বিশুদ্ধ ভাবনা নিয়ে কোনো কথা বলে বা কোনো কাজ করে, তখন সুখ তাকে অনুসরণ করে; ঠিক যেমন একটা ছায়া কখনও তার পিছু ছাড়ে না।
আমাদের চিন্তা-ভাবনা আমাদের অনুভূতিকে চালিত করে। যেমন-
পরিবেশ
একটি নেতিবাচক পরিবেশে, আমরা একটি পরিস্থিতিকে নেতিবাচকভাবে দেখি যা আমাদেরকে কিছু নেতিবাচক অনুভূতি দেয় (দু:খ, বিষণ্ণতা, হতাশা), তখন আমরা সবকিছু নেতিবাচকভাবে করি এবং অবশেষে আমরা সবকিছুকে নেতিবাচকভাবে ব্যাখ্যা করি।
একটি ইতিবাচক পরিবেশে ঠিক এর বিপরীতটি ঘটে।
এখন নেতিবাচক আত্ম-ভাবনাকে ইতিবাচক ভাবনায় পরিবর্তন করুন:
ঘটনা | নেতিবাচক ভাবনা | ইতিবাচক ভাবনা |
প্রথম চাকরীর ইন্টারভিউয়ে ব্যর্থ | আমি যোগ্য নই, আমি ঐ পদটির জন্য উপযুক্ত নই, অন্যরা আমার থেকে বেশী যোগ্য।
অনুভূতি: অসুখী, ব্যর্থ, এবং অযোগ্য। | এটা আমার প্রথম ইন্টারভিউ এবং একটা শিক্ষনীয় অভিজ্ঞতা। আমি অন্ততপক্ষে একটি পেশাগত ইন্টারভিউ কিভাবে হয় সে সম্পর্কে কিছু জানতে পেরেছি।
অনুভূতি: দৃঢ়, সাহসী, আশাবাদী। |
একটি পরীক্ষার সময় জ্বর হওয়া | আমার সাথেই কেনো এমন হয়?
অনুভূতি: দু:খী, ব্যথিত। | আসলে এটা যে কারওর সাথেই হতে পারে। আমার তো আর সৃষ্টিকর্তার সাথে কোনো শত্রুতা নেই।
অনুভূতি: নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য, এবং সমজদার। |
একাকীত্ব অনুভব করা; চিন্তা করা যে বন্ধুরা আমার কথা ভাবেনা | তারা আমাকে আর পছন্দ করেনা সেজন্যই আমার সাথে আর কথা বলেনা।
অনুভূতি: একাকী, হীন, শূণ্য। | তারা হয়তো কোনো কারণে সমস্যায় আছে। বরং আমিই খোঁজ নিয়ে দেখি যে কি হয়েছে?
অনুভূতি: উদ্বিগ্ন, সহানুভূতিশীল। |
জীবনটা ঠিক একটা ইসিজি মনিটর বক্সের মতো, আমরা যে লাইনগুলো দেখি সেগুলো কখনো উপরে আবার কখনো বা নীচে, যা নির্ধারণ করে আমাদের বেঁচে থাকা বা না থাকা, এবং লাইনটা সোজা হয়ে গেলে বোঝা যায় যে মানুষটা মৃত। মূল কথা হলো প্রত্যেক পরিস্থিতিতে আমাদের মানসিকভাবে স্থিতিশীল থাকতে হবে, আমরা যদি তা করতে পারি তবে যেকোনো সমস্যার যথাযথ মোকবেলা করতে পারবো, এবং এসব কিছুর জন্য আমাদের নিজেদের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে। “আমি জানি, আমি যাই করতে চাইনা কেনো তা করতে পারবো… “
“নিজেকে সন্মান করুন
নতুবা কেউ আপনাকে সন্মান করবে না।
নিজেকে ভালোবাসুন
নতুবা কেউ আপনাকে ভালোবাসবে না।
নিজেকে বিশ্বাস করুন
নতুবা কেউ আপনাকে বিশ্বাস করবে না।
এবং অবশেষে,
নিজের মতো হন
এটাই আপনার জীবনে আজীবন থাকবে! “