আসসালামু আলাইকুম। প্রিয় পাঠকবৃন্দ, আশা করি সবাই ভালো আছেন। সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় আমিও ভালো আছি। আজকে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করার চেষ্টা করব ঘর থেকে বের হওয়ার সময় কোন পা আগে (আদব ও সুন্নাহ )। আশা করি আপনাদের অনেক ভাল লাগবে।
অনেকক্ষেত্রেই ডান বা বাম আমাদের কাজের উপর বড় প্রভাব রাখে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ডানকে ভালো হিসেবে মনে করা হয় ও বামকে খারাপ হিসেবে। সাধারনত ভালো বা পবিত্র কোনো কাজ ডান দিক থেকে ও অপবিত্র বা অসুন্দর কাজ বাম হাত দিয়ে করতে হয়। যেমন আমরা সাধারণত ডান হাত দিয়ে কোনো খাবার খাই। ঠিক তেমনি ঘরে প্রবেশ কিংবা ঘর থেকে বের হওয়ার ক্ষেত্রেও শরিয়া ভিত্তিক কিছু আইন রয়েছে। যা পালন করাতে সওয়াব আছে। তো তাই সওয়াব অর্জনের উদ্দেশ্যে ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য আমাদের এসকল কাজ পালন করতে হবে। এসকল কাজ হযরত মুহাম্মদ (স.) পালন করেছে বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। তাই তার অনুসারী হিসেবে আমাদের অবশ্যই এ কাজ পালন করা উচিত।
ঘর থেকে বের হওয়ার সময় কোন পা আগে দেয়া উচিত
ঘর থেকে বের হওয়া বা ঢোকা কিংবা মসজিদ থেকে বের হওয়া বা ঢোকার ক্ষেত্রে কোন পা দিতে হয় তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট হাদিস ও সুন্নাহ রয়েছে। এগুলোকে আমরা আদব বলতে পারি। আমরা মসজিদে প্রবেশের সময় ডান পা আগে দিয়ে ঢুকব ও বের হওয়ার সময় বাম পা আগে দিয়ে বের হবো। ঠিক তেমনি বাড়িতে প্রবেশের সময়ও ডান পা আগে দিয়ে ঢুকব ও বের হওয়ার সময় বাম পা আগে দিয়ে বের হব। এ সম্পর্কিত বেশ কিছু বর্ণনাও রয়েছে। নিম্নে কিছু দেওয়া হলো।
আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন,
“সুন্নাত হচ্ছে, যখন তুমি মসজিদে প্রবেশ করবে তখন ডান পা আগে বাড়িয়ে দিয়ে প্রবেশ করবে। আর যখন মসজিদ থেকে বের হবে তখন বাম পা আগে বাড়িয়ে দিয়ে বের হবে।”
শুধুমাত্র যে মসজিদে প্রবেশের ক্ষেত্রে তা কিন্তু নয় মুহাম্মদ (স.) সকল কাজ (ভালো কাজ) ডান দিক থেকে শুরু করত ও তারপর বাম দিকে করত।
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন,
“হযরত মুহাম্মদ (স.) সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যথাসাধ্য প্রতিটি কাজ ডান দিক থেকে শুরু করাই পছন্দ করতেন। পবিত্রতা অর্জন, মাথা আঁচড়ানো এমনকি জুতা পরায়ও।” (বুখারি ও মুসলিম)
মহানবি হযরত মুহাম্মদ (স.) বলেন,
যখন তোমাদের কেউ খায় সে যেন ডান হাতে খায় ও পান কর সে যেন ডান হাতে পান করে। কারণ শয়তান তার বাম হাতে খায় ও পান করে।’ (মুসলিম)
আবার হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত,
যে তার বাম হাতে খায়, শয়তান তার সঙ্গে খায়। আর যে তার বাম হাতে পান করে, শয়তান তার সঙ্গে পান করে।’ (মুসনাদে আহমাদ)
অর্থাৎ যেকোনো ভালো কাজ আমাদের ডান দিক থেকে শুরু করতে হবে। আর অবশ্যই মসজিদে বা ঘরে প্রবেশও একটি ভালো কাজ তাই মসজিদে বা ঘরে প্রবেশের ক্ষেত্রে ডান পা আগে দিতে হবে ও বের হওয়ার সময় বাম পা আগে দিতে হবে।
আগে পরে পা ফেলার বিষয়টা কতটুকু যুক্তিযুক্ত?
