আব্বু , আকাশ নীল কেন? ভাইয়া, ইন্টারনেট কীভাবে চলে? আপু, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট কেন? ও তাে পচা লােক।
শিশুদের প্রশ্নের সামনে আমরা কত অসহায়। ওরা এত অদ্ভুত প্রশ্ন। করে যে অনেক সময় তার উত্তর আমাদের জানা থাকে না, আবার। অনেক সময় ওকে বুঝিয়ে বলার মতাে ধৈর্যও আমাদের থাকে না। তবে বেশির ভাগ সময়ই আমরা ভাবি ও তাে এগুলাে কিছু বুঝবে না । তাই তাদের বােঝানাের চেষ্টাও করি না। বরং উল্টো ওকে এত প্রশ্ন করাে কেন?’ বলে ঝাড়ি মেরে বসিয়ে দিই। আমরা যতটুকু মনে করি, আমাদের শিশু-কিশােররা তার থেকে অনেক বেশি বােঝে। আমার বােনের ছেলের বয়স যখন ৩ বছরেরও কম, ও আমাকে ব্রেক-আপ কাকে বলে, কীভাবে হয়, কেন হয় বুঝিয়ে বলেছিল। আমার এক কলিগ ফোনের কোনাে অ্যাপ বুঝতে না পারলে তার মেয়ের কাছে নিয়ে যায়। তার মেয়ের বয়স সাড়ে ৫ বছর।
আবার ভেবে দেখুন, আমরা আমাদের বােঝানাের অক্ষমতাকে ‘ওরা বুঝবে না’ বলে চালিয়ে দিচ্ছি না তাে? আলবার্ট আইনস্টাইন কিন্তু বলেছেন, যদি আপনি কোনাে কিছু একজন ৬ বছর বয়সীকে বুঝিয়ে বলতে না পারেন, তাহলে আপনি নিজেই তা ভালােমতাে বােঝেন না, তাই তুমি বুঝবে না’ বলার আগে নিজেকে জিজ্ঞেস করুন “আমি ঠিকমতাে বােঝাতে পারছি তাে?”
শিশুদের মধ্যে প্রশ্ন করার প্রবণতা বুদ্ধিমত্তা ও সঠিক মানসিক গঠনের লক্ষণ। ও প্রশ্ন করছে, মানে ও শিখতে চাচ্ছে, জানতে চাচ্ছে, এই পৃথিবীর কঠিন নিয়মগুলাে বুঝতে চাচ্ছে। চিন্তা করুন, এই বাচ্চাটা স্কুলে যখন পড়াশােনা করে, তখন ও শুধু মুখস্থ করে পাস করার চেষ্টা করে না। ও সত্যি সত্যি শেখার জন্য পড়াশােনা করে। আর সে জন্যই প্রশ্ন করে। কিছুই না বুঝলে কিন্তু প্রশ্ন করার কথা।
চিন্তা করুন, প্রশ্ন করলে বন্ধুরা খেপাতে পারে, এটা জেনেও কী পরিমাণ সাহস নিয়ে সেই বাচ্চাটা ক্লাসে হাত তােলে, স্যার, একটা কোয়েশ্চেন।’ তখন যদি সেই স্যার তাকে বকাঝকা করে বসিয়ে দেন, তাহলে সেটা সেই বাচ্চাটার মেধা আর মননের প্রতি কী ভয়ংকর অন্যায়! সেই বাচ্চাটা কি এরপর আর প্রশ্ন করার সাহস পাবে ?
