ভালোবাসা এমন একটি রোগ যে না চাইলেও তা হয়ে যায়। মানুষ মানুষকে ভালবাসবে এটাই প্রকৃতির নিয়ম। আর এই ভালোবাসা আসে বলেই পৃথিবীতা হয়তো এত সুন্দর।আর এই ভালবাসায় আবার মানুষকে, মানুষের জীবনকে তছনছ করে দিতে পারে, যখনই সেই ভালোবাসাটা হয়ে থাকে একজন মিথ্যা মানুষের সাথে।আর এই সেই মিথ্যা মানুষটি কে? যদি আমি একটু ক্লিয়ার করে বলতে চাই,তা হল সেলফিস স্বার্থপর মানুষ। আর এসব স্বার্থপর মানুষেরা তারা যাই করুক না কেন সব কিছু নিজের জন্য করে থাকে,নিজের স্বার্থের জন্য করে থাকে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো ভালোবাসার ক্ষেত্রে একজন মানুষ সেলফিস হলেই অন্যজনের যে পুরো জীবনটাই নষ্ট হয়ে যাওয়ার মতো খুব ক্ষতি হচ্ছে সেদিকে তার কোন খেয়াল থাকে না।
দেখুন ভালোবাসা বা লাভ দুজন মানুষের সেক্রিফাইসের মাধ্যমে সম্ভব, Otherwise সম্ভব নয়। কিন্তু আমরা যখন মিথ্যা ভালোবাসায় পড়ে যায় তখন আমার ভালোবাসার মানুষটি ধোকাবাজ বা স্বার্থপর কি না কখনো ভেবে দেখি না!পাশাপাশি যে ক্ষতি গুলো হয় তা হচ্ছে টাকা অপচয়, সময় নষ্ট আর ব্যক্তিগত মান সম্মান নষ্ট করি। মানে পুরো জীবনটাই দুর্বিষহ করে তুলি। এখন আপনি বলতে পারেন ভাই, তাহলে নিঃস্বার্থ ভালোবাসা কি ভুল?
আমি বলবো না নিঃস্বার্থ ভালোবাসা ভুল নয় বরং এটিই সঠিক। কিন্তু নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসার আগে দুটি জিনিস খেয়াল রাখতে হবে।প্রথমত আপনার একটি সম্পূর্ণ সুস্থ মস্তিষ্ক আছে। নিজের বিবেক দিয়ে এবং নিজের ব্রেন খাটিয়ে দেখুন,সেই মানুষটিকে কি নিঃশর্তভাবে ভালোবাসা যায়? নাকি যায় না?দ্বিতীয় কি হলো তাকে মন প্রাণ দিয়ে ভালবাসতে হবে। এবং মন প্রাণ দিয়ে সারা জীবন তাকে ভালবাসতে পারবে কিনা?
এখন আমরা যে ভুলটি করি, ভালোবাসার শুরু থেকেই নিজের মন যা বলে,সে অনুযায়ী আমরা চিন্তা করি তারপর ভালোবাসা শুরু করে দিই।নিজের বিবেক, ব্রেনকে যে খাটিয়ে দেখতে হবে সেদিকে আমাদের খেয়াল থাকে না। মানে অনেকটাই অন্ধকারে ঢিল মারার মতো ব্যাপার। আপনি অন্ধকারে শুধু দিল মারতেছেন কিন্তু কোন কিছুই দেখতে পাচ্ছে না। যাকে ভালোবাসতে চলেছেন সে ভালো হতে পারে আবার খারাপও হতে পারে!
