বাংলাদেশে-ভারত সীমানা লাগোয়া ইউনিয়ন লেংগুড়া । বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের ঠিক মধ্যভাগে অবস্থিত এই ইউনিয়ন । প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের নীলাভূমি বলা চলে । কী নেই সেখানে আছে পাহাড়, সিলাকা বালীর নদী, বিশাল গজারীগাছের বাগান, সামাজীক বাগান, বিস্তৃন ধানী জমির মাঠ, আদিবাসী জনগোষ্ঠী ও তাদের বৈচিত্রময় জীবন ধারা ।
সেখানে যেতে হলে আপনাকে প্রথমে যেতে হবে ময়মনসিংহ সেখান থেকে বাসে অথবা সিএনজি করে সুসং দূর্গাপুর পরে দুর্গাপুর থেকে অটো অথবা মোটরসাইকেল করে সোজা লেংগুড়া । যখন বিরিশিরি পৌছাবেন তখনী ভারত থেকে নেমে আসা নদী শ্বমেশরী আপনাকে স্বাগতম জানাবে। হাতছানী দিয়ে ডাকবে মেঘালয়ের বিশাল বিশাল পাহাড় । যদি কিছুদিন থাকার ইচ্ছা থাকে তাহলে দূর্গাপুর বা বিরিশিরিতে থেকে যেতে পারেন কোন একটি হোটেলে । লেংগুড়াতে কোন থাকার হোটেল এখনো গড়ে উঠেনি । দূর্গাপুরেও আছে মন ভুলালো অনেক দর্শনীয় স্থান । বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় চিনা মাটির খনী যেখানে বিশাল বিশাল গর্তে সৃষ্টি হয়েছে নীল লেক এর সুইমিং পুল সেখানে আপনার দেহখানী শিতল করে নিতে পারেন একটু সাবধানতা অবলম্বন করে কোন টাকা পয়সা লাগবে না । আছে টংক আন্দোলনের সৃতিশোধ, গোপালবাড়ির পাহাড়, বিজয়পুরের বিজিবি ক্যাম্প ও গির্জা, সুসং রাজ্যের রাজবাড়ী, স্বচ্ছ্য পানীর নদী ও সিলিকা বালির নদী নামে খ্যাত শ্বমেশরী নদী । সন্ধা হওয়ার আগে একটু ঢু মারতে পারেন আত্রাখালী নদীর ব্রিজে । দেখবেন সময় যে কিভাবে চলে যাচ্ছে বুঝতেই পারবেন না মনে হবে ঈশ্ব আর একটু সময় যদি হাতে থাকতো ।
এবার আসি লেংগুড়া ইউনিয়নের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের কথায় । লেংগুড়া বাজার থেকে একটু সামনে এগুলেই চোখে পরবে ছোট টিলায় হরি মন্দির । এটা আদিবাসী হাজং মন্দির । বাগান ঘেড়া মন্দিরের উপরে চালা করা পাকা ফ্লোর বসে একটি বিশ্রাম করে নিতে পারেন । এই সুযোগে যদি মন চায় তাহলে নিজেকে ক্যামেরা বন্দি করেও ফেলতে পারেন লেংগুড়ার প্রকৃতির সাথে । এর পর সেখান থেকে খানিক দুরেই রাস্তা দু ভাগ হয়ে চলে গেছে দু পাশে আপনি বাম দিকে গেলে পরবে ফুলবাড়ি বাজার ও পাহাড় । আর সোজা উত্তরে গেলেও পাহাড়ের দেখা পাবেন । ডানদিকে কিছুদূর গেলেই দেখতে পাবেন পাহাড় আপনাকে আলিঙ্গন করতে ডাকছে । পাহাড়ে উঠাল আগে প্রয়োজনীয় জিনিস সঙ্গে করে নিতে পারেন বাজার থেকে এই যেমন পানি, হালকা খাবার । পাহাড়ে উঠে