Cheap price backlink from grathor: info@grathor.com

কিসের এত লজ্জা এই বাংলায়?

 

“আজকে আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলতে লজ্জা পাই!” এইযে এটা একটা বাক্য। বিশ্বাস করুন বাংলা বাক্যের ইতিহাসে এই বাক্যটার থেকে লজ্জাজনক বাক্য আর একটিও নেই। আজকাল বন্ধুবান্ধবের সাথে আড্ডাবাজি করা থেকে শুরু করে যারা চাকরিবাকরি করেন, অফিস আদালত, সবখানে যখন বাংলা চর্চার নামে বাংলা,ইংরেজি মিলিয়ে এক অশুদ্ধ ভাষার চর্চা করি আমরা। তখন আমরা ভুলে যাই রক্তের বিনিময়ে পাওয়া ছিল এই ভাষা। কথা হচ্ছে বন্ধুবান্ধব সবাই এভাবে কথা বলে। তাহলে আমরা এত শুদ্ধ বাংলায় কথা বলতে গেলে খারাপ ভাববে তো তারা! ভাববে ইংরেজি পারি না। কিন্তু বন্ধুবান্ধবদের কাছে একটু বুদ্ধিমান, একটু তীক্ষ্ণ কিংবা আড়ম্বরপূর্ণ থাকার জন্য; কিছু মুহূর্তের জন্য বাংলা ভাষার সৌন্দর্য আমরা ভুলে যাই।

বাঙালি আমরা ঠিকই। ভাষার জন্য লড়েছি, ফিরিয়ে এনেছি ভাষা। দেশের জন্য লড়েছি, জয়ী হয়েছি। কোন সাফল্যের কমতি আছে কি? নেই! তাহলে এই যে আমাদের বাঙালি পরিচয়, এত বড় একটা পরিচয়। আমরা কি পারবো? দুটো মিনিট বা কিছু নিদিষ্ট সময় ধরে শুদ্ধ বাংলায় কথা বলতে? আমরা ৯৫% বাঙালি-ই পারবো না এটা। কোন না কোন ইংরেজি ঢুকিয়েই দেব। তবে এমন কিছু শব্দ আছে যেগুলোর বাংলা সবসময় না বললেও চলবে সেক্ষেত্রে সেটা বিবেচনাযোগ্য হবে।

আপনি খেয়াল করে দেখবেন রবীন্দ্রনাথ, নজরুলের লেখায় কি অসাধারণ, শ্রুতিমধুর সব শব্দ ব্যবহার করা হয়েছিল। এখন কি সে শব্দগুলো আর শুনতে পান? কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে।
হে বাঙালি, আমাদের উচিৎ বাংলা ভাষা চর্চা করা। হারিয়ে যাবে নয়তো সব। ভালোবাসার মানুষকে ‘I Love you’ না বলে ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি’ বলুন। ‘Thank you’ না বলে ‘ধন্যবাদ

 বলুন। ভুলে গেলে চলবে না। বাংলা ভাষা শুধু আমাদের ভাষাই নয়। বাংলা ভাষা আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের ঐতিহ্য।

কয়েকবছর আগে অস্ট্রেলিয়ার দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে বাংলাকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। বাঙালি হয়ে আমাদের বাংলা বলতে লজ্জা লাগে, ওদের কিন্তু লাগে না। ওরা শ্রদ্ধা করে বাংলা ভাষাকে! তাই দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

হাজার মাইল দূরের সিয়েরালিওন।সিয়েরালিওন পশ্চিম আফ্রিকার একটা ছোট দেশ। সে দেশের মানুষ না চিনতো বাংলাদেশ নামক এই ভুখন্ডটি, না চিনতো বাঙালিদের। জাতিসংঘের বাঙালি শান্তিরক্ষী বাহিনীর কল্যাণে তারা বাংলা ভাষাকে চিনতে-জানতে শুরু করে। ২০০২ সালে বাংলাকে সিয়েরালিওন এর অন্যতম দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

পাশ্ববর্তী দেশ ভারত। ভারতের বেশ কিছু রাজ্যে প্রধান ভাষা হলো বাংলা। ভারতের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা অঞ্চল সহ ভারতের অসাম রাজ্যের দক্ষিণাংশেও এই ভাষা বহুল প্রচলিত। ভারতের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের অধিকাংশ অধিবাসী বাংলা
ভারতীয় সংবিধান দ্বারা স্বীকৃত ২৩টি
সরকারি ভাষার মধ্যে বাংলা অন্যতম।

যে পাকিস্তানের সাথে আমাদের রক্তের শত্রুতা, সে পাকিস্তানের করাচী শহরের দ্বিতীয় সরকারী ভাষা রূপে বাংলাকে গ্রহণ করা হয়েছে। তার পরও আমরা বাংলাকে শ্রদ্ধা করবো না?

শুধু অস্ট্রেলিয়া, সিয়েরালিওন, ভারত, পাকিস্তান না। পৃথিবীর আরো অনেক দেশ আছে ; যারা বাংলা ভাষাকে দিয়েছে তাদের নিজের মাতৃভাষার সমান মর্যাদা।

যে ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছে আমাদের ভাইয়েরা, অন্তত তাদের কথা চিন্তা করে হলেও সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রয়োগটা খুব বেশি জরুরী। খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া আমাদের ইংরেজি ভাষার প্রয়োগ সর্বস্তরে করা ঠিক না।

আমি বলছি না ইংরেজি খারাপ ভাষা, ইংরেজি ভাষাকে মর্যাদা দেওয়া যাবে না, এটা বলছি না আমি। ইংরেজিও কোনো না কোনো দেশের মাতৃভাষা। সকল মাতৃভাষাকেই সমান মর্যাদা দেওয়া উচিৎ।

তবে বাঙালী হিসেবে আমাদের উচিৎ বাংলা ভাষাকেই সবচেয়ে বেশি শ্রদ্ধা করা। আর বাংলা ভাষায় কথা বলার যে সংকোচের প্রবণতা আমাদের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে তা ধ্বংস করে দিতে হবে।
‘আসুন শুদ্ধ বাংলায় কথা বলি। সকল শহীদদের স্বরণ করি।’

 

 

Related Posts

10 Comments

Leave a Reply

Press OK to receive new updates from Firstsheba OK No