আসসালামু আলাইকুম /সবাই কেমন আছেন? আশা করি ভালোই আছেন আল্লাহর রহমতে।আজকের বিষয় হচ্ছে, কুরআনিক স্টাডিজ -(সূরা আন -নূর) এর সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা।
কিছুকথাঃ
ইসলামিক স্টাডিজ হচ্ছে এমন একটি বিষয় যেখানে কোন দ্বিধা-দ্বন্দ নেই বললেই চলে।
এ বিষয়টি সার্বজনীন একটি বিষয় । এ বিষয়এ অন্য ধর্মের ব্যক্তি প্রবেশ না করুক, এমন কোন কথা নেই। এ বিষয় নিয়ে সকল ধর্মের মানুষ অধ্যায়ন করে, করেছে ও আদৌ করতে পারবে। তবে এমন কিছু দৃষ্টিভঙ্গির মানুষ আছে যারা নানান কুৎসা রটিয়ে মানুষকে এ বিষয়এ না আসার জন্য নিরুৎসাহিত করছে। কারণ তারা মনে করে এ বিষয়ের কোন ভবিষ্যত নেই। অন্য কেউ এ বিষয়ে অধ্যায়ন করতে পারবে না।তাই এটি শুধু মুসলিমদের জন্য।তবে এ বিষয়ে অন্য ধর্মের মানুষদের আনাগোনা একটু কমই থাকে।
আসলে এদের কথায় কান দিয়ে লাভ নেই। কারণ তারা বিভিন্ন ভাবে মানুষকে পথভ্রষ্ট করে।
তাই এ বিষয়ে সকল ধর্মের মানুষ অধ্যায়ন করতে করতে পারবে।
পড়ালেখা কোন জাত-ধর্ম বিচার করে না।
যাইহোক, আজকের বিষয় হচ্ছে, কুরআনিক স্টাডিজ -(সূরা আন -নূর) এর সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। এটি তাদের জন্য সহায়ক যারা অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। তাছাড়া এটি সকল পাঠকদের জন্য সহায়কও বটে। মানুষের সঠিক পথের ধারক হিসেবে এটি সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
পাঠঃ
ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ অনার্স ১ম বর্ষঃ কুরআনিক স্টাডিজ -(সূরা আন -নূর) ২০২২
সূরা আন নূরের আলোচ্য বিষয়ঃ সূরা আন নূরের আলোচ্য বিষয় সংক্ষেপে বর্ণনা করে নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ
ইসলাম শুধু একটি ধর্মই নয়,বরং সম্পূর্ণ একটি জীবনবিধান। মানবজীবনের প্রত্যেকটি দিক যেমন সামাজিক,অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ইত্যাদি সবক্ষেত্রে ইসলাম সুস্পষ্ট বিধান দিয়েছে। ব্যভিচারের মতো একটি মহা অপরাধেরও শাস্তির বিধান রয়েছে আল-কুরআনে। এ বিষয়ে স্বয়ং আল্লাহ যেসব বিধান নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন সুরা আন- নূর তারই সমষ্টি।
ব্যভিচার একটি জঘন্যতম সামাজিক ব্যধি। সূরা আন নূরের শুরুতেই ব্যভিচারকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে সাব্যস্ত করে এর শাস্তির বিধান করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, অতঃপর তোমরা প্রত্যেককে ১০০টি করে বেত্রাঘাত কর।(আয়াত ২)
সতী সাদ্ধী নারীর ওপর ব্যাভিচারের মিথ্যা অভিযোগ এনে যদি তার দাবির পক্ষে চারজন প্রত্যক্ষদর্শী পুরুষ সাক্ষী উপস্থাপন করতে না পারে তাহলে অপরাধীকে ৮০ টি বেত্রাঘাতের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেই সাথে আল্লাহ বলেন,তাদেরকে ৮০ টি বেত্রাঘাত কর।(আয়াত ৪)
স্বামী -স্ত্রী কেউ কারো বিরুদ্ধে ব্যভিচারের অভিযোগ আনলে এর সুষ্ঠু সমাধানকল্পে পারিবারিক সুখ শান্তি বজায় রাখতে লি’আনের বিধান বর্ণনা করা হয়েছে।
অন্যের প্রবেশের পূর্বে গৃহবাসিকে সালাম ও গলা খাঁকারি দিয়ে অনুমতি নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনবার ডাকা ইসলামি শরিয়তের অপছন্দীয়। আর যদি অনুমতি না পাওয়া যায় তা হলে ফিরে যেতে হবে। এছাড়া অনুমতি নির্লজ্জতা ও অশ্লীলতাকে দমন করে।তাই আমাদের উচিত অন্যের গৃহে প্রবেশের ক্ষেত্রে ইসলামি শরিয়ত অনুসরণ করা।
এখানে শুধুমাত্র পুরুষ নয়,মহিলাদেরকেও সমভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।জরুরি অবস্থায় অপরের গৃহে প্রবেশের প্রয়োজন নেই।যেমন আগুন নেভানো বা চোর ডাকাতের সাহায্যের জন্য।খালি ঘরে অনুমতি ব্যতীত প্রবেশ করা যাবে না।
অন্যের ঘরে উঁকি মারা,অনুমতিবিহীন কারো চিঠি পড়া এবং অন্যের গৃহে কথা বার্তা শোনা নিষিদ্ধ।