এদিক সেদিক ঘোড়াঘুরি করে নেওয়ার পর যখন ক্লান্ত হয়ে পরবেন তখন সঙ্গে করে নেওয়া পানি , ও খাবার খেয়ে নিতে পারেন । তারপর সাত শহীদ মাজার যখন পাহাড়ে উঠেছেন তখন অবশ্যই চখে পরবে নদীটা ঠিক উত্তর থেকে বয়ে চলে এসেছে । এখন আপনার গন্তব্য সেখানেই । যেখানে দুটি নদীর শাখা একস্থানে মিলিত হয়ে গনেশ্বরী নদী নামে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে । সেখানে গিয়ে দেখতে পাবেন ৭১ সালে পাকিস্থানিদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হওয়া ৭ জন শহীদ শায়িত আছে । বিশাল মেহগনী বাগান ঘেড়া স্থানটি দেখতে বেশ ভালই লাগে পূর্ব পাশে গনেশ্বরী নদী তাঁর ওপারে ভারতের মেঘালয় রাজ্য । দেখবেন মনে হবে যেন সেখানের প্রকৃতি আপনাকে ছাড়তেই চাইবে না ।
যদি হাটার অভ্যাস থাকে তাহলে তাঁর একটু দক্ষিনে এসে ছোট পথ ধরে চলে যেতে পারেন কাউবাড়ির ছোট নদি দেখতে সে নদি পার হয়ে সামনে এগুলেই চোখে পরবে কালাপানী খেলার মাঠ বিকাল বেলা জায়গাটায় বেশ প্রশান্তি এনে দেয় মনে । ছোট ছোট আদিবাসী ছেলে মেয়েরা খেলা করে । অন্য সব আদিবাসী লোকেরা তাদের দৈনন্দিন কার্যাদি সম্পর্ন করে । চারিদিকে শুনশান নেই কোন গাড়ীর আওয়াজ । শুধু পাখির ডাক শুনা যায় । সেখান থেকে সোজা ফুলবাড়ি যদি রাস্তা চিনতে সমস্যা হয় তাহলে সেখানের সরলমনা আদীবাসী যে কাওকে বললেই তারা আগ্রাহভরে বলে দিবে এই দিকে যায় বা কখনো নিজেই পৌছে দিয়ে যাবে কিংবা অন্য কাউকে বলে দিবে আপনাদের নিয়ে যেতে ।
যদি বেশি এডভ্যান্সারের ইচ্ছা থাকে তাহলে যেতে পারেন গোপালবাড়ি চেংগনী, সেখানে কাউকে যদি বলেন যে আমাদের আপনাদের এলাকাটা ঘুড়ে দেখাবেন । দেখবেন কেও না কেও অবশ্যই আপনাকে নিয়ে রওনা হয়ে যাবে সুন্দর সুন্দর স্থানগুলো ঘুরিয়ে দেখাতে । সেখান থেকে বর্ডার দিয়ে সোজা কাঠালবাড়ি আসা যায় । কখনো পাহাড়ের উপর কখনো বা কাদা মারিয়ে আবার কখনো সমতল রাস্তায় । ভালোই লাগে মাঝে মাঝে আদিবাসী গারোদের ছোট ছোট ঘড় তাদের বৈচিত্র ময় জীবন ধারা ভালোই লাগবে । পানি টেষ্টা পেলে কারো বাড়ি গিয়ে বল্লেই দেখবেন কত খুশি হয়ে তারা আপনাকে বসতে বলে আর পানি খেতে দেবে । কাঠাল বাড়ি হয়ে চেয়ারম্যানের টিলা দিয়ে সোজা লেংগুড়া হাজাং পাড়া শাশ্মান সেখনেও আছে দেখার মত কিছু পাহাড় তবে অনেক উঁচু ইচ্ছা থাকলে চরে দেখতে পারেন সে পাহাড়েও । অনেক ক্লান্ত হয়ে পরলে বিশাল বটবৃক্ষের তলায় খানিক বিশ্রাম করতে পারেন । তারপর সোজা গনেশ্বরী নদীর পার ঘেষে বয়ে চলা কাচা রাস্তা দিয়ে লেংগুরা বাজার ।