মন্টু। বয়স ৮/৯ বছর। মন্টুর বাবা নেই। কয়েক মাস আগে ওর বাবা মারা গেছে। মন্টু ওর মা আর চার বছরের বোন ফুলির সাথে বস্তির একটাা ছোট্ট ঘরে থাকে। ওর বাবা মারা যাবার পর ওর মা সংসারের ভার বহন করতে কিছুদিন একটা গার্মেন্টসে কাজ করেছিলেন, কিন্তু তিনিও গার্মেন্টসের মেশিন এর যান্ত্রিক ত্রুটির কবলে পড়ে মারাত্মকভাবে আহত হন, এবং পরে কাজকর্ম করতে অক্ষম হয়ে যান। তাই সংসারের আয় রোজগারের সম্পূর্ণ ভার এখন মনটুর উপর। যে বয়সে একটা শিশুর খেলার সময়, আর স্কুলে যাওয়ার কথা সেই বয়সেই মন্টুকে হতে হয়েছে কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন।
কিভাবে তাদের দুবেলা দু’মুঠো ভাতের ব্যবস্থা হবে এখন মন্টুর চিন্তা-চেতনায় শুধু তাই খেলে। সুর্য উঠার সাথে সাথে ঘর থেকে কাজের জন্য মন্টুকে বের হতে হয়। মন্টু প্রথমে ভিক্ষা করে আয় করতো। কিন্তু এখন সে আর ভিক্ষা করেনা। দিনের অর্ধেক সময় সে একটা কারখানায় কাজ করে। আর বাকি সময় সে পার্কে পার্কে চা বিক্রি করে। কখনো কখনো সেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফুল বিক্রি করে। একটা ফুল বিক্রি করতে ওর অনেক পরিশ্রম করতে হয়। যদি কেউ একটা ফুল নেয়ও প্রায় সময়ই ফুলের দাম না দিয়ে চলে যায়। কিন্তু অসহায় মন্টুর কিছুই করার নেই। ওর বোনটাও মাঝেমধ্যে ওর সাথে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফুল বিক্রি করে। আজকে হঠাৎ মন্টুর গায়ে ভীষণ জ্বর এসেছে। আগের দিন অতিরিক্ত কাজ করতে হয়েছে। তাই বোধহয় জ্বর এসেছে। আজও কাজে যেতে পারব না বলে সকাল থেকে না খেয়েই ওদের তিনজনকে থাকতে হয়েছে। মন্টুর মা অসুস্থ হওয়া সত্বেও চেষ্টা করছে ছেলের সেবা করার জন্য। ছোট বোন পাশে বসে মন্টুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু মনটুর জ্বর কমছে না। ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ কেনার মত পয়সাও ওদের নেই। মন্টুর মা ভাবলেন আস্তে আস্তে জ্বর ছেড়ে যাবে। কিন্তু ছাড়লো না। মা পাশের ঘর থেকে ফুলিকে দিয়ে চাল দাঁড় করিয়ে এনে ভাত খাওয়ার ব্যবস্থা করলেন। মন্টুকে খাওয়াতে চাইলেন কিন্তু মন্টু খেতে পারছিলনা। রাতের দিকে জ্বর একটু কমেছে। জ্বর ছেড়ে যাচ্ছে, এই ভেবে মন্টুর মা আর বোন ঘুমিয়ে পড়ল। মন্টু পাশেই ছিল, হঠাৎ গভীর রাতে মন্টুর জ্বর বেড়ে গেল। মন্টুর মা টের পেয়ে ঘুম থেকে উঠে মাথায় পানি ঢালতে লাগলেন। কিন্তু মন্টুর জ্বর কমলোনা। অবশেষে ভোর রাতে কিছু বুঝে ওঠার আগেই মন্টুর জীবন প্রদীপ নিভে গেল।
এভাবে অকালে ঝরে যায় আমাদের দেশের কত নিষ্পাপ সম্ভাবনাময় শিশু,যারা জীবনের সংজ্ঞা জানার আগেই বিদায় নেয় পৃথিবী থেকে। অথচ আমরা সবাই মিলে যদি এদের অধিকার আদায়ে সচেষ্ট হই, এদের দিকে একটু সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়, তাহলে হয়তো এরা আর অকালে ঝরে আমাদের নিরাশ করবে না। জাতির প্রদীপ ও নিববেনা।