মাঠে পানি তুলতে তুলতে দুপুর গড়িয়ে বিকাল হল। পেটে ক্ষুধাও লেগেছে বেশ। তাই তাড়াতাড়ি হাতের কাজ শেষ করে বাড়িতে ফিরে খাবার খেয়ে নিল নয়ন। এর কিছুক্ষণ পর তানিয়ার ফোন এলো।
– এই যে, হুনছো… আমি বাড়িতে আইয়া পড়ছি। দুপুরে কি ভাত খাইছিলা? তানিয়া জিজ্ঞেস করল নয়নকে।
– দুপুরের খাওন এইমাত্র খাইলাম। সকাল বেলা ক্ষেতে পানি তুলবার যায়া অহন মাত্র ফিরা আইলাম।
– হুনো, কাইলকা তোমার আওন লাগবো। মায় কইছে তুমারে যাতে কবার কই। মেলাদিন ধইরা পিডার চাইল রাখছে, আমরাও আইতাছি না দেইক্কা পিডা বানায় হেরাও খাবার পাইতাছে না আঙ্গরেও খাওয়াবার পায়তাছে না। তুমি কালকাই আবা।
– আইচ্ছা, তাইলে যাইরো। তাইলে অহন রাইক্কা দে। এই বলে নয়ন ফোন কেটে দিল।
পরদিন সকাল বেলা নয়ন ঘুম থেকে উঠে শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিল। তারপর বাড়ি হতে বের হয়ে একটা অটোতে চেপে বসল। উদ্দেশ্য তাড়াতারি শ্বশুড়বাড়ি পৌঁছা। কারণ অটো হতে নেমে আবার খানিকটা পথ পায়ে হেটে যেতে হয়। ওদিকের রাস্তা কাঁচা এবং অনুপযুক্ত বলে অটো যেতে চায় না। নয়ন অটো হতে নেমে পায়ে হাটা রাস্তা ধরে হাটা শুরু করে দিয়েছে….
– ভাবি, আমার সবগুলা কাপড় ধুয়া দিছি। একটা কাপড় দেন তো? বলল তানিয়ার চাচি তার মায়ের কাছে।
– আমি মাত্র গোসল করলাম, আমার কাপড় তো এহন ভিজা। এই তানিয়া তর একটা কাপড় দে ত তর চাচিরে। বলতেই তানিয়া তার একটা কাপড় তার চাচির জন্য বের করে নিয়ে তাকে দিয়ে দিল। তানিয়ার চাচি ঐ কাপড় পরিধান করে তাদের ছাগলটি নিয়ে রাস্তার ধারে খুটা গেড়ে দিচ্ছে..
-দূর থেকে নয়ন ছাগলের খোটা গাড়ার এই দৃশ্য দেখতে পেল। সে ধরে নিল এটা নিশ্চয়ই তানিয়া। সে চারিদিকে তাকিয়ে দেখলো আশেপাশে জনমানুষের কোন চিহ্ন নেই। তাই সে ভাবল এটাই সুযোগ তানিয়াকে চমকে দেওয়ার। সে দূর থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল….
পিছন দিক থেকে চুপি চুপি এসে পিছন বরাবর লাথি দিয়ে বলে উঠলো- এই মাগি, একা একা এখানে কী করতাছস?
– লাথি গেয়ে তানিয়ার চাচি রাস্তার সাইড থেকে গড়িয়ে ধানক্ষেতে পড়ে চেচিয়ে উঠলো- এই কে রে তুই হারামির বাচ্চা? নয়ন যেই মাত্র শুনতে পেল অন্যরকম গলার আওয়াজ তখনই উল্টো দিকে দিল ভূঁ দৌড়। তারপর অটোতে চেপে বাড়িতে চলে আসল। এসেই ফোন দিল তানিয়াকে..
– এই তর কাপড় পড়ে ছাগল নিয়া সড়কে গেছিল কারা?
– ক্যা, কি অইছে?
– আরে মাগি, তরে মনে কইরা ত পিছন থাইক্কা একটা লাথি মাইরা ফালাই দিছি রাস্তা থাইক্কা।
– হায় হায়! কও কি? ওটা তো আমার চাচি আছিল। তাই তো চাচি রাস্তা থাইক্কা মুক করতে করতে (গালি দিতে দিতে) আইতাছিল আর কইতাছিল- খালি একবার দেগবার পাইলে অইত কোন গোলামের বেডায় আমারে লাথিডা মারলো।
– অহন তাইলে কী আইবো? অহন ত শরমে আর বাচুনের রাস্তা নাই। হায় হায়! ভাবলাম কি আর অইল ডা কি? তরে কাপড়ডা দিবার কইছে কেড়া? তুই কাপড়ডা না দিলে কি এই কামডা অইত? ইস…..
গল্পের শিক্ষাঃ সহজে অন্যের কাপড় পরিধান করা উচিত নয়। বিশেষত মহিলা মানুষের। তাছাড়া একজনের মত কাপড় দেখলেই মুখ দেখা ছাড়া ধারণা করে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়।