গণমাধ্যম কি গণমানুষের কথা বলছে ?
গণমাধ্যম মানেই গণমানুষের কথা বলবে, গণমানুষের ভাষা বুঝবে।মানুষের অধিকার চাওয়া পাওয়ার ব্যাপ্তি গণমাধ্যম দ্বারাই জনপ্রতিনিধিদের কাছে পৌঁছাবে। আবার গণ মানুষই গণমাধ্যমের কাছে নিজেদের সঠিক ভাবে তুলে ধরার প্রয়াস চালাবে, যেটা গণ অধিকারের বিপরীতে যায়,সে সম্পর্কে গণমাধ্যমকে অবহিত করবে।
গণমানুষকে নিয়েই গণমাধ্যম। উভয়ের মাঝে রয়েছে আন্ত:সম্পর্ক,রয়েছে মিথস্ক্রিয়া। একটির সাথে অন্যটির সম্পর্কের ব্যাতায় ঘটলেই উভয় সংকট!
গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে যে বিষয়টি লক্ষ্য করার মত তা হচ্ছে প্রোপাগান্ডা। এটি একুশ শতকের মিডিয়া বিপ্লবে মাত্রারিক্ত পর্যায়ে রয়েছে। প্রোপাগান্ডা মানে হলো,মিথ্যা বানোয়াট বা কুরুচিপূর্ন কোনো বক্তব্য প্রচার বা প্রকাশ করে, জনগনের মতামত বা বিশ্বাসকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপকৌশল। আর এ প্রচারণার সঙ্গে গণমাধ্যমের রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক।
কোনো বানোয়াট তথ্যকে সবচেয়ে বেশী কার্যকর করে তোলার একমাত্র মাধ্যমই গণমাধ্যম। এক শ্রেণীর লোকেরা গণমাধ্যমকে তাদের স্বার্থে ব্যবহারের জন্য, নিজেদের আয়ত্তে আনার জন্য গণমাধ্যমকে পুঁজি করে জনমত ভিন্ন ভাবে গড়ে তোলে। জনগন ও গণমাধ্যমকে আস্থার জায়গা ভেবে প্রতারিত হয় অনেক সময়। গণমানুষের অধিকার নিয়ে যারা কাজ করবে, তারাই যদি আশার অপূর্নতা ঘটায় নিভৃতে তাহলে জনতা যাবে কোথায়?
লাতিন ক্রিয়ামূল ‘Propagare’ থেকে প্রোপাগান্ডা এর উৎপত্তি, উৎসগত ভাবে এর অর্থ বিস্তৃত করা, জন্মদেয়া। অর্থাৎ মনগড়া কোনো তথ্যের জন্ম দিয়ে তা মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা।
আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপটে গণমাধ্যমের এ প্রোপাগান্ডা চালানো খুবই সহজ সাধ্য।কারণ এখানে শিক্ষিত কিংবা এলিট শ্রেণীর মানুষ কম এবং প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষ বেশী। প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের কাছে যা পৌঁছে তারা তা খুব আস্থার সাথে নেয়,কিংবা কোনটা প্রোপাগান্ডা হতে পারে সে বিষয়ে তাদের কোনো জ্ঞান কিংবা আগ্রহ থাকেনা।
গণমাধ্যম অনেক সময় কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে শব্দের গাঁথুনি দিয়ে খুব উপরে কিংবা খুব নিচের তলায় নামিয়ে দেয়।
কোনো ব্যক্তি খুনের দায়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়লেই তাকে দুর্ধর্ষ খুনী বলা হয় পত্র-পত্রিকায়! এটাও প্রোপাগান্ডার অংশ,কেননা আদালতের রায় না হওয়া পর্যন্ত কোনো ব্যক্তিকে খুনী সম্বোধন করা যাবে না,এ অধিকার কারো নেই। গণমাধ্যমকর্মীরা জেনে এবং না জেনেই এ প্রোপাগান্ডা চালায়। আবার দেখা যায় কোনো ব্যক্তিকে সুপরিচিত, জনপ্রিয়, সর্বজন শ্রদ্ধেয় ইত্যাদি অতিরঞ্জিত শব্দ ব্যবহার করে তার দিকে জন সাধারণের দৃষ্টি আকর্ষনের চেষ্টা চালানো হয়। এ দিক গুলোতে সতর্ক থাকতে হবে গণমাধ্যমকে।
প্রোপাগান্ডা একধরনের একমুখী যোগাযোগ, এখানে সবকিছুই পরিচালিত হয় উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভাবে,এবং তথ্যের ধরন বার বার প্রচার করার ফলে অনেক অসত্যকেও সত্যতে রুপান্তরিত হয়। জনমতকে এবং স্বাধীন চিন্তাকে ভিন্ন খাতে পরিচালিত করতে গণমাধ্যমকে ব্যবহার করা হয়। রাজনীতি,সংস্কৃতি,মতামত প্রভৃতির উপর প্রভাব বিস্তার করে গণমাধ্যম এবং প্রোপাগান্ডা গণমাধ্যম এর স্বাধীনতাকে সীমাবদ্ধ রাখার যে প্রক্রিয়া সেটাকে ভেঙ্গে প্রচলিত প্রথা দূর করতে হবে। কোনো ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ হাসিলে যাতে গণমানুষের কোনো ক্ষতি না হয়, নজর এখন সে দিকেই রাখতে হবে।
গণমাধ্যম এবং গণমানুষের সম্পর্কের ওপর যাতে কোনো প্রভাব বিস্তারকারী মাধ্যম না আসতে পারে।
এলিট শ্রেণীর অস্তিত্বকে আরো বেগবান করতে গণমাধ্যম যে প্রচারনা চালায় তা,’স্ট্যাটাস কো’নামে পরিচিত। এই স্ট্যাটাস কো এর থেকে বের হয়ে আদর্শ মতবাদী চিন্তার প্রসার ঘটাতে হবে।
পশ্চিমা গণমাধ্যমের প্রোপাগান্ডার ভিত্তিতেই, ধ্ধংস হয়েছিলো ইরাক, মিথ্যা তথ্য বার বার তুলে ধরে গণমাধ্যম প্রমান করতে চেয়েছে ইরাকে গণবিধ্ধংসী অস্ত্র রয়েছে। বিশ্বের মানুষ ও এটা সহজ ভাবে নিয়েছিলো গণমাধ্যমের প্রচারণার ফলে। কিন্তু আসলেই ইরাকে এমন কিছু ছিলো না, পশ্চিমা মাধ্যম গণসমর্থন আদায়ের জন্য এ প্রোপাগান্ডা চালায়।
এ প্রোপাগান্ডার জের ধরেই ধ্ধংস হতে পারে সমাজ, দেশ। গণমাধ্যমের কাছে এ ক্ষমতাটা রয়েছে।
মানুষের কথা আরো বেশী করে তুলে ধরে মানুষের খুব কাছে নিয়ে যেতে হবে গণমাধ্যমকে। তাহলেই গণের মাধ্যম হয়ে উঠবে গণমাধ্যম। অন্যথায় সমাজ চালিত হতে পারে ভিন্ন পথে।