আমি ইতিমধ্যেই বেশ কিছু হাদিস দিয়েছে। যেখানে আমরা স্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছি মুহাম্মদ (স.) সর্বদা সকল কাজ ডান দিক থেকে করত এমনকি মসজিদে প্রবেশের ক্ষেত্রেও ডান পা আগে ফেলত। আর আমরা যেহেতু মুসলমান ও মুহাম্মদ (স.) এর অনুসারী সেহেতু আমাদের অবশ্যই সে যা যা করে তা করা উচিত। আর যেহেতু মুহাম্মদ (স.) মসজিদে বা ঘরের মধ্যে প্রবেশের সময়ে ডান পা আগে দিত সেহেতু আমাদেরও তা করতে হবে। তাছাড়া এতটুকু কাজ করলে তো আমাদের কোনো ক্ষতি নেই। তো এতটুকু কাজের বিনিময় আমরা সওয়াব অর্জন করব ও আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে পারব। তো আমাদের অবশ্যই এতটুকু কাজ করতে পারি।
ঘরের বাইরে যাওয়ার সময় কোন দোয়া পড়তে হয়?
আমাদের যেকোনো ভালো কাজ করার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট দোয়া রয়েছে। এই দোয়া পাঠের মাধ্যমে আমাদের সেই ভালো কাযে সাফল্যতা লাভের সুযোগ বেরে যায়। তার পাশাপাশি সওয়াব অর্জন করা যায় ও আল্লাহর সন্তুষ্টিও অর্জন করা যায়। ঠিক তেমনি ঘরের বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রেও একটি দোয়া রয়েছে।
দোয়াটি হচ্ছেঃ
بسم الله توكلت على الله لا حول ولا قوة الا بالله
এর উচ্চারণ হলোঃ বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহি লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহি।
অর্থঃ আমি আল্লাহর নাম নিয়ে আল্লাহর উপর ভরসা করে বের হচ্ছি। একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য আর কারাে কোনাে শক্তি নেই।–(আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ)
ফলাফলঃ এই দোয়ার ফলাফল সম্পর্কে আমরা হাদিসে বর্ণনা পাই। বর্ণনাটি হলোঃ
উক্ত দোয়া পাঠকারীকে ফেরেশতারা বলেন- হে আল্লাহর বান্দা! তোমার এ নিবেদেন তোমার জন্য যথেষ্ট। তুমি পূর্ণ হেদায়েত পেয়ে গেছ এবং তোমার হেফাজতের ফয়সালা হয়ে গেছে। অতঃপর শয়তান নিরাশ হয়ে তার কাছ হতে দূরে চলে যায়। ( তিরমিযী শরীফ, আবু দাউদ শরীফ)
তো আমরা অবশ্যই বাড়ি বা মসজিদে প্রবেশের ক্ষেতে এসকল সুন্নাহ ও আদব পালন করব। আমরা অবশ্যই বাড়িতে প্রবেশের ক্ষেত্রে ডান পা আগে দিব ও বের হওয়ার সময় বাম পা আগে দিব। এবং অবশ্যই বাড়িতে প্রবেশের সময় উল্লেখিত দোয়া পাঠ করব। এবং এতটুকু কাজের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করব। শুধু এক্ষেত্রেই নয় বরং সকল ভালো কাজ আমরা ডান দিক দিয়ে করব ও এরকম সহজ কাজের মাধ্যমে সওয়াব অর্জন করব।
পোস্টটি কেমন লাগলো দয়া করে কমেন্টে জানাবেন, যদি ভাল লেগে থাকে তাহলে অবশ্যয় শেয়ার করবেন, পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। এমন সব দারুন দারুন পোস্ট পেতে Grathor এর সাথেই থাকুন এবং গ্রাথোর ফেসবুক পেইজ ও ফেসবুক গ্রুপ এ যুক্ত থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।