একটি গবেষণার মাধ্যমে জানা গেছে পৃথিবীতে লাখো মানুষ প্রতিদিন কোনো না কোনো রোগের শিকার হয়। আর এই রোগের কারণ জানার জন্য ডাক্তাররা ভিন্ন ভিন্ন পরিক্ষা করে থাকে। যার দ্বারা তারা রোগের উৎপত্তি সম্পর্কে জানতে পারবে। ফলে সে অনুযায়ী চিকিৎসা ও তারা করতে পারবে আর এই মেডিকেল টেষ্ট এর একটি উন্নত মাধ্যম হলো ‘এম আর আই’ স্কেন। হয়তো আপনারা এই পরিক্ষাটির নাম আগে শুনেছেন কিন্তু অনেকেই রয়েছেন যারা এই ‘এম আর আই’ সম্পর্কে কিছুই জানেন না। অনেকে ভাবেন ‘এম আর আই’ করার সময় রোগী মারা যেতে পারে। আসলেই কি ‘এম আর আই’ করা রোগিদের জন্য রিস্ক। আজকের লেখায় সেই বিষয়ে জানবেন।
‘এম আর আই’ আসার পর মেডিকেল জগতে অনেক পরিবর্তন আসে। এই স্কেনের কারনে ডাক্তারদের কাজ অনেক সহজ করে দেয়। বর্তমানে যুগে প্রায় চিকিৎসকরা রোগীদের দেহের বেশির ভাগ রোগ নির্ণয়ের জন্য ‘এম আর আই’ স্কেন এর উপরেই করে থাকেন। আর এই কারনে ‘এম আর আই’ স্কেন রোগীদের দেহে লুকিয়ে থাকা গোপন রোগকে সঠিক ভাবে স্কেন করে সঠিক ফলাফল জানিয়ে দেয়। ভিন্ন ভিন্ন অংশের সূক্ষ্ম রোগ নির্ণয় করার জন্য ‘এম আর আই’ কে একটি নির্ভর যোগ্য পছন্দের পদ্ধতি বলে মনে করা হয়।
কিন্তু আপনার মনে একটি কৌতুহল সর্বদাই থেকে যায়, আসলেই ‘এম আর আই’ কি? ‘এম আর আই’ কিভাবেই বা কাজ করে? আর ‘আম আর আই’ করা কি সত্যিই বিপদজনক?
‘আম আর আই’ এর পূর্ন রুপ হিচ্ছে ‘ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং ‘ এক প্রকার চুম্বকের সাহায্য শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গের স্পষ্ট ছবি নেওয়া হয়। যাতে করে নির্দিষ্ট রোগ বা অস্বাভাবিক অবস্থা খুঁজে বের করা যাবে। যা ১৫ থেকে ৯০ মিনিট পর্যন্ত সময় লাগে। আপনি জানলে অবাক হবেন যেখানে এক্স-রে ও সিটি স্কেন এর জন্য ক্ষতিকারক রেডিয়েশন এর ব্যবহার করা হয় কিন্তু ‘এম আর আই’ এর জন্য রেডিয়েশন এর পরিবর্তে চুম্বকীয় শক্তির ব্যবহার করা হয়। যার কারণে এটি কে সিটি স্কেন, এক্স-রে থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন বলে মনে করা হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে সমগ্র দেহে যেখানে যেখানে হাইড্রোজেন থাকে সেগুলো স্কেন অর্থাৎ ঘোরার কারনে ইমেজে রুপ নিতে থাকে। যেটি দেখে ডাক্তাররা রোগ নির্ণয় করে থাকে। মানব দেহে ৭০% পানি থাকে। আর আমাদের দেহের প্রতিটা পানির অণুতে প্রায় ২০০০ হাইড্রোজেন প্রোটন থাকে। যার কারণে ‘এম আর আই’ মেশিনের চুম্বক আকর্ষণ শক্তি তৈরি করে। আর এই চুম্বকীয় শক্তি