তাই আমি এই লেখাতে আপনাদের সাথে শেয়ার করব কিভাবে নিজের ব্রেনকে খাঁটিয়ে বুঝতে পারবেন আপনি যাকে ভালোবাসেন বা ভালবাসতে চাচ্ছেন সে কি আপনাকে আসলেই ভালবাসে কিনা?অথবা আপনি কোন ফেক বা মিথ্যা ভালোবাসায় জড়িয়ে পড়েছেন কিনা?প্রথমে আপনি যে পয়েন্টটা দিয়ে বুঝতে পারবেন আপনি কোন সেলফিস বা স্বার্থপর ভালবাসায় জড়িয়ে পড়েছেন কিনা তা হল!আপনি প্রথমে তাকে খেয়াল করলে দেখবেন, আপনার সবকিছু তার কথা মত চলতে হবে, অনেকটা তার চাওয়া পাওয়াতে জোর পূর্বক আপনাকে সব কিছু মেনে নিতে হয়।সে আপনার টাইম, আপনার ইমোশনস,আপনার আইডিয়াসকে কোন গুরুত্ব দেয় না।
আপনি যদি কোন ভালো কিছু করার একটা প্লান করেন কোন বিষয় নিয়ে, দেখবেন আপনার সেই ভালো কাজের বিষয়টি নিয়ে আপনার কাজে গুরুত্ব দেবেন না। তার সাথে টাইম স্পেন্ড করা, কোথাও ঘুরতে যাওয়া, দেখা করা এই বিষয়গুলো ক্ষেত্রেও আপনার তার অনুমতির জন্য অপেক্ষা করতে হবে।মানে সে আপনার ইমোশনকে কোন গুরুত্ব দিচ্ছে না, তার এমন একটা ভাব আপনার যে ইমোশন থাকতে পারে আপনি যে একজন মানুষ সে কখনো আপনাকে বিশ্বাস করতে রাজি না।
আর এসব ব্যাপারগুলো সাথে যদি আপনার ভালোবাসা মিলে যায় তাহলে বুঝে নিতে হবে সে আপনাকে কখনো ভালোবাসে না সে শুধুমাত্র তার নিজের ফায়দার জন্য আপনার সাথে অভিনয় করতেছে আর আপনি কি মিথ্যা ভালোবাসায় জড়িয়ে রয়েছেন।দেখুন একটা ভালোবাসার সম্পর্ক তখনই পরিপূর্ণ হয় যখন দুজন মানুষ দুজন মানুষকে সমানভাবে ভালবাসে। কিন্তু স্বার্থপর বা মিথ্যা ভালোবাসার মধ্যে দেখবেন,এমন হয় আপনি তাকে যত বেশি ভালবাসতে চাচ্ছেন সে তত বেশি এরেকটু দূরে সরে যাবার চেষ্টা করতেসে।
যেমন আপনি যখন তাকে আপনার সর্ম্পকের ব্যাপারে সিরিয়াস হতে বলছেন তখন দেখবেন সে একটু আনকম্ফোর্টেবল হয়ে যাচ্ছে। মানে সে কথা কে ঘুরিয়ে অন্যভাবে নিয়ে যাবে বা নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে।পাশাপাশি সেই মুখ দিয়ে বলবে ভালবাসি কিন্তু আপনাকে আবার এটাও বোঝাতে চেষ্টা করবে যে, আমরা অনেক ভালো বন্ধু।মানে সে নিজের ফাইদার লুটবার ব্যাপারে সবকিছু বুঝে কিন্তু ভালোবাসার ব্যাপারে সিরিয়াস হয়ে বললেন যত সমস্যা।
এর মানে সে আপনার রিলেশন এর ব্যাপারে কোন সিরিয়াস না । সে আপনাকে কখনো ভালবাসে না।আর যদি আপনার ক্ষেত্রে এরকম হয়ে থাকে আমি বলব প্লিজ তাহলে আপনার ভালোবাসার মানুষটিকে নিয়ে এখনই সিরিয়াসলি ভাবুন। মানে আমি ইনডাইরেক্টলি বলতে চাচ্ছি, সেইভ ইউর লাইফ।
দেখুন একটি পার্ফেক্ট রিলেশন এর ক্ষেত্রে দু জনকে সমানভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। কিন্তু যদি আপনার ক্ষেত্রে এমনটি হয় আপনি আপনার সম্পর্ককে বাঁচানোর জন্য দিনের পর দিন চেষ্টা করে যাচ্ছেন, আপনার টাইম, এনার্জি,মানি সবকিছু দিয়ে দিচ্ছেন কিন্তু তার কোন কিছু পরিবর্তন নেই। আর সেটা এক দিন, দুই দিন নয়, দিনের পর দিন তাহলে বুঝে নিতে হবে আপনি একটি ফেক লাভ বা স্বার্থপর ভালোবাসার মধ্যে জড়িয়ে রয়েছেন। কারণ ভালোবাসার একতরফাতে হয়না।
