বহুদিন আগে একটা বন ছিল। বনের নাম ঝাড়খণ্ড। এই বনে থাকতো একটা চালাক শিয়াল। শিয়ালটা ছিল খুবই ধূর্ত। সে ওই বনের সবচেয়ে বড় চালাক। তাকে ঠকাতে পারে এমন কেউ নেই। বরং; তার কাছে সবাই ঠকে যায়। সে এমন সব বুদ্ধি করে পশুদেরকে ঠকায় যে, কোনো পশুই বুঝতে পারে না যে সে ঠকে গেছে। মাঝে মাঝে ঠকে যে গেছে, সেটা তারা বুঝতে পারলেও, কে ঠকিয়েছে তা তারা বুঝতে পারে না।
এভাবে পশুদেরকে ঠকিয়ে সে আরামে মজা করে খেত। ওই বনের বাঘকেও সে ঠকিয়ে বাঘের শিকার সে খেয়ে নিয়েছে। এমনকি বনের রাজা সিংহকেও সে ঠকাতে ছাড়ে না। তাই তার মতো চালাক ওই বনে আর কেউই নেই। বন্ধুরা চল, তার ঠকানোর কৌশল সম্পর্কে একটা কাহিনী বলি।
একবার শিয়ালটা বনের রাস্তায় কিছু শিকারিকে দেখতে পায়। তারা একটা হরিণকে শিকার করে নিয়ে যাচ্ছিল। হরিণটা দেখতে অনেক সুন্দর ছিল। তার ওই হরিণটা খুব পছন্দ হয়। তার হরিণের মাংস খাওয়ার খুব ইচ্ছা যাগে। কিন্তু, শিকারিদের কাছ থেকে সে হরিণটাকে নিবে কি করে। হঠাৎ, তার মাথায় একটা বুদ্ধি আসলো।
সে তাড়াতাড়ি শিকারিদের কাছে গেলো। কাছে গিয়েই শিকারিদের সে বলল, “ভাই সব! এখান থেকে জলদি পালাও। বনের রাজা সিংহ তার দলবল নিয়ে এদিকেই আসছে। তোমাদের শিকার করা হরিণকে দেখলে তোমাদের আর রক্ষা নেই। রাজার পছন্দের হরিণকে তোমরা নিয়ে যেতেই পারবে না। তোমাদেরকে রাজার দলবল মেরে মাংস খাবে। আর সময় নষ্ট করিও না। জলদি হরিণ ছেড়ে পালাও।”
শিকারিরা অনেক ভয় পেয়ে গেলো। তারা হরিণকে ছেড়ে পালিয়ে গেলো। আর শিয়াল মনে অনেক খুশি হলো। এবার সে এই হরিণটাকে মজা করে খাবে।
কিছুক্ষণ পর সেখানে কিছু শিয়াল এলো। তারা ওই হরিণের মাংস খেতে চাইলো। চালাক শিয়াল এবার আরও একটা ফন্দি আঁটল। সে বাকি শিয়ালদের বলল, “ভাইয়েরা আমার! আমি তো তোমাদেরকে এই হরিণ দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু, বনের রাজা সিংহ এটাকে শিকার করেছে। আর আমার কাছে তা আমানত রেখে গোসল করতে গেছে। এখন আমি যদি তোমাদেরকে এই খাবার দিয়ে দিই, তবে সিংহ তো তোমাদেরকে মেরেই ফেলবে।”
এই কথা শুনে বাকি শিয়ালগুলো ভয়ে সেখান থেকে পালিয়ে গেলো। হরিণ, কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। কিন্তু, কিছুক্ষণ পর সেখানে একটা বাঘ এলো। ওই বাঘও হরিণটাকে খেতে চাইলো। চালাক শিয়াল আবার একই বুদ্ধি প্রয়োগ করে, সিংহের ভয় দেখিয়ে, বাঘটাকে ওখান থেকে তাড়িয়ে দিলো।
শিয়াল ভাবল এবার তাকে কেউ ডিস্টার্ব করবে না। কিন্তু, তার এই ভাবনাকে মিথ্যা প্রমাণ করে দিয়ে সেখানে সিংহ এলো। এবার সে কি বুদ্ধি করবে তা ভাবতে লাগলো। তার মাথায় একটা দারুণ বুদ্ধি এলো। সে হরিণের পায়ে ২টা ফোঁটার মতো আঁচর দিলো।
সিংহ কাছে এসেই এতো সুন্দর খাবার দেখে খাবারের উপর হামলা করবে এমন সময় শিয়াল বলল, “রাজা মশাই! এই হরিণটা সাপের কামড়ে মরে গেছে। ফলে এর সারা শরীরে বিষ প্রবাহিত হচ্ছে। এটা খেলে আপনি বিষের কারণে মরে যাবেন। এই দেখুন সাপের কামড়।” এই বলে সে সিংহকে নকল কামড়ে দাগ দেখাল।
সিংহ দাগ দুটোকে আসল মনে করল। আর এত সুন্দর খাবার না খেতে পেরে সিংহ মনের কষ্টে সেখান থেকে চলে গেলো। সিংহ চলে যাবার পর, শিয়াল অনেক শান্তি পেলো। সে এবার মনের সুখে হরিণের মাংস খেতে পারবে। “আহা! কি স্বাদ হরিণের মাংসের!” মাংস খেতে খেতে সে নিজেই নিজেকে বলে উঠল।
আর যারা ঠকে গেলো, তারা কিন্তু ঘুণাক্ষরেও টের পেলো না যে, তারা ঠকে গেছে।