ওই ক্লাসের আর কেউ কি প্রশ্ন করার সাহস পাৰে? দিনশেষে সেই ক্লাসের, সেই স্কুলের আর আমাদের সমগ্র দেশের বাচ্চারা যে কোনাে প্রশ্ন না করে, বােঝার চেষ্টা না করে মুখস্থ করে যাচ্ছে, তার পেছনে এত প্রশ্ন করে কেন?’ এই কথাটা কি অনেকাংশেই দায়ী
আপনি শিশুটির শিক্ষক হন, অভিভাবক হন বা বড় ভাইবােন হন, আপনার কাছে আমার একটা অনুরােধ, ওকে প্রশ্ন করার সুযােগ দিন। প্রশ্ন করা ওকে স্বাবলম্বী ও আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তুলবে। ওকে যদি কেউ ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে বিপথে নেওয়ার চেষ্টা করে তাহলে ও তাকে প্রশ্ন করে আটকে দিতে পারবে। ওকে যদি কেউ ঠকাতে চায় তাহলে ও প্রশ্ন করে নিজের দাবি আদায় করে নিতে পারবে। আর যদি আপনি ওকে প্রশ্ন করতে না শেখান, ওকে যা করতে বলা হবে, ওকে যা বােঝানাে হবে ও সবই মেনে নেবে। প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর আপনি সঠিকভাবে দিতে পারবেন এমন না। তবে চেষ্টা করতে ক্ষতি কী? ধৈর্য নিয়ে এর প্রশ্নটা শুনুন আর উত্তর করার চেষ্টা করুন। উত্তর যদি না জানা থাকে তাহলে ওকে ভুলভাল বুঝিয়ে দেবেন না। এতে ও আরও বিভ্রান্ত হয়ে যাবে। এর থেকে ওকে বলুন, ‘আমি তাে এটা জানি না ভাইয়া, আমি কালকে জেনে এসে তােমাকে জানাই?” ও কিন্তু ঠিকই আপনার উত্তরের জন্য অপেক্ষা করবে। আর আপনি যদি সত্যি সত্যি ওর প্রশ্নের সঠিক উত্তর নিয়ে পরদিন হাজির হন, তাহলে ও রাতারাতি আপনার ভক্ত হয়ে যাবে। কাজটা কি খুব কঠিন? মােটেই না। “লােকে কী বলবে?’ ভেবে যারা কোনাে প্রশ্ন করছেন না, তাদের বলি, প্রশ্ন করার একটা খুবই ভালাে দিক হচ্ছে, নিজের ব্র্যান্ডিংয়ের সুযােগ। কোনাে ইভেন্ট, মিটিং কিংবা সেমিনারে যখন কেউ প্রশ্ন করার জন্য হাত তােলে এবং সঠিক প্রশ্নটি করে তখন সবার মনােযােগ ওই মানুষটার দিকে চলে যায়।
এই ইভেন্টের স্পন্সরের কথা যতজনের না মনে থাকবে তার চেয়ে বেশি আপনার কথা। মানুষের মনে থাকবে। ইভেন্টের স্পন্সর কিন্তু কয়েক লাখ টাকা খরচ করে ব্র্যান্ডিং করছে। একবার ভাবুন আপনার কত টাকার সেলফ ব্র্যান্ডিং হয়ে গেল। তাও আবার বিনা খরচে। যারা আপনাকে প্রশ্ন করা নিয়ে টিটকারি দিচ্ছে, দেখবেন তারা নিজেরাই ওই ক্লাস বা সেমিনার থেকে কিছু না বুঝে বা অধেক জন নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। আর তারা মনে মনে চাচ্ছে যে আপনিও তাদের দলে ভিড়ে যান আর শধ বােকার মতাে মাথা নেড়ে ক্লাস শেষ করুন। এখন আপনিই ঠিক করুন, ওই মানুষগুলাের সাময়িক টিটকারি সহ্য করবেন, নাকি ওই ক্লাসের বিষয়বস্তু না বুঝে নিজের ক্ষতি করবেন।
যেই অল্পবয়সীরা এ লেখাটা পড়ছ তাদের বলছি, প্রশ্ন করা থামিয়ে দিয়াে না। যে যা-ই বলুক, এই প্রশ্নই তােমার সুপার পাওয়ার। অনেক প্রশ্নই আছে, যেগুলাের উত্তর তােমাকে কেউ দিতে পারবে না। আর সেই প্রশ্নগুলাের উত্তর খুঁজতে গিয়েই তুমি হয়ে উঠবে স্টিফেন হকিন্সের মতাে বিজ্ঞানী, ওয়াসফিয়া নাজরিনের মতাে দুঃসাহসিক অভিযাত্রী বা নিল আর্মস্ট্রংয়ের মতাে মহাকাশচারী।। ভালাে থেকো তােমরা, আর ভালাে থাকুক তােমার বিশ্ব বদলে দেওয়া প্রশ্নগুলাে।