এক কৃষকের বাড়ি ছিল একটি বনের ধার ঘেঁষে। কৃষকের কাছে বেশ কয়েকটি ছাগল ছিল। বোনের কাছে হওয়ায় প্রায়ই হিংস্র জীব জানোয়ার তার বাড়ির আশেপাশে আসত তার পালিত ছাগলগুলোকে স্বীকার করার জন্য। এজন্য কৃষক বেশ চিন্তিত থাকতো। আস্তে আস্তে তার বাড়িটি পাকা করে ফেলল এবং চারদিকে ভালো করে বেড়া করে দিল। ছাগলগুলো এখন নিশ্চিন্তে বাড়িতে থাকতে পারতো।
অপরদিকে বাড়ির বাইরে হিংস্র জীবজন্তুরা এসে হতাশ হয়ে ফিরে যেত। এক শিয়ালের প্রচুর লোভ ছিল ছাগলগুলোর জন্য। কিন্তু সে এখন ছাগলগুলোকে আর শিকার করতে পারবে না। তবুও সে প্রতিদিন চেষ্টা করত যদি কাউকে বাগে পায়। কিন্তু সে প্রতিনিয়ত ও হতাশ হয়ে ফিরে যেত। একদিন বনে এক নেকড়ের সাথে তার দেখা হয়। নেকড়ে শিয়ালকে দেখে বলে, কিহে, তোমাকে বিষন্ন দেখাচ্ছে কেন? শেয়াল বলল, বনের কাছে যে ছাগলের খামার ছিল তা পাকা করে দেওয়া হয়েছে।
সে যে ছাগলগুলো কে শিকার করে খাওয়ার চিন্তা করেছিল তা ভেস্তে গিয়েছে। নেকড়ে বলল, এত সহজে হাল ছেড়ে দিলি। শিয়াল তাকে উত্তরে বলল, এত সহজে ছাড়ি নি ভাই। বিশ্বাস না হলে তুই গিয়ে দেখ। নেকড়েটি ওই খামারের কাছে গেল। সে দেখতে পেলো কৃষকের বাড়িটি পাকা। তার ছাদে কিছু ছাগলছানা লাফালাফি করছে। নেকড়ে প্রতিদিন এসে দেখে যেতো যে খামারে কি হচ্ছে। বড় ছাগল গুলো তাদের ছানাগুলোকে সবসময় সতর্ক থাকতে বলতো। তারা বলতো যে বাড়ির বাইরে গেলে সব সময় দলে থাকতে এবং দলছুট হয়ে না পড়তে।
ছাগলছানা গুলোর বয়স কম। খেলাধুলায় মত্ত থাকতেই তারা বেশি পছন্দ করত।বাইরের জীবজন্তু সম্পর্কে তাদের তেমন কোনো ধারণা ছিল না। একটি ছাগল ছানা ছিল বেশ উগ্র। সে ওদের কথার তেমন কোনো পাত্তা দিত না। একদিন সে দেয়ালের বাইরে একটি নেকড়ে কে দেখতে পেল। বাকি ছাগলছানা গুলোর কাছে গিয়ে বললো যে সে একটি নেকড়ে দেখতে পেয়েছে। সবাইকে সে ডেকে নিয়ে আসলো নেকড়ে টিকে দেখাতে। নেকড়ে তাদের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। যদিও সে দেয়ালের বাইরে তবুও তারা বুঝতে পারছিল যে নেকড়ের উদ্দেশ্য কি ছিল।
ওই ছাগল ছানা টিকেট দেখে চিৎকার করে বলে উঠলো, কিরে নেকড়ে, কার খোঁয়াড়ে চুরির মতলব করছিস? পরের জিনিস চুরি করার স্বভাবটা আর গেল না তোদের। কতদিন চুরি করে খাবি? আর এখন তো চাইলেও তোর মত পুঁচকে নেকড়ের দ্বারা এই ঘরে ঢোকা সম্ভব হবে না। তুই বরং বনের ঘাস লতাপাতা খাওয়া শুরু করে দে। তাই তোর মঙ্গল হবে। নেকড়েটি মুচকি হেসে কি যেন মনে করে সেখান থেকে বিদায় নিল। পরেরদিন হঠাৎ বেশ বড়োসড়ো একটা ঝড় উঠলো। কৃষক তাড়াতাড়ি ছাগলগুলোকে তাদের ঘরে প্রবেশ করিয়ে নিজ ঘরে অবস্থান নিল।
বজ্রপাতসহ বৃষ্টি হচ্ছিল। কিন্তু ছাগলগুলো চিন্তাহীনভাবে তাদের ঘরে অবস্থান নিয়েছিল। ঝড়ের বাতাসে খোয়াড়ের দরজাটি হঠাৎ করে খুলে গেল। কিন্তু ছাগলগুলোর ক্ষমতা ছিল না যে দরজাটির খিল এঁটে দেবে। হঠাৎ করে ঘরের সামনে তারা ওই নেকড়েকে দেখতে পেল। এতে ছাগলগুলোর গলা শুকিয়ে গেল। যে ছাগলছানাটি গতকাল নেকড়েকে গালমন্দ করেছিল সে থতমত খেয়ে খোয়ারের এক কোণে আশ্রয় নিল।
নেকড়েটি খোয়াড়ের সামনে আসলো এবং ছাগলগুলোর দিকে তাকিয়ে রইল এবং হাসতে শুরু করলো। হাসতে হাসতে সে ছাগলগুলো কে বলল, কালকের ওই পিচ্চি ছাগলটি কোথায়? তাকে আমার সামনে নিয়ে আসো। সবাই ধাক্কা দিয়ে হয়ে ছাগলকে বার করে দিল। ছাগলটি বুঝতে পারল আজ আর তার রক্ষে নেই। নেকড়েটি তার মুখ দিয়ে ছাগলের ঘাড়ে কামড় বসাল।
ছাগলটি ভাবল এই তার শেষ অবস্থা। পরে বুঝতে পারল নেকড়েটি তার শরীরে কোনো ক্ষত করে নি। নেকড়েটি তার মুখ সরিয়ে নিলো এবং পেছন ফিরে রওনা হল। ছাগলটি অবাক হল এবং জিজ্ঞেস করল, তুমি আমাকে মারলে না কেন? সে উত্তর দিল, আমি শুধু তোকে আমার পরিচয় জানাতে এসে ছিলাম মাত্র।