আসসালামু আলাইকুম, আশা করি ভালো আছেন সকলে।
বছর ঘুরে আবার ফিরে এলো সেই মহা মহিমান্বিত রমযান মাস,যে মাসের ৩০ টি রোযা পালন করতে হয় মুসলিমদের।মূলত আল্লাহ তাআলা এই রোযা ফরজ করছেন আমাদের উপর যাতে করে আমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারি। আত্মিক পরিশুদ্ধতার পাশাপাশি এই রোযার রয়েছে নানা উপকারিতা। তার মধ্যে একটি দিক হলো স্বাস্থ্যগত উপকারীতা।
আজকে আমি medical science এর দৃষ্টটিতে রোজার কিছু উপকারিতা সম্পর্কে আলোকপাত করব।
১/ জিহবা ও লালাগন্থিঃ-
আমরা যখন খাবার চর্বন করি তখন লালাগ্রন্থিসমূহ হতে এক প্রকার
রস নির্গত হয়,যেটা খাদ্যদ্রব্য চিবানোতে, গলাধঃকরণ করতে ও হজম করতে
সাহায্য করে। দীর্ঘ একমাস রােযার ফলে এই গ্রন্থিসমূহ বিশ্রাম পায়, যার ফলে তা সতেজ
হয় এবং প্রয়ােজনীয় সময়ে তা থেকে রস নির্গত করতে সাহায্য করে। লালাগ্রন্থিসমূহ হতে অনবরত লালা নির্গত হয় এবং সেজন্য মুখের ভিতর ভিজা ও পিচ্ছিল থাকে। এই গ্রন্থিসমূহ
হতে কোন কারণে যদি লালা নির্গত না হয় তবে তাকে শুকনা মুখ বা
Xerostomia রোগ বলে। তাই পূর্ণ একমাস রােযার ফলে এই লালাগ্রন্থিসমূহ বিশ্রাম পায়
বলে শুকনা মুখ বা Xerostomia হবার আশংকা খুবই কম থাকে।
২/ পাকস্থলী ও অন্ত্রঃ
একমাস রােযা রাখার মাধ্যমে পেট ও অন্ত্রগুলো পূর্ণ বিশ্রাম বা বিরতি পায় এবং সুপ্ত শক্তি
পুনরুদ্ধারে সময় পায়। পেপটিক আলসার (peptic ulcer) এবং তার কারণে ফুলা রােগ
এবং প্রদাহ রোগ রােযার কারণে তাড়াতাড়ি উপশম হয়। বেশি খাবারের ফলে অনেকেরই পাকস্থলী বড় (Hypertrophy of the Stomach) হয়ে যায়।
রােযার ফলে এই বড় পাকস্থলী মোটামুটি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।
এছাড়া ও রমযানের রােযা পরিপাক যন্ত্রের জীবাণুর পচনশীলতা দূর করে এবং এভাবে রােযার মাধ্যমে পরিপাক যন্ত্র জীবাণু মুক্ত থাকে।
পাকস্থলী একটি পেশী বিশেষ। শরীরের অন্যান্য পেশীর মতন এরও বিশ্রামের প্রয়ােজন রয়েছে। আর এটাকে বিশ্রাম দিবার একমাত্র পথ হচ্ছে ইহার মধ্যে খাদ্য প্রবেশ না করানাে অর্থাৎ রােযা রাখা।
৩/ যখনই পাকস্থলী খাদ্যমুক্ত রাখা যায় তখনই তা ক্ষতস্থান বা আলসার (Ulcer)
নিরাময়ে লেগে যায় এবং পূর্বাবস্থা পুনরুদ্ধারে নিয়ােজিত হয়। পাকস্থলী খালি হওয়া
মাত্রই তাহার ক্ষয়পূরণ এবং পুনঃগঠনের কাজ শুরু হয়, কারণ তখন রুগ্ন ও জীর্ণ।
জীবকোষগুলির স্থলে চর্তুদিকস্থ সুস্থ সবল জীবকোষের আমদানী হয়। এইটাই প্রকৃতির
নিয়ম। এইভাবে রােযা পেপটিক আলসার ( Peptic ulcer) রােগ হ্রাস করতে
সাহায্য করে
৪/ হৃৎপিন্ড ও ধমনীতন্ত্রঃ
হৃদরোগকে বিশ্বজুড়ে মৃত্যুর শীর্ষস্থানীয় কারণ হিসাবে বিবেচনা করা হয়, যা বিশ্বব্যাপী আনুমানিক 31.5% মৃত্যুর জন্য দায়ী। হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করার জন্য সবচেয়ে কার্যকর উপায় হচ্ছে রোজা।
যাদের শরীরে বাড়তি মেদ বা চর্বি জমেছে, সাধারণত তাদের রক্তে কলেস্টেরল বেশি থাকে। রক্তে স্বাভাবিক কলেস্টেরল এর পরিমাণ
হচ্ছে ১২৫-২৫০ মিলিগ্রাম পার ১০০ মিঃ লিঃ সেরাম (প্লাজমা)। মােটা লোকদের
