গতকাল শনিবার সকালে রাজধানীর সূত্রাপুরে নিজ বাসায় মারা যান এক সময়ের শক্তিমান অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান। একটা সময়ে বিশেষ করে খলনায়কের চরিত্র দিয়ে বড় পর্দায় দর্শক মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি। আর ছোট পর্দায় কিংবা নাটকে পরবর্তীতে তাকে হাসির চরিত্রে কিংবা বিচক্ষণ চরিত্র হিসেবে অভিনয় করতে দেখা গেছে। পর্দায় যতই জটিল অভিনয় করতে হোক না কেন, বাস্তবে একদম সাধাসিধে স্বভাবেরই ছিলেন তিনি। সাম্প্রতিক সময়ে তাকে টকশো কিংবা ইন্টাভিউতে দেখা গেলেও নাটক অথবা সিনেমায় তার তেমন একটা উপস্থিতি ছিলো না। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৭৯ বছর। দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি। ১৯৪১ সালে এই শক্তিমান অভিনেতার জন্ম আর একটা দীর্ঘ সময় ধরে পর্দায় অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকদের আনন্দ দিয়ে এসেছেন এবং অবশেষে পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে তিনি চলে গেলেন। রাজধানীর জুরাইন কবরস্থানে বাদ জোহর তাকে সমাহিত করা হয়েছে।
গতকাল সকাল দশটার দিকে তার ছোট ভাই প্রথমে গণমাধ্যমে শোকের সংবাদটি জানান। এরপর তার বাসার নিচে ভিড় জমে যায়। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এই খ্যাতিমান অভিনেতার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। এরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খবরটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং শোকের ছায়া নেমে আসে। একসময় পর্দার পরিচিত মুখ ছিলেন এটিএম শামসুজ্জামান। ১৯৬০ এর দশকে তার সিনেমায় পথচলা শুরু। এরপর একের পর এক ছবি উপহার দিয়ে গেছেন দর্শকদের। কখনো হাস্যরসের মধ্য দিয়েও খলনায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন তিনি। অভিনয়ের জন্য ছয়বার জাতীয় পুরষ্কার পেয়েছেন এবং ২০১৫ সালে তাকে একুশে পদকে ভূষিত করা হয়। তার জন্য সিনেমায় আসার পথটা সহজ ছিলো না। একটি ইন্টারভিউতে তিনি বলেছিলেন- তার জন্ম নোয়াখালিতে এবং ঢাকায় তিনি বড় হন। তার বাবা পেশায় একজন উকিল ছিলেন এবং তিনি চাইতেন ছেলেও এই একই পেশায় নিয়োজিত করুক নিজেকে। কিন্তু অভিনয়ের প্রতি টান আর ভালোবাসা তাকে সিনেমার আর নাটকের জগতে নিয়ে আসে। তিনি অভিনয়ের পাশাপাশি পরিচালক, স্ক্রিনপ্লে এবং গল্প লেখক হিসেবেও কাজ করেছেন। বিষকন্যা ছবিতে প্রথম সহকারি পরিচালক হিসেবে তিনি কাজ করেছিলেন ১৯৬১ সালে। এরপর একের পর এক কাজের সুযোগ পান এবং দর্শকদের হতাশ করেননি তিনি।
তার অর্জনের খাতাটা বেশ লম্বা কিন্তু চলে যাবার নিয়মে সবাইকেই একদিন চলে যেতে হয়। দীর্ঘদিন শারীরিক অসুস্থতা আর বার্ধক্যজনিত জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি। এমনকি গত বুধবারে তাকে হাসপাতালেও ভর্তি করা হয়েছিলো। এরপর তিনি বাসায় ফেরেন এবং শনিবার নিজের বাসাতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। অভিনেতা চলে গেছেন কিন্তু রেখে গেছেন অগণিত ভক্ত,গুণগ্রাহী, দারুণ সব কাজের উদাহরণ আর সংলাপ। এখনো দর্শকদের কানে আগের দিনের সেইসব শক্তিশালী আর সাড়া জাগানো সংলাপ বাজে। দিনগুলো আর ফিরে আসবে না ঠিকই কিন্তু স্মৃতিতে রয়ে যাবে অমলিন। অনেকদিন তার অভিনয় আর কাজের জন্য এই শক্তিমান অভিনেতাকে মনে রাখবেন দর্শক।