এই মানুষটির নাম জামাল, ছোট বেলা যখন মোক্তবে পড়তে যেতাম, দেখতাম একদম সকালে বড় বড় গাছের নিচ থেকে গাছের কাঠ কুঁড়িয়ে নিচ্ছেন। বড় রাস্তার বড় বড় গাছ গুলো এই মানুষটির জীবিকা নির্বাহের একমাত্র অবলম্বন। গায়ের জামাটা গত চার পাঁচ বছর দেখছি, কয়েকটা জায়গায় ছিড়ে গেছে, পরণের লুঙ্গিটার বয়সও হয়তো বছর তিনেক হবে।
এই যে মাথায় কাঠ গুলো দেখছেন, এগুলো সর্বোচ্চ এক’শ টাকা বিক্রি করবেন, তারপর.. হাতে থাকা পুটলি করে এক কেজি চাল কিনে ঘরে ফিরবেন। আগের মত ভার বয়ে চলতে পারেননা, শরীরের বয়স বেড়েছে, শক্তি কমেছে। কিন্তু পেটের ক্ষিদে কমেনি। বেঁচে থাকতে হলে খেতে হয়, খেতে হলে হেঁটে হেঁটে রাস্তার পাশ থেকে লাকড়ি গুলো কুঁড়াতে হয়।
কিন্তু কখনো কারো কাছে হাত পেতে ভিক্ষা নেননি, একবার জিজ্ঞেস করেছি ছেলে দেখেনা?, বলেছিলো ছেলে রিকশা চালায় নিজে চলতে পারেনা আমাকে কি দিবে? বুড়োবুড়ির কোনরকম দিন চলে যায়।
এই অল্প বয়সে কত রকমের মানুষ দেখলাম; কিন্তু এমন মানুষ খুব কম দেখেছি, কত মানুষ হাত পা থাকতেও ভিক্ষা করে। আবার কেউ এই গরীব মানুষ গুলোর মাথা মেরে খায়। হিংসা প্রতিহিংসায় জর্জরিত সমাজে এই মানুষটি অনুপ্রেরণার এক মহাকাব্য।
ছবি যখন তুলেছি তখন নিজের কথা ভাবছি, অপূর্ণতার কয়েক’শ পৃষ্টা গল্প আমার ফেসবুক নিউজফিড়ে পড়ে আছে; অসুস্থতার দোহায় দিয়ে এখনো নিজেকে শান্তনা দিই, কত মানুষের কর্মকে ছোট করে দেখি, কত নীতি কথায় কী-বোর্ড তুলোধনা করি। কত আফসোস আমার।
এই মানুষটির কর্ম শক্তি হয়তো এখনো আছে, অপারক শরীরের উর্ধ্বে গিয়ে এখনো বেঁচে থাকার সংগ্রাম করে যাচ্ছেন, কয়েকদিন পর হয়তো আর চলতে পারবেননা, তখন এই মানুষটির কি হবে? কে দেখবে? এই সমাজের সমাজপতিদের কত টাকা, পরিষ্কার জামার আড়ালে অমানুষের আস্তরণ, ওরা টাকার পিছনে ছুঁটছে, কেউ কাউকে নিচে নামিয়ে উপরে উঠতে ব্যস্ত, অথচ এই মানুষটি ব্যস্ত দু’বেলা ভাত খেয়ে বেঁচে থাকার।
আহ জীবন, হায়রে জীবন…