আজকের পোস্টে আমরা বাংলাদেশের সবচেয়ে ভালো ও পুরনো এনজিও সমূহের একটি ‘উদ্দীপন’ নিয়ে কথা বলতে যাচ্ছি। উদ্দীপন কি, উদ্দীপন এনজিও লোন সম্পর্কে এ টু জেড, কি কি ধরণের লোন নিতে পারবেন, কিভাবে তাদের সাথে যোগাযোগ করবেন ইত্যাদি সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে।
উদ্দীপন কি?
উদ্দীপন হলো বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরনো ও বিশ্বস্ত এনজিও গুলোর একটি। ১৯৮৪ সালে উদ্দীপন এনজিও প্রতিষ্ঠিত হয়। গত ৩৯ বছর পর্যন্ত উদ্দীপন এনজিও সুবিধাবঞ্চিত দারিদ্র জনগণকে সাহায্য করে যাচ্ছে। উদ্দীপন এনজিও বাংলাদেশের সব স্থানে কাজ করছে। বর্তমানে তাদের ৬৪ জেলায় ৪৬৫ উপজেলাতেই শাখা রয়েছে। উদ্দীপনের সারা দেশে মোট ৯৪১ টি শাখা রয়েছে। উদ্দীপ্পন এনজিও এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে দারিদ্র বিমোচন ও একটি বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থা সৃষ্টি করা। অর্থাৎ তারা মূলত অবহেলিত ও গরিব জনগোষ্ঠীকে আর্থিকভাবে সহায়তা করে। এরা দরিদ্র নারীদেরকে সাধারণত অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। [ব্র্যাক এনজিও লোন পদ্ধতি]
উদ্দীপন এনজিও লোন সম্পর্কে, কি কি ধরণের লোন নেওয়া যায়?
উদ্দীপন বেশ কয়েক ধরণের লোন প্রদান করে থাকে। নিম্নে কয়েকটি ঋণ প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করা হলো।
জাগরণ:
এটি বাংলাদেশের ৪০ জেলার ৩২১ টি শাখায় প্রদান করা হয়ে থাকে। মূলত গ্রামের বাছাইকৃত দরিদ্র সদস্যদেরে যাদের অধিকাংশই নারী তাদের এ ঋণ প্রদান করা হয়। সেসকল সদস্যদের আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন, তাদের কর্মসংস্থান ও উপার্জনমূলক কার্যক্রমে সহায়তা করতে এ ঋণ প্রদান করা হয়। এই প্রকল্পের দ্বারা সর্বোচ্চ ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত লোন নিতে পারেন।
সুফলন ঋণ কার্যক্রম:
এটি একটি কৃষিভিত্তিক ঋণ প্রকল্প। বর্তমানে ‘সুফলন’ ঋণ কার্যক্রমটি বাংলাদেশের ৩১ টি জেলার ২৩১ টি শাখায় প্রদান করা হয়ে থাকে। এই ঋণ মূলত সেসকল গরিব ব্যক্তিকে দেওয়া হবে যারা কৃষির সাথে সম্পৃক্ত ভা কৃষিকে পেশা হিসেবে মনে করেন। ঋণ মৌসুম ভেদে বিভিন্ন কৃষি বিষয়ক কার্যক্রমের উপর ভিত্তি করে দেওয়া হয় যেমন: শস্য, মৎস সম্পদ, প্রাণী সম্পদ, কৃষি যন্ত্রপাতি, বিশেষায়িত কৃষি ইত্যাদি। তারা আপনাকে পরামর্শ দিয়েও সহায়তা করতে পারে। আপনার আর্থিক ও সামাজিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে আপনি সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা ঋণ পেতে পারেন।
বুনিয়াদ ঋণ কার্যক্রম:
বর্তমানে বাংলাদেশের ২০ টি জেলার ১৩০ টি শাখায় ‘বুনিয়াদ’ ঋণ কার্যক্রম থেকে ঋণ প্রদান করা হচ্ছে। প্রধানত অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের মূল ধারায় নিয়ে আসার জন্য এটি একটি ফ্লেক্সিবেল ঋণ প্রকল্প। এই কর্মসূচির মূল উদ্দেশ হলো ঋণগ্রহীতাদের আয়বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়নে সহায়তা করার মাধ্যমে তাদের স্থায়ীত্বশীল উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাওয়া।
তারা ঋণগ্রহীতাকে নমনীয় ঋণ, আয়বৃদ্ধিমূলক কর্মসূচি বাস্তবায়নে ঋণ, দূর্যোগ ব্যবস্থাপনাকালীণ ব্যয় বাহনের জন্য ঋণ, প্রাথিমিক স্বাস্থ্যসেবা, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা, শিক্ষা সহায়তা বৃত্তি, পুষ্টি সহায়তা, আইজিও প্রতিষ্ঠার জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং অন্যান্য সক্ষমতার জন্য ঋণ প্রদান করা হয়ে থাকে। ঋণের পরিমাণ সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
এসএমপি:
এসএমপি এর পূর্ণ অর্থ হলো ‘স্মল এন্ড মার্জিনাল সাইজড ফারর্মাস এগ্রিকালচারাল প্রোডাক্টিভিটি ইমপ্রোভমেন্ট এন্ড ডাইভারসিফিকেশন ফাইন্যান্সিং প্রোজেক্ট’। এককথায় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকরা এই ঋণ প্রকল্পের দ্বারা ঋণ পাবে। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন, কর্মসংস্থানের সৃষ্টি ও কৃষি বহুমুখীকরণের উদ্দেশ্য এই ঋণ দেওয়া হয়।
এই ঋণ প্রদানে উদ্দীপনকে বাংলাদেশ বতাংক থেকে সাহায্য দেওয়া হয়। ২০১৫ সাল থেকে বাংলাদেশের ১৪ টি জেলার ৭৯ টি শাখার আওতাধীন ক্ষুদ্র কৃষকরা এই ঋণের আওতাভুক্ত। ঋণের সীমা ২ লক্ষ টাকা। ঋণ সহায়তার পাশাপাশি তারা আপনাকে কারিগরি সহায়তাও দিবে। কৃষির মোট ৩ সেক্টর যেমন শস্য, প্রাণীসম্পদ ও কৃষি যন্ত্রপাতির জন্য এ লোন প্রদান করা হয়। ঋণের হার ১৯% হতে পারে।
লিফট:
‘Learning and Innovation Fund to Test New Ideas’ সংক্ষেপে ‘লিফট’ ঋণ প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত হবে বাংলাদেশ অত্যন্ত দুর্যোগপূর্ণ অঞ্চলগুলোর জনগণ যারা প্রায়ই নদীভাঙনে বাড়ি – খাবার সব হারিয়েছে তারা। ঋণের সর্বোচ্চ সীমা ৫০ হাজার টাকা।
উদ্দীপন এনজিও থেকে কারা লোন পাবেন?
