ভুমিকা প্রফেসর কাজী মো. নুরুল ইসলাম ফারুকী স্যার বাংলাদেশে ‘বাণিজ্য শিক্ষা’ প্রসারের ক্ষেত্রে অন্যতম ব্যক্তিত্ব । যিনি ‘ফারুকী স্যার’ নামেই সুপরিচিত। বিশেষায়িত শিক্ষার মান্নোয়নে যারা চিন্তা ও কর্ম বিকাশের মাধ্যমে জীবনাবসান পর্যন্ত নিজেকে ব্রত রাখতে চান তাঁদেরই একজন ফারুকী স্যার । শিক্ষা বিস্তারে কেউ গ্রামকে কেউবা শহরকে বেছে নিলেও ফারুকী স্যার ছিলেন ব্যতিক্রমী। তিনি শহরের পর গ্রামেও শিক্ষার আলোর প্রদীপ জ্বেলেছেন । গ্রাম প্রধান দেশে গ্রামের উন্নতিই দেশের উন্নয়নের অন্যতম চাবিকাঠি। রাজধানী দেশের প্রশাসনিক কাঠামোর কেন্দ্র বিন্দু বিধায় শিক্ষার উন্নয়নেও রাজধানীর কথাই প্রথম বিবেচনায় ধরা হয় । সৃজনশীল ব্যক্তিত্ব কাজী ফারুকী রাজধানী ঢাকায় প্রতিষ্ঠা করেন বাণিজ্য শিক্ষায় বিশেষায়িত ‘ঢাকা কমার্স কলেজ’ ।
যা প্রতিষ্ঠার মাত্র ৭ বছরে ১ম বার এবং এর ৬ বছর পরে ২য় বার অর্থাৎ ১৩ বছরেই দু’দুবার জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ কলেজের পুরস্কার অর্জন করেন। আবার ২০১৫ ও ২০১৬ সালে পর পর দুবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রেডিং-এ দেশের সেরা বেসরকারি কলেজ হিসেবে প্রথম স্থান অর্জন করে। তিনি বিধি মোতাবেক সবশেষ অবসরের পরও অবসরকালীন ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সুখ-শান্তিকে বিসর্জন দিয়ে গ্রামেও শিক্ষার আলো ছড়াতে পৈত্রিক বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করেন ‘প্রিন্সিপাল কাজী ফারুকী স্কুল অ্যান্ড কলেজ’ । আমি ঢাকা কমার্স কলেজের শুরু হতে ২২ বছর সরাসরি ফারুকী স্যারের তত্ত্বাবধানে কাজ করে বাস্তবে দেখা সৃজনশীলতায় তাঁর বিকশিত স্মৃতি কখনও ভুলতে পারিনি। বিশেষ করে ফারুকী স্যারের শিক্ষা বিস্তারে সৃজনশীলতার দিকই বেশি স্মরণে পড়ে। এ থেকেই লেখাটির প্রেরণা পাই।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ার উদ্যোগ ও প্রতিষ্ঠায় তাঁর সৃজনশীলতা: ঢাকা কমার্স কলেজ প্রতিষ্ঠাকালীন তথ্য থেকে জানা যায় দীর্ঘ দিন কলেজ প্রতিষ্ঠায় শুধু আলাপ-আলোচনাই হয়েছে, তেমন কোনো কাজ হয়নি, সবাই যেন আরো ঝিমিয়ে পড়েছে। তখন ফারুকী স্যার ঢাকা কলেজে ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন। এমতাবস্থায় ফারুকী স্যার দৃঢ়ভাবে বললেন, “এখন থেকেই নতুন কলেজ প্রতিষ্ঠার বাস্তব কাজ শুরু হবে। ইন্শাল্লাহ অল্প দিনের মধ্যে ঢাকা কলেজ থেকে নতুন যে কলেজ করবো সেখানে চলে আসবো। প্রয়োজনে চাকুরি ছেড়েই চলে আসবো ।” প্রথমত ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৯ রাতে ফারুকী স্যারের বাসায় কলেজের প্রপেক্টাস লেখার কাজ শুরু করা হয় ।
ফারুকী স্যারের বাসায় কয়েকটা কলেজের প্রপেক্টাস থাকা সত্ত্বেও স্যার বললেন, এগুলো দিয়ে আমাদের তেমন কাজ হবে না। কারণ আমরা ঢাকা কমার্স কলেজের প্রসপেক্টাস যেটা করবো, অন্যান্য কলেজ থেকে সেটা হবে একে বারে ব্যতিক্রম । এভাবে ফারুকী স্যারের সব কাজে ছিল সৃজনশীলতা। তিনি যে সৃজনশীল ব্যক্তিত্ব ছিলেন তাঁর প্রায় সব কাজেই এর প্রমাণ মিলে। ঢাকা কমার্স কলেজে ফারুকী স্যারের সৃজনশীলতার সাক্ষ বহন করবে যুগ যুগান্তর ধরে । যেমন : কলেজে লিট ব্যবহার বিরল অথচ তাঁর কলেজে প্রতিটি ভবনে লিফ্ট ব্যবহার হচ্ছে। তাছাড়া নিজস্ব বৈদ্যুতিক সাব স্টেশন, ডিপ টিউব অয়েল স্থাপন, রুপগার্ডেন, বিশাল অডিটোরিয়াম, সর্বত্র ইন্টারকম ব্যবহার, আধুনিক তথ্য প্রযুক্তিসহ অটোমেশন সিস্টেম ইত্যাদি ।
