কতক্ষন ঘুমিয়েছিল আফছার তা টের পায়নি।ফুফাতো ভাই বশিরের ডাকে হতচকিত হয়ে উঠে বসল।শরীর এখন অনেকটা সতেজ লাগছে আফছারের।ঢাকা প্রথম আসার পর যা ঘটেছে তা ভোলার মত নয়।দুপুরের খাওয়া দাওয়ার পর বশির বলল,একটু গেটের কাছে থাকিস।আমি একটু কাচাঁ বাজারে যাব।উকিল সাহেব তরকারি কিনে আনতে বলেছে।এই বলে বশির চলে গেল।
গেটের কাছে ছোট্ট একটা টুলের ওপর বসে রইল আফসার লুঙ্গি পড়া অবস্থায়।বশির ভাই এখানে থাকতে বলেছে পাহারা দেয়ার জন্য।এমন সময় একটি মেয়ে রিক্সা থেকে ভেতরে ডুকে বলল,এই দারেয়ার টাকাটা বাহির থেকে খুচরা করে আনো।মেয়েটির বয়স ১৭/১৮হবে হয়তো।কিন্তু তুমি করে বলল কেন।ওনার থেকে বয়স কি কম মনে হল আফছারের।আবার দারোয়ান বলেও ডাকে।আমাকে কি দেখতে দারোয়ানের মত লাগে নাকি।মনে মনে ভাবতে লাগল আফসার।মেয়েটি বলল,এই কি বলছি শুনতে পাও নি।যাও তারাতারি।রাগ্ত স্বরে বলল মেয়েটি। আফছার কথা না বাড়িয়ে টাকা ভাংতি করে এনে দিল।মুখে আর কিছুই বলল না।ভাড়াটে না বাড়িওয়ালার মেয়ে কিনা কে জানে।নতুন এসেছে তো তাই কাউকেই চিনে না আফছার।পরে আস্তে আস্তে চিনে নিতে হবে।
বশির এ সময় এসে পড়ল শাকসবজি নিয়ে।একটা ব্যাগ আফসারের হাতে দিয়ে বলল,যা রুমে রেখে আয়।আমি উকিল সাহেবের বাসায় এগুলো দিয়ে আসি।বশির চলে যাওয়ার পর আবার ঐ মেয়েটি এসে বলল,এই দারেয়ান তোমাকে ভাংতি করে আনতে বলেছি আর তুমি টাকা ভালভাবে দেখে আনবেনা। একটা ছেড়া টাকা নিয়ে এসেছ।যাও এখনি চেনজ করে নিয়ে আস।এ কথা বলে গজ গজ করতে লাগল মেয়েটি।আফছারের মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল।মানুষ মানুষের সাথে এভাবে কথা বলে কেন।ভালভাবে কি বলা যায় না।নাকি এ শহরের মানুষের ভাষাই এরকম।তাছাড়া তুমি তুমি করে কথা বলে।আদব কায়দা তো মনে হয় মোটেও শিখেনি।টাকা চেনজ করে এনে তারপর কিছু একটা বলবে মেয়েটিকে ভাবল মনে মনে আফছার।
টাকা চেনজ করতে গিয়ে আরেক ঝামেলায় পড়তে হয়েছে আফছারের।যার কছ থেকে ভাংতি এনেছিল সে এখন নেই।অন্য একজন বসা।সে চেনজ করে দিবে না।অনেক বিনয়ের সাথে বলার পর সে চেনজ করে দিল টাকাটা।আফছার মেয়েটির হাতে টাকাটা দেয়ার সাথে সাথে অতি দ্রুত পায়ে চলে গেল।আফছার আর কিছু বলার সুযোগই পেল না।
কিছুখন পর বশির চলে এল।আফছার জিগেস করল,ভাই একটু আগে যে মেয়েটা উপরে গেল সে কে?বশির বলল,উকিল সাহেবের মেয়ে।কলেজে পড়ে।খুবই মেজাজী।কথায় কথায় রেগে যায়।আমরা গরীবরা হলাম ধনীরদের রাগের কারন।যত রাগ আছে সব আমাদের গরীবদের ওপর ঝারে।
আফসার বলল,ভাই মেয়েটি তুমি তুমি করে কথা বলে।শুনতে খুব বিশ্রী লাগে।বড়দের মান্য করে কথা বলতে মনে হয় শিখে নাই।একথা শুনে বশির বলল,তোর সাথে যে তুই তোকারি করে কথা বলে নাই এটাই তোর ভাগ্য।আমাকে তো তুই ছাড়া কথাই বলে না।যাক বাদ দে মেয়েটি রাগী হলেও ভাল আছে।আমাকে মাঝে মাঝে টাকা পয়সা দেয়।চাইলে কখনো না করে না।তবে মেজাজটা একটু খিটখিটে এই আর কি।