অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী
বাংলা নাম ঘৃতকুমারী। এর বৈজ্ঞানিক নাম অ্যালোভেরা। এটি সাধারণত একটি রসালো এলো পরিবারের উদ্ভিদ। অ্যালোভেরা দেখতে কাঁটাওয়ালা ক্যাকটাসের মত দেখতে হলেও এটি ক্যাকটাস নয়। এই উদ্ভিদের আদি নিবাস আফ্রিকার মরুভূমি অঞ্চল ও মাদাগাস্কার। অ্যালোভেরা অনেক উপকারী ভেষজ উদ্ভিদ। অ্যালোভেরা সাধারণত সব ধরনের জমিতেই চাষ করা যায়, তবে দোআঁশ ও অল্প বালি মিশ্রিত মাটিতে এর বৃদ্ধি ভালো হয়। অ্যালোভেরা ও ঘৃতকুমারী যে কতটা উপকারী সেটা বোঝা যায় এর ভিতরে থাকা উপাদান থেকে। এতে রয়েছে 20 রকমের খনিজ, ভিটামিন এ, বি১,বি২,বি৬,বি১২, সি এবং ই। এছাড়া মানবদেহের জন্য যে 22 টি অ্যামিনো এসিড প্রয়োজন এতে রয়েছে।
অ্যালোভেরার ব্যবহার :
অ্যালোভেরা অনেক গুণ সম্পন্ন একটি উদ্ভিদ। এটি যে কোন ঋতুতে পাওয়া যায় এবং সব ঋতুতে ব্যবহার উপযোগী। অ্যালোভেরা রূপচর্চায় প্রচুর ব্যবহার করা হয়। এছাড়া স্বাস্থ্য রক্ষায়,শরীরে অনেক রোগ কমাতে সহায়ক। এমনকি দেহের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রোগ যেমন: ডায়াবেটিস ওজন বৃদ্ধির মত সমস্যা গুলোর ক্ষেত্রে অ্যালোভেরা খুবই উপযোগী উপাদান।
✓ হার্ট সুস্থ রাখতে অ্যালোভেরার ব্যবহার: অ্যালোভেরা জুস হার্ট সুস্থ রাখে। এটি শরীরের কোলেমেটরলের মাত্রা কমিয়ে দেয় এবং ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখে।
✓ ওজন রাস করতে এলোভেরা জুস খুবই উপকারী। অ্যালোভেরা জুসের থাকে এন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান। যেটি ওজন রাস করে। তাই প্রতিদিন কোন ওজন কমাতে এলোভেরা জুস পরামর্শ করেন।
✓ হজমে অ্যালোভেরার উপকারিতা রয়েছে। গ্যাস এসিডিটি পেট ফাঁপা আমাদের নিত্যদিনের অঙ্গ তবে এলোভেরার ব্যবহার এর থেকে পরিত্রাণ দিতে পারে।
✓ ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরার খুবই উপকারিতা রয়েছে। অ্যালোভেরার এন্টি ইনফেলামেন্টারী উপাদান ত্বকের ইনফেকশন দূর করে ব্রণ হওয়ার প্রবণতা কমিয়ে দেয়। অ্যালোভেরার পাতার সবুজ রঙের অংশ সরালে একটি সাদা রংয়ের জেল পাওয়া যায়। এই জেলকে অ্যালোভেরা জেল বলে। মূলত ত্বকের ময়েশ্চারাইজার হিসেবে এলো জেল ব্যবহার হয়। এটি সরাসরি ত্বকে মিশে যায় এবং ত্বককে দাগ ছোপ হীন এবং উজ্জ্বল করে তোলে। দৈনন্দিন অ্যালোভেরা জেল ব্যবহারে ত্বক আর্দ্রতা ফিরে পায় এবং ত্বক উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
✓ চুলের জন্য এলোভেরা খুবই উপকারী। চুল বৃদ্ধিতে ও চুলের কোষ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে অ্যালোভেরার। এটি চুল পড়া রোধে, খুশকি দূর করতে খুবই উপকারী। দৈনন্দিন চুল পরিচর্যার তালিকায় অ্যালোভেরা রাখা গেলে চুল ভিতর ও বাহির থেকে উজ্জ্বল ও স্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠে।
✓ মুখের ঘা ও দাঁতের যত্নে এলোভেরা জেল কার্যকর। নিয়মিত অ্যালোভেরার জুস খেলে এটি দাঁতকে পোকা রোধ করতে এবং সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে। মুখে ঘা হলে সেই স্থানে অ্যালোভেরা জেল লাগালে ঘা ভালো করতে সাহায্য করে।
✓ ক্যান্সার প্রতিরোধে অ্যালোভেরা অনেকটা উপকারী। নতুন গবেষণা অনুসারে গবেষকরা বলেছেন অ্যালোভেরা জেলে এলো- ইমোডিন নামক উপাদান রয়েছে যা স্তন ক্যান্সার ছড়ানো রোধ করে থাকে।
✓ এলার্জি দূর করতে অ্যালোভেরা জবাব হয়না। গরমকালে ত্বকে ঘাম এর কারণে অনেক চুলকানি বা জ্বলুনি হয়। তখন অ্যালোভেরা জেল ওই স্থানে লাগালে আরাম লাগে। এছাড়া অ্যালোভেরা জেল অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি তাই এটি এলার্জি দূর করতে সাহায্য করে।
অ্যালোভেরা বা অ্যালোভেরা জেল সংরক্ষণের উপায়:
✓যদি অনেকদিন অ্যালোভেরা পাতা বা জেলটা সংরক্ষন রাখতে হয় সে ক্ষেত্রে পাতাটা ফ্রিজে রেখে দিলেই হবে।
✓ যদি যেটা বের করে সংগ্রহ করেন, তবে পাতাটা সাদা জেল অংশ বের করে ব্লাইন্ড করে বরফের ট্রেতে ডিপ ফ্রিজে ফ্রিজ ঘরে রেখে দিতে পারবেন। আপনি এই কিউট গুলো তৎক্ষণাৎ কোন দুর্ঘটনা ঘটলে ফাস্ট হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন। এছাড়া এলার্জির স্থানে ব্যবহার করা যাবে।
✓ অ্যালোভেরা জেল পরিষ্কার প্লাস্টিকের বোতলে রেখে ফ্রিজে রেখে এগুলো সংগ্রহ করতে পারবেন।
**মোটকথা অ্যালোভেরা খুবই একটি উপকারী উদ্ভিদ। আপনি যেকোন ভাবে আপনার বাসায় অথবা ঘরের বাহিরে যেকোনো স্থানে এটি চাষ করতে পারবেন এবং নিজের ব্যবহারের উপযোগী করে তুলতে পারবেন।