এখানে দুইটি জিনিস আপনি খেয়াল করুন মানি বা টাকা পয়সা হারালে আপনার সেটি হয়তো ফিরে পাওয়া সম্ভব কিন্তু সময় চলে গেলে তখন কি করবে?আর দ্বিতীয় টি হল আপনি দিনের পর দিন তার জন্য কষ্ট পেয়েই যাচ্ছেন আর তাতে তার কোনো পরোয়াই নেই, তাহলে তার ব্যাপারে তো একদিন না একদিন ডিসিশন নিতে হবে । তাই যত দ্রুত সম্ভব বিষয়টি নিয়ে একটু ভাবুন এবং একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন।
The always self-absorbed এর মানে হলো তারা সব সময় তাদের কি দরকার, কি করলে তাদের ভাল হয় ,সেদিকেই তারা ব্যস্ত থাকে। তারা এটাই মনে করে আপনার কি দরকার সেটা বড় বিষয় নয় বরং তার কি দরকার সেটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি তারা এটাও ভাবে আপনি যা চিন্তা করছেন বা করেন তার কোন ভ্যালুই নেই।
আর আপনার ক্ষেত্রে যদি এটাই হয়ে থাকে তাহলে জীবনে কখনো না কখনো এমনটাই মনে হবে ,আমি মনে হয় দিন দিন পাগল হয়ে যাচ্ছি, আমি মনে হয় দিন দিন আরো বেশি অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি। সব সময় অসহায় মনে হবে নিজেকে।
ধরুন আপনার ভালোবাসার মানুষটির সাথে কোন একটি বিষয় নিয়ে ঝগড়া সৃষ্টি হয়েছে। যেখানে আপনার কোন দোষ ছিল না। আপনি নিজেও জানেন, সে বিষয়টি নিয়ে আপনাকে কোনদিন সরিও বলবে বা সরি বলার ফিলও করবে না। এর মানে তাই আপনি একটি ভয়ংকর সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন।
খেয়াল করে দেখবেন আপনাকে তুচ্ছ করে সে বার বার জিতে যাচ্ছে, আপনার মূল্য তার কাছে এতটাই তুচ্ছ যে আপনাকে সরি বলার তার কোনো প্রয়োজনই পড়ে না।এই অবস্থায় আরেকটি জিনিস লক্ষ্য করলে দেখবেন, সে নিজেই ভুল করার পর বা ঝগড়া করার পর সেই নিজেই রেগে যাচ্ছে,অকারনে আপনাকে বকাবকি করছে।এদিকে শুধু শুধু অকারণে আপনি যে কষ্ট পেলেন সেদিকে তার কোন খেয়ালই নেই।
যদি এমনটি হয় সে আপনাকে বার বার নিচু করে রাখতে চায়, মানে আপনাকে সাথে সব সময় ছোট করে কথা বলে। বা কেউ যখন আপনাকে অপমান করতে চায় বা ছোট করতে চায় সে প্রটেক্ট করার বিপরীতে আপনাকে আরো শত করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পরে। মানে তার জন্য সব সময় আপনাকে অপমান সহ্য করতে হয়। তাহলে একসময় নিজের জীবনকে মূল্যহীন মনে হতে শুরু করবে। কিন্তু আপনার জীবনকে যে আপনি মূল্যহীন মনে করছেন এর পিছনে আপনার কোন দোষ নেই। এর দোষ আপনার ভালোবাসার মানুষটির। আপনার ভালোবাসার মানুষটি সেলফিস ।আর সেলফিস লোকেরা সব সময় সকল বিষয় নিজের মতো করে ভাবেন বা সব কিছু নিজের পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে দেখে। আর এ অবস্থায় যদি আপনার সম্পর্ক থেকে থাকে তাহলে আপনি একটি মারাত্মক স্বার্থপর ভালোবাসার মধ্যে রয়েছেন।