হাইড্রোজেন এর প্রোটন এর সাথে মিশে যায়। আর এই দুটো মিশে গিয়ে আমাদের দেহের অভ্যন্তরীণ অঙ্গের ছবি তৈরি করতে থাকে যেটি কম্পিউটারে দেখে ডাক্তাররা খুব সহজে রোগের চিহ্ন বুঝতে পেরে যায়। ‘এম আর আই’ এর মাধ্যমে দেহের ভিন্ন ভিন্ন অঙ্গ যেমন- ব্রেইন, মেরুদন্ডের আঘাত, হার, মাংস পেশি, লিভার ভিন্ন ভিন্ন অঙ্গের স্পষ্ট ছবি তুলতে পারে।
‘এম আর আই’ করার পূর্বে কতগুলো বিষয় রয়েছে যেগুলো লক্ষ্য রাখতে হয়। না হলে ব্যাক্তি কে সমস্যায় পড়তে হয়। অনেকের একটি ভুল ধারণা রয়েছে। ‘এম আর আই’ করার পূর্বে খালি পেটে থাকতে হবে কিন্তু এ ধারণা টা ভুল। ডাক্তাররা আপনাকে যতক্ষণ না বারণ করছে ততক্ষণ পর্যন্ত আপনি খেতে পারবেন। বেশিরভাগ স্কেনের ক্ষেত্রে ডাক্তাররা পূর্ব থেকে খাওয়া দাওয়া বন্ধ রাখতে বলেন। কিন্ত ‘এম আর আই’ এর ক্ষেত্রে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। অনেক চিকিৎসক ‘এম আর আই’ এর পূর্বে বেশি করে পানি পান করতে বলেন। কারণ পানির পরিমাণ যতো বেশি দেহের মধ্যে থাকবে ‘এম আর আই’ স্কেন দেহের গভীর অংশের ছবি ততো পরিষ্কার করে স্কেন করতে পারবে।
‘এম আর আই’ স্কেনের পূর্বে ডাক্তাররা রোগীর কাছে থাকা ধাতব বস্তু গুলো জমা নিয়ে নেয়। যদি কোনো রোগী জুয়েলারি, ঘড়ি ইত্যাদি এমন কি নকল দাত বা চুল ও পড়ে থাকে ডাক্তাররা রোগিকে ‘এম আর আই’ কক্ষে প্রবেশ করতে দেয় না। ‘এম আর আই’ এর পূর্বে এগুলো খুলে ফেলতে হয়।
এমনকি দেহে ট্যাটু থাকার কারনে এম আর আই করার সময় সমস্যায় পড়তে হয়। যার কারনে পূর্ব থেকে ডাক্তারকে ট্যাটুর ব্যাপারে জানাতে হয়। আপনার মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে কেনো ‘এম আর আই’ করার পূর্বে রোগীর দেহ থেকে সব ধাতু গুলো খুলে নেওয়া হয়? চিকিৎসকরা তো ইচ্ছা করলে ধাতব বস্তু সহ ‘এম আর আই’ স্কেন করলতে পারে।
কিন্তু তারা কেনো করে না? এর পেছনে একটি বিশেষ কারণ রয়েছে। আসলে ‘এম আর আই’ স্কেন চুম্বকীয় শক্তির দ্বারা হয়। ‘এম আর আই’ সিস্টেমে শক্তিশালী চুম্বকের দ্বারা ধাতু গুলো যাতে আকৃষ্ট না হয় তাই রোগীর দেহে থেকে ধাতু গুলো খুলে নেওয়া হয়। না হলে স্কেনের সময় সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। এমনকি রোগী গুরোতর আঘাত পেতে পারে। যার কারনে এম আর আই স্কেন মিশিনে ধাতু গ্রহনযোগ্য নয়। ‘এম আর আই’ করার জন্য হসপিটাল থেকে রোগিদের আলাদা পোশাক দেওয়া হয়। যদি হসপিটালের দেওয়া পোশাক পড়তে অনিচ্ছা প্রকাশ করে তবে ধাতু গুলোকে খুলে যথাস্থানে রাখতে হবে তাহলে স্কেনিং করতে পারবে।
