জানুয়ারী মাস। শীতের দিন। বন্ধুরা সবাই ঠিক করলাম কক্সবাজার ভ্রমনে যাবো। বছরের প্রথম মাস তাই সবাই যেতে আগ্রহী হল। এ মাসে অফিসে তেমন একটা কাজ থাকে না। তাই সবাই উৎফুল্ল হয়ে ঘুরতে যাওয়ার জন্য রাজি হয়ে গেলো। যেমন ভাবা তেমন কাজ। ঠিক হল জানুয়ারি মাসের ৫ তারিখ সবাই কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দিবো। আমরা ৬ জন ছিলাম অভি,শুভ,রুমন,রিফাত,জুয়েল আর আমি। এদিকে সবাই গোছগাছ করতে লাগলাম আর অপেক্ষা করতে লাগলাম মহেন্দ্রক্ষনের। অবশেষে আসলো ৫ জানুয়ারি,রাত ১১ টায় আমাদের বাস। টিকেট আগেই কেটে রাখছিলাম। আমাদের গন্তব্যস্থল ফেনী টু কক্সবাজার। ফেনী শহরটা আমাদের এলাকা থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে। তাই সিএনজি ড্রাইবার রমিজ কাকাকে আগেই বলে রাখছি। রাত ৯ টার দিকে আমাদের সিএনজি আসলো,একে একে সবাই আমরা উপস্থিত হলাম। এদিন যেন শীত একটু বেশী পরতেছে। রাত ১০ টার মধ্যে আমরা বাস কাউন্টারে পৌঁছে গেলাম। বাকি ১ ঘন্টা আমরা গল্প করে কাটিয়ে দিলাম। অবশেষে গাড়ি ছাড়লো কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে। সাথে হালকা খাবার আর পানি নিলাম। বাসের মধ্যে কারো ঘুম আসছিলো না উত্তেজনায়,যেহেতু এটি আমাদের প্রথম কক্সবাজার ভ্রমন। প্রায় ৭ ঘন্টা জার্নি করে ভোর ৬ টায় আমরা আমাদের স্বপ্নের যায়গা কক্সবাজর নামলাম। চারদিক ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা। কিছু দেখা যাচ্ছে না,একটা হোটেলে ঢুকে নাস্তা খেলাম। চারদিক আস্তে আস্তে আলোতে ভরে উঠতেছে,সূর্যি মামা পুবআকাশে উকি দিচ্ছে। পৃথীবির সবচেয়ে বড় সমুদ্র সৈকত আমাদের সামনে। এদিন টিভিতে দেখছি,বইতে পড়ছি। বাস্তবে এটি আরো সুন্দর আরো চমকপ্রদ। যে যার মত আনন্দ করতে লাগলাম। সূর্য যখন মাথার উপরে তখন আমরা বীচ এ নামলাম। জল ছোড়াছুড়ি করতে লাগলাম। স্পীড বোর্ড গুলা ভাড়া করে সমুদ্রকে আরো কাছছ থেকে দেখলম। এভাবে দুপুর ২ টা বেজে যায় গোসল ছেড়ে হোটেলে দুপুরের লাঞ্চ সারলাম সামুদ্রিক মাছ আর ঐতিহ্যবাহী শুটকি ভর্তা দিয়ে। আহ! কি স্বাদ। খাওয়া শেষ করে কিছুক্ষন রেষ্ট নিয়ে আবার বীচে গেলাম,হেঁটে হেঁটে দেখতে লাগলাম অফার সৌন্দর্য্য।অনেক গুলা ছবি ক্যামেরাবন্দি করলাম। সবাই যে যার মত ছবি আপলোড করতেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলাতে। সমুদ্র দেখতে দেখতে কিছুক্ষনের জন্য নির্বাক হয়ে গেছিলাম। কত বড় সমুদ্র কত তার জলরাশি,কত সুন্দর এই পৃথীবি। সৃষ্টি কর্তাকে ধন্যবাদ দিতে ভুলি নি। হঠাৎ বন্ধুদের ডাকে চেতনা ফিরলো। প্রায় ২ ঘন্টা বীচে ঘুরে ঘুরে দেখলাম।সন্ধ্যা নেমে এল, এবার আমরা যাবো ঐতিহ্যবাহী বার্মিজ মার্কেটে। লোকমুখে শুনেছি এখানকার ব্যবহৃত জিনিসের গুনের কথা। আজ স্বচক্ষে দেখবো। টমটমে চেপে বসলাম। উদ্দেশ্য বার্মিজ মার্কেট। মার্কেটের সামনে নামলাম। ভাড়া চুকিয়ে মার্কেটের ভেতরে ঢুকলাম। ঢুকতেই আচারের গন্ধ নাকে এসে লাগলো। কত সুন্দর সুন্দর জিনিস,দামেও তুলনামূলক সস্তা। প্রয়োজনমত কিছু কেনাকাটা করলাম, সাথে আচার নিতে ভুলি নাই। হোটেলে এসে সন্ধ্যায় হালকা নাস্তা করলাম। এবার আমাদের যাওয়ার পালা,সবার মন খারাপপ। আনন্দের মুহুর্ত গুলো যেন তাড়াতাড়ি চলে যায়। ফেনীর উদ্দেশ্যে বাসে চেপে বসলাম। গাড়ি ছাড়লো। সবাই বসে বসে ক্যামেরাবন্ধি স্মৃতি গুলো দেখতেছি। এটি ছিল আমাদের প্রথম ভ্রমনের সাথে রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা, যা কখনো ভোলার নয়।
আবার কবে হুইসেল বাজবে রমনা লোকালের?
২০২০ সালের ৮ মার্চ । চিলমারীর রমনা স্টেশন থেকে ছেড়ে দেয় রমনা লোকাল। গন্তব্য পার্বতীপুর। ট্রেনটি ফিরবে আবার যাবে এমনটাই...