শরীরে বেশি মেদ বা চর্বি থাকাতে রক্তে কলেস্টেরল-এর পরিমাণ স্বাভাবিক যে মাত্রা তা থেকে আরো বেড়়া যাইতে পারে এবং এর ফলে হৃৎপিন্ড, ধমনী ও শরীরের অন্যান্য অত্যাবশ্যক অঙ্গে (Vital organ) মারাত্মক রােগ দেখা দিতে পারে।
৫/বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে রোজা শর্করার নিয়ন্ত্রণকে বৃদ্ধি করতে পারে, যা ডায়াবেটিসের আক্রান্তদের জন্য বিশেষ কার্যকর হতে পারে।
টাইপ 2 ডায়াবেটিসে আক্রান্ত 10 জনের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে স্বল্প-মেয়াদী অন্তর্বর্তী রোজা বা উপবাসের কারণে রক্তে শর্করার মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়।
৬/ ওজন নিয়ন্ত্রণ
একটি পর্যালোচনায় দেখা গেছে যে পুরো দিনের উপবাস শরীরের ওজন 9% পর্যন্ত হ্রাস করতে পারে এবং 12-24 সপ্তাহের এর মধ্যে শরীরের মেদকে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করতে পারে।
৭/ উপবাস বা রোজা হরমোন নিঃসরণ বৃদ্ধি করে, যা শরীর বৃদ্ধি, বিপাক, ওজন হ্রাস এবং পেশী শক্তি জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
হিউম্যান গ্রোথ হরমোন (এইচজিএইচ) এক ধরণের প্রোটিন হরমোন রয়েছে যা মানুষের স্বাস্থ্যের অনেক দিকের কেন্দ্রীয়।
বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে রোযা বা উপবাস স্বাভাবিকভাবেই এইচজিএইচ স্তর বৃদ্ধি করে।
৮/রোগ হ্রাসঃ
শারীরের কতগুলো রোগের উৎস এবং বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হচ্ছে মানসিক অশান্তি বা পীড়া (Psychogenic foctor) ; এদেরকে বলা হয় সাইকো সােমাটিক ব্যাধি (Psycho sormatic diseases)। একজন মানুষ যদি প্রতি বৎসর
একমাস নিয়মিত রােযা রাখে তবে নিম্নে বর্ণিত কতগুলি সাইকোসোমাটিক রোগের উপসর্গ কম হবার সম্বাবনা থাকে। সাইকোসােমাটিক রোগ গুলির থেকে কয়েকটি উল্লেখ করা হল। (১) হাইপার থাইরয়ডিজম, (২) নিউরাে ডারমাটাইটিস,(৩) পেপটিক আলসার, (৪) রিউমাটয়ড আরথ্রাইটিস, (৫) এসেনশিয়াল উচ্চরক্ত চাপ,
(৬) হীপানী (৭) আলসারেটিভ কলাইটিস।
বহুল আলােচিত ক্রনিক আমাশয়, যাকে চিকিৎসা শাস্ত্রে ইরিটেবল বাউল সিনড্রম
(Irritable bowel syndrome) বলে।। এই রােগের কারণ হলো মানসিক দুশ্চিন্তা এবং অস্থিরতা।রোগটা পেটের মধ্যে হলেও আসল কারণ কিন্তু মনে। তাই এইসব রােগী রােযার রাখা অবস্থায় সম্পূর্ণ উপসগমুক্ত থাকিতে পারে।এছাড়াও বিপাকজনিত রোগের ঝুঁকি হ্রাস করণে সাহায্য করে।
৯/বলা হয় যে,
ক্ষুধার্ত উদর জ্ঞানের উৎস।।
D, ALex leig বলেছেন, “উপবাসের কারণে মানুষের মানসিক শক্তি এবং বিশেষ বিশেষ অনুভূতিগুলি উপকৃত হয়,ঘ্রাণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তি প্রভৃতি বেড়ে যায়।এটা খাদ্যে অরুচি ও অনিন্দ্য দূরকরে।
১০/ রােযা শরীরের রক্তের প্রধান পরিশােধক। দেহে রক্তের পরিশােধন এবং বিশুদ্ধি সাধন দ্বারা দেহ প্রকৃত পক্ষে জীবনীশক্তি লাভ করে।
১১/রোযা মস্তিস্ককে মুক্ত রক্তপ্রবাহ এবং সূক্ষ অণুকোষগুলিকে জীবাণু মুক্ত ও সবল করে। এর ফলে মস্তিষ্ক অধিক শক্তি ও স্নায়ুশক্তি অর্জন করতে পারে।
আজকে এই পর্যন্ত, আল্লাহ হাফেজ।