যদিও বেশিরভাগ ব্যাক্তি হসপিটাল থেকে দেওয়া পোশাক নিরাপদ বলে মনে করে। ‘এম আর আই’ এর জন্য ব্যাথা নিবারনের কোনো ঔষধ বা ইনজেকশন দেওয়া হয় না। কারণ এম আর আই স্কেন করার সময় কোনো ব্যাথা হয় না। বন্ধ জায়গার মধ্যে রেখে রোগীকে এম আর আই করা হয় বলে অনেক এ আবার ভয় পায়।
এ বিষয় পূর্বে থেকে ডাক্তার এর সাথে আলোচনা করে নেওয়া ভালো। এ জন্য ডাক্তাররা সফট মেডিসিন ইনজেকট করে দেয়। ফলে রোগীর ভয় পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আপনাদের জানা উচিত যদি কিডনির সমস্যা থাকে সে বিষয় অবশ্যই ডাক্তারের সঙ্গে আলোচনা করে নেওয়া বাধ্যতামূলক। এরপর চিকিৎসকরা পর্যবেক্ষণ করে দেখে রোগীর কিডনি কতটা সঠিক ভাবে কাজ করছে। যদি তার কিডনি ঠিকঠাক কাজ না করে তার ‘ইম আর আই’ করা যাবে না।
ইতিমধ্যে আপনারা জেনে গেছেন ‘এম আর আই’ স্কেন এর পূর্বে কি করনীয়? এখন আরো একটি প্রশ্ন থেকে যায় সেটি হলো ‘এম আর আই’ স্কেন কীভাবে হয়? ‘এম আর আই’ স্কেন একটি ছোট সিলিন্ডার যার দুই পাশ খোলা থাকে। স্কেনিং এর সময় সিলিন্ডারের সামনে থাকা বেডে রোগীকে শুয়ানো হয়। এরপর রোগীকে সিলিন্ডার এর ভিতরে প্রবেশ করানো হয়। এই মেশিনটি চুম্বকের দ্বারা রোগীর দেহের অভ্যান্তরীন অঙ্গের স্পষ্ট ছবি তুলে কম্পিউটারকে পাঠাতে থাকে। রোগীর দেহের কোন অঙ্গকে স্কেনিং এর ভেতরে প্রথমে প্রবেশ করানো হবে তা নির্ভর করে রোগীর উপর। এরপর ‘এম আর আই’ শুরু হয়। প্রায় ১৫ থেকে ৯০ মিনিট মতো সময় লাগে স্কেনিং করতে। ছবি স্পষ্ট তোলার জন্য রোগীকে স্থির থাকা বাধ্যতামূলক।
না হলে ছবি অস্পষ্ট ভাবে ফুটে উঠবে। আর এভাবেই সম্পূর্ণ হয় ‘এম আর আই’ স্কেন।
অনেকের মনে প্রশ্নই থেকে যায়, ‘এম আর আই’ করার কারনে কি কারো মৃত্যু হতে পারে?
আপনার উত্তর অবশ্যই হ্যাঁ। দেহে স্কেন করার সময় এই মেশিনটি মৃত্যুর মুখেও ঠেলে দিতে পারে। যদিও স্কেন করার সময় রোগীর কাছ থেকে সব ধাতু জমা নেওয়া হয় কিন্তু ইনেক ক্ষেত্রে ভুল ও হয়ে যায়। কোন একটি ধাতু তার দেহে ভুল বসত থেকে যায় তাহলে সেটা রোগীর জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ তা ছাড়া ‘এম আর আই’ করার সময় মেশিনের ভিতরে জোরে শব্দ হতে থাকে যা শুনে রোগী ভয় পেয়ে যায়। কিন্তু বাস্তবে এটা বড়ো কিছু নয়। ‘এম আর আই’ করার সময় রোগী যাতে এই শব্দ শুনতে না পারে অনেক ডাক্তার রোগীর কানে প্লাস্টিকের হেডফোন লাগিয়ে দেয়। বন্ধুরা এই ছিলো ‘এম আর আই’ করার সম্পূর্ণ প্রসেস।
ভালো লাগলে বেশি বেশি করে শেয়ার করবেন।