সম্মানিত পাঠক ভাই ও বন্ধুরা,
আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন আপনারা? নিশ্চয়ই ভালো আছেন? আর ভালো থাকুন এটাই আমদের চাওয়া। আজ আপনাদের জন্য নতুন একটি বিষয় নিয়ে হাজির হয়েছি। বিষয়টি হলো ”আমাদের বর্তমান সময়”
হা বন্ধুরা একটু ফিরে দেখি বা একটু ফিরে দেখার চেস্টা করি আজকে সময় আর আজ থেকে তিরিশ বছর আগের সময়কে নিয়ে। কতই পরিবর্তন!!! টেলিভিশন ছিল, তাও আবার সাদা কালো সারা গ্রাম জুড়ে সমাজের প্রভাবশালী কোন ব্যক্তির ঘরে। আর মোবাইল টেলিফোন, সেটা আবার কি? তবে রেডিও যাকে একটু শুদ্ধ ভাষায় ট্যানডেস্টার বলা হতো এটা সবার ঘরে ঘরেই ছিল বলতে গেলে।
কখন সকাল ছয়টা বাজবে বাংলাদেশ বেতারের সারাদিনের কর্মসুচি শুনবো বলে, কখন দুপর বারোটা বাজবে পল্লী গীতি বিজয় বিচ্ছেদ শুনবো বলে, কখন বেলা তিনটা বাজবে একটি নাটক শুনবে বলে, কখন বিকেল পাঁচটা বাজবে লোকগীতি শুনবো বলে, কখন সন্ধ্যা ছয়টা ও রাত আটটা বাজবে খবর শুনবো বলে, কখন রাত দশটা বাজবে যাত্রা শুনবো বলে। এখন আর এগুলোর দরকার পরছে না, কেউ শুনেই না, কেউ মাথাও ঘামাই না। স্কুলে যাবার কালে রাস্তার পাসে জ্যাঠা বাবুর রেডিওর গান শুনতে শুনতে ক্ষেতে কাজ করার দৃশ্য এখন চোখেই পড়ে না।
বাংলাদেশ টেলিভিশনে কখন বৃহস্পতিবার আসবে পূর্ণদৈর্ঘ্য ছায়া ছবি দেখবো বলে, কবে শুক্রবার আসবে আলিপ লায়লা দেখবো বলে। আলিপ লায়লা সুর শুনার সংগে সংগে লোকজন হাতের কাজ ফেলে দৌড়ে যেত ওই সিরিয়াল দেখার জন্য। এই দৃশ্যও এখন আর চোখে পড়ে না। এখন সাদা কালোর পরিবর্তে হয়েছে রঙীন টেলিভিশন। সাথে রয়েছে শতশত চ্যানেল রিমোট।
ছেলে বাবার সাথে যোগাযোগ করার জন্য হলুদ খামে চিঠি প্রেরন করে তৃষ্ণা মেটাতো। কবে ছেলের চিঠি আসবে রাস্তা দিয়ে চলে যাওয়া পিয়নকে আর না হলে বাবা বহুবার জিজ্ঞেস করতো। এখন আর পিয়নকে তেল মারা তো দুরের কথা চিঠি কি জিনিস এটাই চিনেনা বর্তমান প্রজন্ম। দুর দুরান্তের আপনজনকে সহজেই মানুষ প্রতিচ্ছবি সহ যোগাযোগ করছে।
দাদীমার চোখের জল, মায়ের মত বৌদি, বাবা কেন চাকর, কমলার বনবাস, নবাব সিরাজুদ্দৌলার মত নামীদামী যাত্রা পালার কথা শুনলে খাওয়া ঘুম বাদ দিয়ে মানুষ ছুটে চলতো সেই যাত্রা দেখতে। এখন আর এই দৃশ্য চোখেই পড়ে না। ছোট বড় সকলেই এখন বসে পড়ে চার ইন্সি, ছয় ইন্সি এমনকি তার অধিক মোবাইল টিউবে।
যেখানে পাওয়া যায় খবর, যাত্রা, নাটক, গান সহ আরো অনেক বিনোদন মুলক দৃশ্য। বলতে গেলে পরিবর্তন আর পরিবর্তন। শুধুই পরিবর্তন। কোন মিলই খুজে পাওয়া যাচ্ছে না সেই সময় আর এই সময়ের সাথে। যেমন রয়েছে সুবিধা তেমন কিছু অসুবিধাও বর্তমান সময়ের রয়েছে। হা বন্ধুরা এবার একটু কি কি অসুবিধায় পড়ছি বর্তমান সময়ে এই ব্যাপারে জানবো কি অসবিধা আছে এই সময়ে
পোশাকের পরিবর্তনঃ-