গ্রামের প্রতিষ্ঠানেও ফারুকী স্যারের সৃজনশীলতা লক্ষণীয়: ঢাকা কমার্স কলেজ প্রতিষ্ঠার সময় স্যার বলতেন, শিক্ষার্থীরা উন্নত মানের শিক্ষার জন্য এদেশ থেকে যেন বিদেশ যেতে না হয় বরং বিদেশ থেকে যেন এদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়তে আসে আমরা সে মানের প্রতিষ্ঠান করবো বাংলাদেশেই। তদ্রুপ গ্রামেও উন্নত মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলে শহর থেকে গ্রামমূখী হওয়া অবাস্তব নয় । সে মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তিনি নিজ গ্রামেও প্রতিষ্ঠা করে দেখিয়েছেন। আজকে তাঁর গ্রামে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক সুদুর প্রবাসে থেকেও তার সস্তানের প্রতিদিনের উপস্থিতি ও অনুপস্থিতি তথ্য তাৎক্ষণিক জানতে পারে । বর্তমান সৃজনশীল শিক্ষা ব্যবস্থার ন্যায় সৃজনশীলতা তাঁর বাস্তব জীবনে অনেক রেখেছেন।
গ্রামেও দৃষ্টিনন্দন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: সৃজনশীলতার অন্যতম ভাস্বর ফারুকী স্যার তাঁর নিজ গ্রাম রাখালিয়ায় বাপ-দাদার পৈত্রিক ভূমিতে নারিকেল-সুপারি গাছ কেটে প্রতিষ্ঠিত, “প্রিন্সিপাল কাজী ফারুকী স্কুল অ্যান্ড কলেজ’। যা সত্যিই দেখার মতো প্রতিষ্ঠান। আমি শহরে অনেককে বলেছি, পিকনিক স্পটে অনেক দূর-দুরান্ত থেকে মানুষ আসে চিত্ত বিনোদনের জন্য। সেখান হয়তো বন জঙ্গলের কিছু দৃশ্য দেখতে পারে। অথচ যদি মন চায় কাজী ফারুকী স্যারের প্রতিষ্ঠিত গ্রামের কলেজে পিকনিক স্পট মনে করে গেলে অন্যান্য স্পট থেকে বেশ কিছু ব্যতিক্রমী দৃশ্য অবলোকন করা যাবে অনায়াসে । যা সৃজনশীল ব্যক্তিত্ব কাজী ফারুকী স্যারের অতিশয় বৃদ্ধকালেও তারুণ্যের ন্যায় ক্ষিপ্র গতিতে স্বল্প স্থানে স্বল্প সময়ে গড়ে তোলা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এর দৃষ্টিনন্দন কারুকাজ ও তার আশ পাশের গ্রামের পাখি ডাকা ছায়ায় ঢাকা সবুজের সমারোহ।
নারীদের উচ্চশিক্ষা অর্জনে দৃষ্টিভঙ্গি: বিভিন্ন প্রতিকুলতার মুখে গ্রামের মেয়েদের উচ্চশিক্ষা লাভে ব্যর্থতা অনিবার্য হয়ে দেখা দেয় যা অতিক্রম করে অনেকের পক্ষেই উচ্চশিক্ষা অর্জনের সুযোগ হয় না। একজন সৃজন শীল ব্যক্তিত্বের দূর দৃষ্টিভঙ্গির ফলে ছেলেসহ বিশেষ করে মেয়েদের উচ্চশিক্ষা অর্জনের লক্ষ্যে প্রত্যন্ত গ্রামে উচ্চশিক্ষা লাভের মান সম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা হয়। যাতে দূর-দুরান্তে যাওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের আর্থিক ব্যয় তুলনামূলকভাবে সাশ্রয় হতে পারে।
উপসংহার : শিক্ষার্থীদের জ্ঞান অর্জনে সহজ সুযোগ লাভের বিবেচনায় শিক্ষানুরাগী ফারুকী স্যার জীবন সায়াহ্নে এসেও তিনি কাজের মাধ্যমে তাঁর সুপ্ত সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটিয়ে যাচ্ছেন । ফারুকী স্যারের অনুরূপ আরো শিক্ষানুরাগি বৃত্তশালী ব্যক্তিবর্গ এমন মহৎ উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসলে শিক্ষাক্ষেত্র থেকে অকালে ঝরে যাওয়া ছাত্র-ছাত্রীগণ উচ্চশিক্ষা লাভে অধিকতর অগ্রসর হওয়ার সুযোগ পাবে। পরিশেষে মহান আল্লাহর কাছে ফারুকী স্যারের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি এর সাথে ‘গুবাক তরুর’ সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে আজকের লেখার ইতিরেখা টানছি ।