একটা ছোট ছেলে তার বাবার সাথে একটা গার্ডেনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলো। যেতে যেতে রাস্তায় ছেলেটা দেখতে পায়, একটা গাছের গুঁড়ি পড়ে আছে। সেটা দেখে কৌতুহলবশত ছেলেটা তার বাবাকে জিজ্ঞেস করে: বাবা আমি কি চাইলে এই গাছের গুঁড়িটা রাস্তা থেকে সরিয়ে ফেলতে পারি? আমার মধ্যে কি এতোটা শক্তি আছে? তার বাবা তাকে কনফিডেন্সের সঙ্গে উত্তর দেয়: অবশ্যই পারো। তুমি যদি তোমার সম্পূর্ণ শক্তি প্রয়োগ করতে পারো, তাহলে তুমি অবশ্যই এই গুঁড়িটা রাস্তা থেকে ঠেলে সরিয়ে ফেলতে পারো।
বাবার কথায় মোটিভেট হয়ে- ছোট্ট ছেলেটা গুঁড়িটার কাছে গিয়ে নিজের সব শক্তি প্রয়োগ করে, সেটাকে ঠেলে সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করে। কিন্তু দুঃখের বিষয়- গুঁড়িটা নিজের জায়গা থেকে একটুও নড়ে না। ছেলেটা আরো একবার জোরে সেটাকে সরানোর চেষ্টা করে, কিন্তু কোনো লাভ হয় না। গাছের গুঁড়িটা যেমন-কে-তেমন নিজের জায়গাতেই থাকে।
সে হতাশ হয়ে বাবার কাছে ফিরে এসে বলে: বাবা তুমি আমাকে মিথ্যে আশা কেন দেখালে? আমি তো এতো চেষ্টা করেও এই গুঁড়িটাকে একটুও সরাতে পারলাম না। তার বাবা তাকে উত্তরে বলে: আমি তোমাকে কি বলেছিলাম তুমি হয়তো ঠিকমতো শোনোনি, ছেলেটা বলে: তুমি আমাকে বলেছিলে, যে আমি যদি নিজের সম্পূর্ণ শক্তি প্রয়োগ করতে পারি, তাহলে আমি এই গুঁড়িটাকে রাস্তা থেকে ঠেলে সরিয়ে ফেলতে পারবো। আর আমি সেটাই করেছি। আমি আমার সব শক্তি প্রয়োগ করেছি এটাকে সরানোর জন্য। কিন্তু আমি গুঁড়িটাকে সরানো তো দূরের কথা, এটাকে নড়াতেও পারিনি।
এরপর তার বাবা তার পাশে বসে তাকে বলে: তুমি শুধু নিজের মধ্যে থাকা শারীরিক শক্তিকে প্রয়োগ করেছো। যেটা তোমার সম্পূর্ণ শক্তির মাত্র একটা ছোট অংশ। তুমি কিন্তু চাইলে নিজের বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে- আমার সাহায্য চাইতে পারতে।
এই পৃথিবীতে এমন অনেক কাজ আছে- যা কখনোই কারো পক্ষে একা করা সম্ভব নয়। আর কোনো কাজ কারো পক্ষে একা করা সম্ভব নয় মানে এটা নয়, যে সেই কাজটা তার পক্ষে করাই সম্ভব নয়। যেটা একা করা সম্ভব নয়, হতে পারে সেটা দু’জনে বা পাঁচজনে খুব সহজেই করে ফেলা সম্ভব।
এই পৃথিবীর ধনী ব্যক্তি Jeff Bezos কিন্তু একা হাজার চেষ্টা করলেও অ্যামাজনের মতো কোম্পানি চালাতে পারতো না। তারও সেই কোম্পানিকে চালিয়ে, এতো বড় করার জন্য অনেক মানুষের দরকার হয়েছে। এই পৃথিবীর বিখ্যাত ক্রিকেট প্লেয়ার Sachin Tendulkar-ও কিন্তু একার ক্ষমতায় এতো বড় প্লেয়ার হননি। তারও কোচের দরকার পড়েছিল।
আমরা যে ফিল্ডেই নিজের ভবিষ্যৎ গঠন করতে চাই না কেন, আমাদের কারো না কারো সাহায্যের দরকার পড়বেই। কিন্তু সমস্যাটা হলো- স্টুডেন্ট লাইফ থেকেই আমাদের মধ্যে কিছু মানুষের মনে একটা মাইন্ড ব্লকেজ তৈরি হয়ে যায়, যে আমি একাই সব পারি। আর এই মাইন্ড ব্লকেজটা ভবিষ্যতে গিয়ে আমাদেরই অনেক বড় ক্ষতি করে দেয়। আমাদের অসুবিধার সময় কারো কাছে সাহায্য চাইতে যাওয়ার আগে আমাদের EGO আমাদের বাঁধা দেয়। সাহায্য কিন্তু আমাদের চাইতে হয় কিন্তু যদি মাইন্ডে ব্লকেজ থাকে, তার প্যাটার্নটা বদলে যায়।
আমরা যদি কম বয়স থেকে এটা ভাবি- যে আমরা একাই উন্নতি করতে পারব, আমাদের উন্নতির জন্য কারো সাহায্য দরকার পড়বেনা, তাহলেও আমাদের সাহায্য দরকার পড়বে। আর আমরা যদি কম বয়স থেকে মাইন্ডসেট তৈরি করে নিই, যে আমরা কারো সাহায্য ছাড়া উন্নতি করতে পারব না, তাহলেও আমাদের সাহায্য দরকার পড়বে।
শুধু তফাতটা হবে- প্রথমটার ক্ষেত্রে আমরা একটা বড় গ্রুপের একটা ছোট্ট মেম্বার হবো, আর আমাদের অনিচ্ছাসত্ত্বেও ওপর থেকে কেউ আমাদের সাহায্য করবে। আর দ্বিতীয়টা ক্ষেত্রে আমরা একটা বড় গ্রুপের লিডার হবো, যেখানে আমাদের পাঁচ থেকে একসাথে অনেকজন সাহায্য করবে। আর একজনের সাহায্য আমাদের শক্তিকে যতোটা বাড়িয়ে দেবে, একশজনের জনের সাহায্য কিন্তু আমাদের শক্তিকে অনেক অনেক গুণে বেশি বাড়িয়ে দেবে।
তাই স্টুডেন্ট লাইফ থেকেই আমাদের প্রত্যেকের এটা ভালোভাবে অ্যাকসেপ্ট করে নেওয়া উচিত, যে আমরা একা একা কখনোই বড় সাকসেস ক্রিয়েট করতে পারবোনা। ইতিহাস কখনো একজনের উপর বেজ করে তৈরি হয় না, সেখানে অনেক চরিত্র থাকে।
তাই কখনো কারো কাছে সাহায্য চাইতে আমাদের লজ্জা পাওয়া উচিত নয়। আর EGO-কে মাঝে আনা উচিত নয়। একজন সাহায্য না করলে দশ জনের কাছে সাহায্য চাইবো, দশ জন না করলে একশ জনের কাছে চাইবো। কেউ না কেউ তো হেল্প করবেই।
আর হ্যাঁ, আমরাও অন্যের স্বপ্নের সাহায্যকারী অবশ্যই হবো। কারণ, সাহায্য করলে তবেই কিন্তু সাহায্য পাওয়া যায়।