অভিমানী মন
নাইফা আফরিন অহনা
অভিমানী মন
———————-
জান,ডিয়ার,প্রিয়তমেষু,প্রিয়তমা…. কতো কিছু ভাবা লাগত তোমাকে কিছু লেখার আগে। অদ্ভুত এক পরিস্থিতিতে পড়া লাগত প্রতিবার ই। কারণ তুমি ছিলে পুরাই কাব্যিক আর আমি হলাম নিরামিষ। কিভাবে লিখব বলো? লিখার আগে এক গাদা ভাবা লাগে যে, “আমার কাব্যিক সে আমার লিখা পড়বে তো?”
জানো? এই ভাবনা টার জন্য কখনও লিখা হয় নি তোমাকে কিছু। তুমি কতই না বলতে লিখার জন্য। কিন্তু আমি ভাবতাম তুমি হাসবে আমার লিখায়। তাই বলে কখনও আর লিখাটা হয় নি। অথচ দেখো আজকে আমি লিখতে লিখতে ডায়েরীর পৃষ্ঠা শেষ করে ফেলছি। লিখা তবু শেষ হচ্ছে না। কিন্তু দেখার জন্য তো তুমি নেই…..!
আচ্ছা! আমি যখন আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে জোরে জোরে চিঠিগুলো পড়ি তখন কি তোমার কানে পৌঁছায় না? খুব তো বলতে আমি ডাকার আগেই তুমি সবসময় আমার কাছে চলে আসবে।। আমার তোমাকে মনে করার আগেই তুমি আমার সামনে হাজির হবে। আমার অনুভূতি প্রকাশের আড়ষ্টতা র কারণে তুমি বলেছিলে তুমি নিজেই সব বুঝে নিবে।
কিন্তু এখন আমি তো গলা ফাটিয়ে ডাকছি তোমাকে। নিজের মুখে বলছি তোমাকে আমার প্রয়োজন। তুমি কি শুনতে পাচ্ছ না? নাকি এতো বছর পর বলছি দেখে অভিমান করে আছো? আমার চিঠির শব্দ গুলো কি তোমার চামড়া ভেদ করে তোমার হৃদয়ে পৌঁছাচ্ছে না? তবুও কেনো আসছ না? তুমি তো এতো পাথর ছিলে না কখনও….।
আমার কি লেখায় কোনো ভুল আছে তবে? জানো জোরে জোরে পড়ার আগে কতবার আমি নিজে চিঠি গুলো পড়ি?
ওহ তোমাকে তো বলতেই ভুলে গেছি! তোমার কি মনে পড়ে তুমি আমায় সবসময় বলতে একটা লাল টুক টুক শাড়ি আর টিপ দিয়ে তোমার সামনে আসতে? আমি কিন্তু প্রতিবার ই নাকচ করে দিতাম। জানো কি? আমি ভাবতাম আমাকে লাল রং মানায় না একদম ই। আমার একদম পছন্দ ছিলে না এই রং। তবুও তুমি সবসময় বলতে এ রং পড়তে। আমি না বলার পর ও বার বার একই কথা বলতে। আমার কিন্তু খুব বিরক্ত লাগত।। তুমি কি বুঝতে না?
অথচ দেখো আমার আলমারী তে এখন ঐ অপছন্দের রং টা ভরে আছে। যখন ই আমি চিঠি লিখতে বসি ঐ অপছন্দের রং টা ই গায়ে জড়াই। তুমি কি আমাকে দেখতে পাও? বলে তো আমায় কেমন লাগে এই রং এ?
বুঝছো? আমি কিন্তু সত্যি অনেক বিরক্ত হচ্ছি। তুমি তো জানো আমার অপেক্ষা একদমই পছন্দ না। তো কেনো তুমি আমাকে দীর্ঘ অপেক্ষার সাথে জড়িয়ে দিলে। এতো অপেক্ষা আমি কিভাবে সহ্য করব? হ্যাঁ? আমার তো এখন তোমাকে অনেক কথা বলতে ইচ্ছে করে। তুমি তো আর শুনতেই চাও না হয়ত। কিন্তু বলতে ঠিকই আমি না বললে ও তুমি শুনে ফেলো সব। তো এতদিন ধরে বলছি শুনছ না?
আমার এখন হাত ব্যথা হচ্ছে। আমি আর লিখতে পারব না, বুঝলে? লিখে তো লাভ নেই। তুমি তো আর পড়ো না আমার লিখা। যাও এগুলো ছিঁড়েই দিলাম। তবে পরে কিন্তু আমায় বকতে পারবে কেন ছিঁড়েছি বলে। আমি অনেক অপেক্ষা করছি তোমার জন্য….।
গ্রীষ্মের কাঠফাটা রোদে যখন তুমি অস্থির হয়ে যেতে, তখন হঠাৎ মন গলানো বাতাস তোমার গা স্পর্শ করার সাথে সাথে তুমি কেমন আনন্দ ই না পেতে। তোমার মনে পড়ে? তখন আমাকে তুমি কিন্তু বেশ জ্বালাতে বাইরে নেওয়ার জন্য। তোমার নাকি ঐ ঝড়ো হাওয়াতে হাঁটতে ভালো লাগে। আমার কিন্তু বিরক্ত লাগত প্রচুর। কি পাগলামি করতে ঝড়ো হাওয়ার জন্য। আমি না বললে বার বার জোর করতে। তবুও যেতাম না। তখন পাড়ার বাচ্চা দের নিয়ে খেলতে ঠিকই। তুমি কি জানো? আমি তোমাকে তখন চুপি চুপি দেখতাম।
এখন ঝড়ো হওয়া শুরু হলে আমি একাই রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকি। তোমাকে তো অনেক ডাকি তুমি তো শুনো না। যাও তোমার জন্য লেখা চিঠি গুলো এই ঝড়ে হওয়ার উড়িয়ে দিলাম। তুমি পড়ে নিও..।
তুমি সবসময় ভাবতে ঝড়ো হাওয়া যেদিক থেকে আসছে। সেদিকে কিছু একটা আছে। আর পাগল হয়ে ঐদিকেই দৌড়াতে৷ জানো তুমি যখন এমন করতে আমার কতো দুশ্চিন্তা হতো? তুমি কিন্তু আমায় অনেক দুশ্চিন্তা দিয়েছ। জানো? এখনও দিচ্ছো। এখন আমি ও জানো তোমার মতো পাগল হয়ে ঐ দিক টায় দৌড় দেই। ভাবি হয়তো তোমার সন্ধান পেয়ে যাবো। কৈ তোমাকে তো পাই না।
দেখো চিঠি টুকরো গুলো এদিকে উড়ে যাচ্ছে । আচ্ছা! তুমিও কি সেদিকে যাচ্ছো? আমায় দেখে ও কি তুমি এই দিকে আসবে না? নাকি যেদিন এ বাতাস আমার দিকে আসবে। তবে কি সেদিন ই তোমায় আমি কাছে পাবো??
[ প্রিয় মানুষ কাছে থাকতে তাদের মনের সব কথা বলে দিন। পড়ে যাতে আফসোস না হয়]