কোনটা ছেলে আর কোনটা মেয়ে কাছে না যাওয়া পর্যন্ত নিশ্চিতই হওয়া যায় না বর্তমান সময়ে। আধুনিকতার ছোয়া এতই লেগেছে যে মেয়েগুলো তারা নিজেদের মেয়েই ভাবতে চায় না। তাদের পোশাকে করছে ভিন্নতর গোছের। পশ্চিমা সাতিত্যের পোশাকের প্রতি আকর্ষন বেড়েই চলছে আমাদের ছেলেমেয়েদের মধ্যে। লুংগী!!! ও নো ইউ আর ভেরি খ্যাত গাইস।
আমাদের বড়তমান সময়ের ছেলেদের ভাষ্য। পল্লী বালার রুপময়ী পোশাক শাড়ি ও ব্লাউজ এখন মরিচা ও পোকার খোড়াক হচ্ছে। নাভী ও পিঠ বের করা ছোট ছোট পোশাকই এখন বর্তমান সময়ের নারীর আধুনিক ও শালীন পোশাক।
দৃষ্টি ভংগীর পরিবর্তনঃ-
কোথাও কোন স্থানে কোন ঘটনা ঘটলে মানুষ ছুটে যেত সেই পয়েন্টে। একটি মেয়েকে ধর্ষন করাতো দুরের কথা তাকে নিয়ে কটুক্তি ও বাজে মন্তব্য করলেই সমাজে শালীশ বসতো। আলাদা কোন নির্জন স্থানে একটি ছেলে ও মেয়েকে দেখলে কারন উদ্ঘাটন করা হতো, কেন তার নিরালায়। আর এখন গ্রামের কোন মেয়েকে নিয়ে কটুক্তি তো দুরের কথা তাকে ধর্ষন করলেও তার বিচার হয় না। অথবা ওই মেয়টি ধর্ষন হওয়ার পরও অনকে সময় কিছু মনেও করে না।
ইভটিজিং এটা একটা কালচারে পরিনত হচ্ছে এখন।
সংসার ভাঙ্গাঃ-
ভারতীয় কিছু নাটক যা সামজিক হিসেবেও পরিচিতি লাভ করেছে সেখানেও পরকিয়া, নতুন বউয়ের শ্বশুর শ্বাশুড়ির সাথে কিভাবে প্রতিবাদ করতে হয় তার পূর্ণ কৌশল, স্বামীর গায়ে কিভাবে আঘাত করতে হয়, কিভাবে স্বামী ছেড়ে অন্য পুরুষের সাথে সময় কাটানো যায়, মোট কথা সংসারে কিভাবে অশান্তি বিরাজ করানো যায় এই ধরনের দৃশ্যে ভরপুর রয়েছে। আর এগুলো দেখছে বর্তমান সময়ের নারী সমাজ, বেড়ে যাচ্ছে সংসার ভাঙার হার ও পরিবারে চির অশান্তির প্রকটতা।
বন্ধুরা আজ থেকে তিরিশ বছর আগে এমনটা ছিল না, স্বামীর আদেশ স্ত্রী অক্ষরে অক্ষরে পালন করতো। স্বামী না খাওয়া পর্যন্ত কোন স্ত্রী খাবার মুখে তুলতো না, স্বামীর নাম কেউ মুখে আনতো না। স্বামীর মংগল হয় এই কামনাই করতো সবসময়। স্বামী খেতে বসলে পাশে বসে বাতাস করে এক প্রকার শান্তি অনুভব করতো। অপরিচিত কেউ বাড়ি আসলে ঘরের ভিতর থেকে বলতো উনি বাড়ি নেই, আপনি কাল অসেন। আর এখন,,,,,,,,,,, থাক আর বল্লাম না। তো বন্ধুরা বুঝে নিন সংসারন কেন ভাঙছে??
চলো পাল্টাইঃ-
হা বন্ধুরা আসুন বর্তমান সময়ের খারাপগুলো ফেলে দিয়ে ভালোগুলোকে আঁকড়ে ধরি। আধুনিকতার ছোয়ায় গা না ভাসিয়ে নিজের সমাজ তথা দেশটাকে রসাতলে যাওয়ার হাত বাঁচাই। আধুনিকতার সুযোগগুলোকে নিয়ে সেই আগের সময়ের সংস্কৃতিকে অনুসরণ করি, ফিরে আসুক আগের সেই সুখী পরিবার ফিরে আসুক সংসারে সুখ এবং শান্তি। সংসার বাঁচলে সমাজ বাঁচবে আর সমাজ বাঁচলে দেশ বাঁচবে।
মাস্ক পড়ুন, সুস্থ থাকুন।
ঘরে থাকুন, ভালো থাকুন
করোনা প্রটোকল মেনে চলুন
সব্বাই ভালো থাকুন