প্রতি ঈদের ন্যায় এবারের ঈদেও সড়কে ঝরে পড়ল অর্ধশতাধিক তাজা প্রাণ। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী ঈদের আগে ও পরে মোট ৫দিনে দেশের বিভিন্ন জেলায় সড়ক দূর্ঘটনায় ৬০-এরও অধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন কয়েকশ মানুষ। চিরতরে পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয় শতাধিক হতভাগ্য মানুষকে। গত বছরের ঈদুল আজহাতেও নিহত হয়েছিল ৬০জন। প্রতিদিন পত্রিকার পাতা উল্টালেই সড়ক দূর্ঘটনার এসব খবর আমাদের পড়তে হয়। টিভিতে চোখ রাখলেই বাস উল্টে খাদে পড়ার দৃশ্য, বাস-ট্রাক মুখোমুখি সংঘর্ষের দৃশ্য, বিকৃত হয়ে যাওয়া লাশের দৃশ্য, মৃত দেহের পাশে প্রিয়জনদের চিৎকার আর আর্তনাদের দৃশ্য আমাদের দেখতে হয়। যেসব যাত্রী ঈদের আগে নিহত হয়েছেন তাদের গন্তব্য ছিল প্রিয় ভিটেমাটি। উদ্দেশ্য ছিল প্রিয়জনদের সাথে ভাগ করে নিবে ঈদের আনন্দ। কিন্তু না। তার আগেই অনিরাপদ সড়কের ঘাতক যানবাহন নিভিয়ে দিয়েছে তাদের জীবন প্রদ্বীপ। যেসব হতভাগ্য ঈদের পর নিহত হয়েছেন তারা ফিরছিলেন কর্মক্ষেত্রে। জীবন জীবিকার তাগিদে ঝাপিয়ে পড়তে চেয়েছিলেন নিজের কর্মযজ্ঞে। কিন্তু তা আর তাদের কপালে জুটেনি। অপ্রত্যাশিত সড়ক দূর্ঘটনা ছিটকে ফেলে দিয়েছে তাদের জীবন থেকে। নিহতদের মধ্যে কেউ ছিল পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। যার বিদায়ে পরিবারের বেঁচে থাকা মানুষগুলো আজ চরম উৎকণ্ঠায়। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে শোকে বিহবল তারা। কীভাবে চলবে সংসার, কে জোগাবে আহার, কে দেবে ভরণপোষণ সাথে রয়েছে সেই চিন্তাও। নিহতদের মধ্যে কেউ ছিলেন সদ্য বিবাহিত দম্পতি। কারো কারো হাতে তখনও শোভা পাচ্ছিল মেহেদির টকটকে লাল আল্পনা। শুরুর আগেই থেমে গেল তাদের দাম্পত্যের স্বপ্নীল যাত্রা।
নিহতদের মধ্যে কেউ কেউ ছিলেন শিক্ষার্থী। হৃদয়ে ছিল স্বপ্নপূরণের অদম্য বাসনা। সম্ভাবনায় ভরপুর ছিল ভবিষ্যৎ। প্রতিষ্ঠিত হয়ে সংসারের হাল ধরার কথা ছিল অনেকের। কিন্তু বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে তাদের স্বপ্ন মিশে গেল রাজপথে। কিন্তু প্রশ্ন হলো আর কতদিন চলবে এ মৃত্যুর মিছিল। আর কবে লাগাম টেনে ধরা যাবে এ অপ্রত্যাশিত মৃত্যুর। এর কোনো প্রতিকার নেই? একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে বছরে সড়ক দূর্ঘটনায় কমবেশি ৮০০০ লোক মৃত্যুবরণ করেন। আর আহত হয়ে দূবির্ষহ জীবনযাপন করেন আরো কয়েক হাজার। এ সকল করুণ মৃত্যুর দায়ভার কার? সংশ্লিষ্ট এক গবেষণায় দেখা যায় ৫৩ শতাংশ সড়ক দূর্ঘটনা সংঘটিত হয় মাত্রাতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানোর কারণে। আর ৩৩ শতাংশ সড়ক দূর্ঘটনা ঘটে থাকে চালকদের বেপরোয়া গতির মানসিকতার কারণে। অর্থাৎ ৯০ শতাংশ দূর্ঘটনার জন্য চালকরাই দায়ী। এছাড়াও অদক্ষ চালক, ওভারটেকিং তথা আগে যাওয়ার মানসিকতা, রাস্তার বেহাল অবস্থা, ট্রাফিক আইন না মানা, পথচারীদের অসচেতনতাসহ নানা কারণে প্রতিদিন দূর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন মানুষ। এ অবস্থা আজ ভয়াবহ রুপ ধারণ করেছে। বাইরে বের হওয়া মানুষটা আদৌ অক্ষত অবস্থায় ঘরে ফিরতে পারবেন কি না তা নিয়ে চিন্তায় থাকতে হয় পরিবারের লোকদের। এ অবস্থার পরিত্রাণ জরুরি। চালকদের দক্ষতা, সচেতনতা, সেবার মনোভাব, ট্রাফিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধা, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন না চালানো, সড়কের পর্যাপ্ত সংস্কার, পথচারীদের ট্রাফিক আইন মেনে চলা ও সচেতনতাই পারে দানবরূপী এই সড়ক দূর্ঘটনার লাগাম টেনে ধরতে।
বাংলাদেশের তথ্য অধিকার আইন ।
বাংলাদেশের তথ্য অধিকার আইন । গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে চিন্তা , বিবেক ও বাকস্বাধীনতা নাগরিকের অন্যতম মৌলিক অধিকার হিসেবে...