উদ্দীপন এনজিও থেকে লোন পাওয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে। এছাড়া কিছু ঋণ প্রকল্পে তাদের আরো কিছু প্রয়োজন হয়। যেমন: কিছু ঋণ শুধুমাত্র অত্যাধিক দুর্যোগপ্রবণ এলাকার জন্য। কিছু ঋণ রয়েছে যা মূলত নারীদেরকেই বেশি দেওয়া হয়। আবার কিছু ঋণ প্রকল্প রয়েছে যেগুলো কৃষি ভিত্তিক অর্থাৎ শুধু কৃষকরা কিংবা যারা কৃষির সাথে জড়িত শুধু তারাই এ ঋণ পাবেন। আপনি কোন কোন ঋণের যোগ্য বা আপনি যে ঋণ পেতে চান আপনি তার যোগ্য কিনা তা জানতে আপনি তাদের শাখায় গিয়ে যোগাযোগ করতে পারেন।
উদ্দীপন থেকে ঋণ নেওয়ার জন্য কি কি কাগজপত্র প্রয়োজন?
বিভিন্ন ঋণ প্রকল্পের জন্য বিভিন্ন ধরণের কাগজ লাগতে পারে। যেমন আপনি আপনার ব্যবসার জন্য ঋণ নিলে আপনার ব্যবসা সংক্রান্ত কিছু কাগজপত্র জমা দেওয়া লাগতে পারে। আপনার ঠিক কি কাগজপতর লাগবে তা জানতে তাদের সাথে যোগাযোগ করুন। কিন্তু যেকোনো ঋণেই আপনার জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি দিতে হবে। আর আপনার পাসপোর্ট সাইজের ছবি দিতে হবে।
উদ্দীপন এনজিও এর প্রধান কার্যালয়
বাড়ি নম্বর – ০৯, রোড নং- ০১, ব্লক -এফ
জনতা কো-অপারেটিভ হাউসিং সোসাইটি লিমিটেড, রিং রোড, আদাবর, ঢাকা
উদ্দীপন বিভাগীয় অফিসের ঠিকানা:
চট্টগ্রাম: হাউজ- চাঁদগাও আবাসিক এলাকা,ব্লক- বি, রোড নং-১১,বাড়ি নং- ২৬৮।
খুলনা: মাজগানি আর/এ, রোড নং-১৪, বয়রা, খুলনা।
সিলেট: শাহজালাল উপশহর (শ্রোভাশ্রম ) -বাড়ী নং-২/১ জে-ব্লক, লাইন রোড, সিলেট।
রাজশাহী: বাড়ী নং ৫২৬, নর্দান মোড়, বরেন্দ্র
বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন, মানিক মিয়া রোড, তালাইমারী বোয়ালিয়া, রাজশাহী।
রংপুর: ইসলাম ভিলা,বাড়ী নং ২৬৯,রোড নং-০৪, গুরাতীপারা, (সিটি করপোরেশন), রংপুর।
বরিশাল: উদ্দীপন,বরিশাল জোনাল অফিস,সি এন্ড বি রোড, কাজী ভবন,কাজীপাড়া, বরিশাল।
ময়মনসিংহ: ব্রহ্মপুত্র আবাসিক এলাকা, মাসকান্দা নতুন বাজার,ডাকঘর-মাসকান্দা, ময়মনসিংহ সদর, ময়মনসিংহ।
পোস্টটি কেমন লাগলো দয়া করে কমেন্টে জানাবেন, যদি ভাল লেগে থাকে তাহলে অবশ্যয় শেয়ার করবেন, পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। এমন সব দারুন দারুন পোস্ট পেতে Grathor এর সাথেই থাকুন এবং গ্রাথোর ফেসবুক পেইজ ও ফেসবুক গ্রুপ এ যুক্ত থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।