একদিন একটি ঈগল শিকারের খোঁজে তার বাসা থেকে বের হলো। সে একটি খরগোশ কে দেখতে পেল এবং খরগোশটি কে তাড়া করা শুরু করলো। বেচারা খরগোশ প্রাণের ভয়ে অস্থির হয়ে কখনো এক ঝুপে ঢুকে আবার অন্য ঝোপে। একসময় সে খরগোশটি কে ধরে ফেলে এবং মেরে ফেলে। কি ঘটনাটি সত্যি মনে হয় কিন্তু মজা লাগেনা। চলেন আজকে আরেকটি ঘটনা শুনি। সত্য না মনে হলেও মজা ঠিকই লাগবে। তবে শুরু করা যাক :
একবার একটি ঈগল পাখি শিকারের খোঁজে ঘর থেকে বের হলো। সে একটি খরগোশ কে দেখতে পেল এবং তাকে তাড়া করল। খরগোশটি প্রাণের ভয়ে একবার এক ঝুপে ঢুকে আরেকবার অন্য ঝোপে। এমন সময় তার নজরে পড়লো একটি গুবরে পোকা। খরগোশটি তার কাছে গিয়ে বলল, ভাই আমাকে বাঁচাও। আমার পিছে একটি ঈগল ধাওয়া করছে। গুবরে পোকা খরগোশ কে বলল, ভয় নেই ভাই। বিপদে পড়ে এসেছ। আমি তোমাকে আশ্রয় দিবো। ঈগল তোমার কিছুই করতে পারবেনা। তুমি ওই পাশের কচু ঝোপে লুকিয়ে থাকো। কিছু চিন্তা করোনা। ঈগল আসলে আমি সামলে নেব।গুবরেপোকার কথায় সাহস পেয়ে খরগোশ তাড়াতাড়ি কচুসোপে গিয়ে আড়াল নিল । ..
ওদিকে ঈগল তো আকাশ থেকে সবই দেখতে পেল । সে শা শা করে উড়ে গুবরেপোকার সামনে এসে নামল । বলল , ওহে , খরগোসটা কচুঝোপের ভেতরে ঢুকেছে তাই না ? ছোট্ট গুবরেপোকা ঈগলকে মিনতি করে বলল , মহামান্য ঈগল , তুমি তো সবই দেখতে পেয়েছ , আমি আর কী বলব । তবে আমার একটা প্রার্থনা রাখো । দুর্বল খরগোশ আমার আশ্রিত , তুমি দয়া করে তাকে হত্যা করো না । পরে তোমার আরও বড় শিকারের অভাব হবে না । ঈগল গুবরেপোকার কোন কথাই কানে তুলল না । বলল , তোমার বাজে কথা শোনার সময় নেই আমার । খরগোশকে খাব বলেই আমি তাক করে নেমেছি । বলে সে গুবরেপোকার সামনেই খরগোসকে টেনে কচুঝোপ থেকে বার করে ছিঁড়েখুঁড়ে খেয়ে ফেলল । চোখের সামনে এমন নির্মম দৃশ্য দেখে গুবরেপোকা খুবই দুঃখ পেল । ঈগলের ব্যবহারে বড় রাগও হল তার ।
কিন্তু মুখে কিছু বলল না । মনের রাগ চেপে রেখে সে ঈগলের পেছন পেছন উড়ে গিয়ে তার বাসাটা চিনে এল । দুদিন পরে গুবরেপোকা উড়ে উড়ে উপস্থিত হল ঈগলের বাসায় । ঈগল তখন সেখানে ছিল না । গুবরেপোকা দেখল ঈগলের বাসায় কয়েকটা ডিম । সুযোগ পেয়ে সে সবকটা ডিম ঠেলে মাটিতে ফেলে ভেঙ্গে ফেলল । বাসায় ফিরে তার ডিমের অবস্থা দেখে ঈগলের যেমন দুঃখ হল তেমনি রাগও হল । সে বুঝতে পারল নির্ঘাৎ কেউ ডিমগুলো মাটিতে ফেলে দিয়েছে । কিন্তু এমন কাজ কে করতে পারে ভেবে পেল না । সে তখন ঠিক করল , এমন উঁচুতে বাসা বাঁধবে যেখানে কেউ তার ডিম নষ্ট করতে পারবে না । কিন্তু যতই উঁচুতে ঈগল বাসা বাঁধুক । গুবরেপোকার সেখানে উড়ে যাবার বাধা নেই । তাই ঈগল যেখানেই বাসা বেঁধে ডিম পাড়ে , গুবরেপোকা সেই ডিম মাটিতে ফেলে নষ্ট করে দিতে লাগল ।
শেষ পর্যন্ত ঈগল জেনে গেল ছোট্ট গুবরেপোকারই এই কাজ । কিন্তু সে যত শক্তিমান আর বড় পাখিই হোক না কেন , ক্ষুদে গুবরেপোকার সঙ্গে এটে উঠবে সাধ্য কি ? গুবরেপোকার বিরুদ্ধে সে যে কিছু করবে তার উপায় নেই । সে বুঝতে পারল ওই ক্ষুদে পোকা তার ওপরে এভাবে প্রতিশোধ তুলছে । ঈগলটির বাসা ছিল একটি বটগাছের চূড়ায়। একদিন ঈগলপাখি টি হতাশ হয়ে তার বাসায় ঘুমাচ্ছিল। কিন্তু এইবার গুবরে পোকার পরিকল্পনা ছিল একটু ভিন্ন । সে প্রতিদিন একটু একটু করে তার বাসার নলখাগড়া গুলো ছড়িয়ে দিচ্ছিলো। সেদিন সে পরিশ্রম করে বেশ কয়েকটি নলখাগড়া তার বাসা থেকে ছাড়িয়ে দেয়।
হঠাৎ দমকা বাতাস আসার কারণে বাসাটি গাছ থেকে ছিটকে পড়ে যায়। ঈগল টি ঘুম থেকে জাগ্রত হয়। কিন্তু ততক্ষণে সে বাতাসে ভাসছে। নিজেকে পুরোপুরি সামলানোর আগেই সে মাটিতে আঘাত পায়। আঘাত পাওয়ার ফলে তার একটি ডানা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যার ফলে সে উড়তে পুরোপুরি অক্ষম হয়ে পড়ে। এবার সে অসহায় হয়ে সেই গাছ তলাতে পড়ে থাকে। সামনে দিয়ে শিকার চলে যায়। তবুও সে তার শিকার ধরতে এখন পুরোপুরি অক্ষম। কয়েকদিনের মধ্যেই ঈগলটির ভবলীলা সাঙ্গ হয়ে গেল।