Your partner talks over you এক্ষেত্রে দেখবেন আপনার পার্টনার কথার সময় আপনার সাথে ঝগড়া করবে অথবা অন্য মানুষের সামনে আপনাকে মারাত্মকভাবে খারাপ ব্যবহার করতেও দ্বিধাবোধ করবে না। দেখুন কেয়ারিং ছাড়া কোন রিলেশনেই সম্ভব নয়। সে আপনাকে কেয়ার করে না বলেই এই ধরনের খারাপ আচরণ আপনার সাথে করতে পারে । তাই যে আপনাকে কেয়ার করি না তার সাথে সম্পর্ক নিয়ে আপনার এখনি চিন্তা শুরু করে দেয়া উচিত।
একটু চিন্তা করলে দেখবেন আপনার ভালোবাসার মানুষটি সব সময় সকল বিষয়ে আমি বা আমার এরকম চিন্তা ভাবনা করে।কিন্তু একটা রিলেশনে কমিটেড হলো তখন সকল ভালোবাসার বিষয়গুলো আমাদের হয়ে যায় আমি বা আমার থাকে না এটাই সত্যিকারের ভালোবাসা।আপনার ক্ষেত্রে যদি এমনটি না হয় তাহলে আপনি একটি সেলফি রিলেশনে রয়েছেন।
আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সেটি হল, আমরা যখন বুঝতে পারি আমরা একটি স্বার্থপর ভালবাসায় জড়িয়ে রয়েছি,তারপরও আমরা সেই জায়গা থেকে সরে আসতে পারি না। আমাদের ব্রেইনে আসলে কি হয় যে আমরা সরে আসতে পারি না।আমাদের ব্রেইনে দুটি অংশে রয়েছে। একটি হলো কনসিয়াস মাইন্ড চেতন মন আর অন্যটি হলো সাব কনসিয়াস মাইন্ড বা অবচেতন মন।
আমাদের যে কোন কাজের আগে চিন্তা করতে হয়। সে চিন্তাতেই লজিকের হল কিনা তা ভাবতে হয় এরপর পুরো বিষয়টিকে এনালাইসিস করতে হয় তারপর একটি ডিসিশনে আসতে হয়। এমন তাই করতে সাহায্য করে আমাদের ব্রেইনের কনসিয়াস মাইন্ড অংশটি।
অপরদিকে আমাদের যত ধরনের খারাপ এবং ভালো অভ্যাস আসে এবং মনের যত কথা মানে আমাদের ইমোশন আমাদের ভালো বা খারাপ যে কোন চিন্তা আমাদের বিশ্বাস আমাদের দুঃখ কষ্ট ভালো লাগা এ সকল কিছুই মানে আমাদের ফিলিংস এবং আমাদের ভালো এবং খারাপ মেমোরিজ গুলো এই সকল কিছু কন্ট্রোল করে আমাদের সাব কনসিয়াস মাইন্ড।আমাদের লাইফের যা কিছু করি না কেন তা 80% থেকে 98% কন্ট্রোল করে থাকে আমাদের এই সাবকনসিয়াস মাইন্ড।
ধরুন আপনি ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনা করতে চান না বা পড়াশোনায় মন নেই।এর জন্য আপনার রেজাল্ট ভালো হয়নি। এমন খারাপ রেজাল্ট হতে হতে এটা আপনার অভ্যাসে পরিণত হয়ে গিয়েছে এবং এই অভ্যাসটি পরবর্তীতে আপনার বিশ্বাসে পরিণত হয়েছে। এই কারণে আপনি ভাবেন আমাকে দিয়ে কিছু হোক বা না হোক ভালো রেজাল্ট কিন্তু কোনদিন হবে না।
এখানেই একটি জিনিস খেয়াল রাখুন এই যে এতগুলো বছর আপনার খারাপ রেজাল্ট হওয়া তার কন্ত্রোল করেছে আপনার অভ্যাস এবং আপনার বিশ্বাস। আপনার অভ্যাস এবং বিশ্বাসকে নিয়ন্ত্রণ করেছে সম্পূর্ণ সাব কনসিয়াস মাইন্ড।
আশা করি অনেক কিছুই বুঝতে পেরেছেন। তাই আমি বলব প্লিজ, কোনো সম্পর্কে জড়ানোর আগে নিজের সম্পর্কে নিয়ে একটু ভাবুন এবং চিন্তা করে দেখুন। যদি আপনার কোন সম্পর্ক এই সব বিষয়গুলো একসাথে মিলে যায় তাহলে সে সম্পর্ক আজিই ত্যাগ করুন।