সুপ্রিয় গ্রাথোর পাঠক ভিউয়ার্স বন্ধুগণ, আজ আমি একটি ব্যতিক্রমধর্মী লেখা লিখতে যাচ্ছি। আশা করি লেখাটি পড়বেন এবং যারা শিক্ষার সাথে জড়িত বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট তাদের জন্য লেখাটি বিশেষ উপযোগী হবে। আমরা যারা শিক্ষক নিয়মিত ক্লাশে পাঠদান করতে হয়। যারা শুধু সাধারণ পাঠদান করেন তাদের পাঠদান পদ্ধতি তেমন ফলপ্রসূ হয় না। আর বর্তমান যুগ ডিজিটাল যুগ। এখন ডিজিটাল বা মাল্টিমিডিয়া পদ্ধতিতে পাঠ উপস্থাপন করতে হয়। আর এর জন্য প্রয়োজন হয় সিস্টেমেটিক পাঠ উপস্থাপন পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে পাঠদান করলে পাঠ উপস্থাপন থেকে শুরু করে পাঠ সমাপ্তি পর্যন্ত একটিসিস্টেমেটিক ধারাবাহিক পাঠ উপস্থাপন হয় বলে পাঠটি যথেষ্ট উপভোগ্য এবং ফলপ্রসূ হয়ে থাকে। তাই এই পাঠ উপস্থাপন পদ্ধতি ব্যবহার করার জন্য কর্তৃপক্ষ থেকেও নির্দেশ প্রদান করা হয়। তাই আজ আমি এই পদ্ধতিতে পাঠদানের বিষয়ে আমার এই আলোচনার মাধ্যমে উপস্থাপন করার চেষ্টা করব। আশা করি যারা প্রাথমিক শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট তাদের যথেষ্ট উপকার হবে।
তো চলুন ডিজিটাল বা মাল্টিমিডিয়া পদ্ধতিতে পাঠ উপস্থাপন করার মূল আলোচনায়।
একটি আদর্শ ডিজিটাল কন্টেন্ট ব্যবহার করে শ্রেণিতে পাঠ উপস্থাপন ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরা হলঃ-
নমুনা পাঠ পরিকল্পনা-
১। প্রয়োজনীয় সকল উপকরন সাথে নিয়ে হাসিমুখে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করে শিক্ষার্থীদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে করতে কম্পিউটার ও মাল্টিমিডিয়া অন করব।
২। ক্লাসে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আকর্ষন ও পূর্বজ্ঞান যাচাই করার জন্য পাঠ প্রস্তুতিমূলক ১/২ টি ইমেজ অথবা ১০/১৫ সেকেণ্ডের একটি ছোট ভিডিও প্রদর্শন ক রব।
৩। ছোট ছোট ২/১ একটি প্রশ্নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মুখ থেকে আজকের আলোচ্য বিষয়ের টপিক টি বের করে আনব। পাঠের শিরোনামসহ পৃষ্ঠা নং সম্বলিত স্লাইড প্রদর্শন করব। একই সাথে পাঠের শিরোনাম বোর্ডের মাঝখানে বড় করে লিখে দেব।
৪। পাঠের বিষয়বস্তুর ধারাবাহিকতা অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের পাঠ সংশ্লিষ্ট ইমেজ/এনিমেশন/ভিডিও ইত্যাদি দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠে সম্পৃক্ত করব এবং বিভিন্ন প্রশ্ন করে কাজ দিয়ে চিন্তা করার সুযোগ সৃষ্টি করে মূল পাঠ্য বিষয়টি সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করব। শিক্ষার্থীদের সক্রিয়তা বৃদ্ধির জন্য ২/১ জন ছাত্র/ছাত্রীকে স্ক্রীনের সামনে এনে ইমেজ/ডায়াগ্রাম/ভিডিও এর বিশেষ কোন অংশ চিহ্নিত/বর্ণনা করতে বলব।
৫। প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে প্রাপ্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গুলো বোর্ডে লিখে দেব এবং শিক্ষার্থীদেরকেও KLP(Key Learning Points) গুলো খাতায় লিখতে বলব।
৬। বিষয়বস্তুর কোন বিশেষ অংশ শিক্ষার্থীদের হৃদয়অংগম করার জন্য শিক্ষার্থীদেরকে দিয়ে যে কোন একটি পাঠ্যাংশ ২/৩ মিনিটের জন্য ভূমিকাভিনয়/প্রাকটিক্যাল কাজ করতে দেব।
৭। কর্মপত্র/উদ্দীপক-এর স্লাইড দিয়ে শিক্ষার্থীদের জোড়া/দলগত কাজ সুস্পষ্ট নির্দেশনা সহকারে বন্টন করে দিয়ে করতে বলব। কাজটিতে চিন্তাশক্তি প্রয়োগের ক্ষেত্র রাখতে হবে।
৮। শিক্ষার্থীদের কাজ চলাকালে ঘুরে ঘুরে প্রতিটি জোড়া/দলগত কাজ তত্ত্বাবধান করব। প্রয়োজনে Clue দিব উত্তর খুজে বের করার জন্য।
৯। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত উত্তরগুলো বোর্ডে লিখে দিব এবং সবাইকে সেগুলো যাচাই করে নিজের উত্তর গুলো সঠিক করতে সাহায্য করব।
১০। আজকের আলোচ্য বিষয়টি প্রত্যেক শিক্ষার্থী বুঝতে সক্ষম হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন প্রশ্ন করে উত্তর জেনে নেব।
১১। আজকের পাঠের শিখন ফল অর্জিত হল কিনা ইমেজ/এনিমেশন/ভিডিও ইত্যাদি দিয়ে ছোট ছোট প্রশ্ন করে উত্তর আদায় করে নেব।
১২। একটি চিন্তন মূলক কাজ/প্রশ্ন/প্রজেক্ট দিয়ে বাড়ির কাজ দেব।
১৩। ধন্যবাদের আকর্ষনীয় স্লাইড দেখিয়ে পাঠ সমাপ্তি ঘোষনা করব।
সুপ্রিয় পাঠক আশা করি উপরের বর্ণিত ধাপ গুলো অনুসরণ করে পাঠ উপস্থাপন করলে পাঠ টি উপভোগ্য এবং আনন্দ দায়ক হতে বাধ্য।
লেখাটি পড়ে কেমন লাগলো মতামত জানাবেন। গ্রাথোর কর্তৃপক্ষ ভাইয়েরা বড়ই কৃপন। অনেক কষ্ট করে আমাদের লিখতে হয়। একটা লেখা লিখে মাত্র ১০/- দশ টাকা দেন। তাও আবার ১০০০/- টাকা না হলে উঠানো যায় না। অনেক দিন কষ্ট করেও এখনো এক হাজার রোজগার করতে পারিনি। অথচ গ্রাথোরের পেছনে অনেক সময় ব্যয় করেছি। তাই পাঠকেরা একটু সহানুভূতির সাথে এক জন আরেক জনের লেখা পড়ে সহযোগিতা করি তাহলে প্রত্যেকেরই উপকার হবে। আর আমাদের প্রত্যকের আয় বাড়বে। অনেক লিখলাম। সবাইকে ধন্যবাদ।