অনুমতির জন্য জবরদস্তি করা বা অনুমতি না পাওয়ায় দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বৈধ নয়।
জাহেলি যুগে আরব বাসীদের নিয়ম ছিল,শুভ সকাল, শুভ সন্ধা এইরকম বলে নিঃসংকোচে সরাসরি একে অন্যের গৃহে প্রবেশ করত। এতে অনেক সময় আগুন্তক গৃহ মালিক ও মহিলাদের বেসামাল অবস্থায় দেখে ফেলতো।তাই ব্যক্তিগত গোপনীয়তা শুধু ঘরের মধ্যেই নয় বরং পূর্ণ সামাজিক পরিবেশে এর সংরক্ষণ জরুরি।
এক ব্যক্তি বাইরে থেকে রাসূল (সাঃ) এর ঘরে উকি দিলেন। রাসূল (সাঃ) এর হাতে সে সময় একটি তীর ছিল তিনি এমন ভাবে এগিয়ে গেলেন, যেন তীরটা তার পেটে ঢুকিয়ে দিবেন। উঁকি দেয়া প্রসঙ্গে তিনি এরশাদ করেন- “যদি কোন ব্যক্তি তোমার গৃহে উঁকি মারে এবং তুমি কাঁকর মেরে তার চোখ কানা করে দাও, তাতে তোমার কোন গুনাহ হবে না।”
এছাড়াও এতে গৃহবাসি বা গৃহকর্তা দায়ী হবে না ও জবাবদিহি করতে হবে না।
অপরের পত্র পড়তেও তিনি নিষেধ করেছেন।তিনি বলেন,যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের অনুমতি ছাড়া তার পত্রে চোখ বুলাল সে যেন আগুনের মধ্যে চোখ বুলাল।
এ সূরায় আল্লাহ তা’আলা মুসলিম নর-নারীদের জন্য পর্দার বিধান আরোপর পাশাপাশি তাদের দৃষ্টি অবনত রেখে সংযমী হওয়ার নির্দেশ প্রদান করেছেন।
রাসূল (রাঃ) দৃষ্টি প্রসঙ্গে হযরত আলী (রাঃ) কে বলেন, “হে আলী! এক নজরের পর দ্বিতীয় নজর দিও না। প্রথম নজর তোমার পক্ষে, দ্বিতীয় নজর তোমার বিপক্ষে। ” রাসূল (সাঃ) বলেন,যে মুসলমানের দৃষ্টি কোন সৌন্দর্য মহিলার ওপর পড়ে এবং দৃষ্টি সরিয়ে নেয়,এ অবস্থায় আল্লাহ তার ইবাদাতের বিশেষ স্বাদ সৃষ্টি করে দেন।
সূরা আন -নূরে প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক নর -নারীর ও দাসদাসীদের বিবাহের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তোমাদের মধ্যে যাদের স্বামী স্ত্রী নেই,তোমরা তাদের বিয়ের ব্যবস্থা কর,(একইভাবে) তোমাদের দাস -দাসীদের মধ্যে যার ভালো মানুষ তাদেরও বিয়ের ব্যবস্থা কর, যদি তারা অভাবী ও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়, তাহলে আল্লাহ তালা অচিরেই তাঁর অনুগ্রহ দিয়ে তাদের অভাবমুক্ত করে দিবেন। অবশ্যই আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও সর্বজ্ঞ।
এ প্রসঙ্গে রাসূল (সাঃ) বলেন, ” হে যুবকগণ! তোমাদের মধ্যে যে বিয়ে করতে পারে সে যেন বিয়ে করে নেয়,এটি হচ্ছে চক্ষুকে নিচু রাখার ও সতীত্ব রক্ষার উৎকৃষ্ট উপায়।আর যার বিয়ে করার আর্থিক সামর্থ্য নেই তার রোজা রাখা উচিত। কারণ রোজা মানুষের দেহের উত্তাপ ঠান্ডা করে। এছাড়াও তিনি বলেন, আল্লাহ তালা অবশ্যই তিনি ব্যক্তিকে সাহায্য করেন, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারী,চুক্তিবদ্ধ যে চাকর চুক্তির অর্থ আদায়ে সচেষ্ট, আর যে ব্যক্তি সততা বজায় রাখার জন্য বিয়ে করে।
সমাজ সম্পর্কিত বিধান সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, সমাজের পুরুষেরই সমষ্টিগত কাজে অংশগ্রহণের বিধান রয়েছে ও নেতার আনুগত্যের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে যেসব লোক কুৎসা রটনা করে বেড়ায় এবং মুসলিম সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, তাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে, তারা কোন রূপ সমর্থন পাওয়া তো দূরের কথা ; বরং শাস্তি পাওয়ার যোগ্য।
তাই আমাদের উচিত উপরের আলোচিত বিষয় গুলোর বিধান গুলো মেনে চলা। আল্লাহ তালা যেসব বিধি-নিষেধ প্রনয়ণ করেছেন তার যথাযথ বাস্তব প্রয়োগ তথা মেনে চলা। তাহলেই একটা সুষ্ঠু-সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়ে ওঠবে। এমনকি সতর্কতার সাথে জীবন যাপন করতে পারব। আমরা যা দেখি শুনি তা সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করে যাতে আমাদের জীবন শান্তিপূর্ণভাবে সুন্দরভাবে পরিচালনা করা যায় আর আল্লাহ তালা সুন্দর ভাবে তার বিধিমালা কুরআনে লিপিবদ্ধ করেছেন।