জুলজি’তে এমএসসি পাস করার পর এক যুবক চাকরির জন্য হন্যে হয়ে একের পর এক ইন্টারভিউ দিয়েই যাচ্ছিলো, কিন্তু কোনটাতেও তার চাকরি হচ্ছিলো না। একদিন সে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত অনেকগুলো ইন্টারভিউ দিয়ে খুব পরিশ্রান্ত হয়ে সন্ধ্যার আগে আগে চিড়িয়াখানার গেটের পাশে বসে একটু রেস্ট নিচ্ছিলো। লোকজন সেসময় চিড়িয়াখানার জীবজন্তু ও পশুপাখি দেখে আনন্দচিত্তে হাসিমুখে বাচ্চাদের নিয়ে বের হয়ে যাচ্ছিলো। তা দেখে জুলজি’তে এমএসসি পাস করা যুবকের বুক থেকে একটা দীর্ঘনিশ্বাস বেরিয়ে এলো। সে ভাবলো— কবে যে তার একটা চাকরি হবে; আর কবে সে বিয়ে করবে, কবেই বা তাদের বাচ্চা হবে, আর কবেই বা সেই বাচ্চা নিয়ে সে এই চিড়িয়াখানায় বেড়াতে আসার সুযোগ পাবে!
এরকম সাত-পাঁচ যখন সে ভাবছিলো ততক্ষণে কিন্তু চিড়িয়াখানা থেকে সবাই বেরিয়ে গেছে। গেটও বন্ধ হয়ে গেছে। চিড়িয়াখানার কিউরেটর বের হওয়ার সময় বিষণ্ণ যুবককে দেখে খানিকটা কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করলেন— কি ব্যাপার? সবাই চলে গেছে, তুমি এখানে বসে আছ কেন? যুবক তখন উঠে দাঁড়িয়ে বিনীতভাবে তার সমস্যার কথা বললো যে, জুলজি’তে এমএসসি পাস করে সে চাকরির ইন্টারভিউ দিতে দিতে হয়রান হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত তার একটা চাকরিও হয়নি। যে করেই হোক, একটা চাকরি তার এখন খুবই দরকার। যে কোন ধরণের চাকরি হলেও সে করতে রাজি আছে।
যুবকের কাতর অনুনয় বিনয়ে কিউরেটর সাহেব খানিকক্ষণ কি জানি ভাবলেন, তারপর যুবকের উদ্দেশ্যে বললেন— যেকোন ধরনের চাকরি করতে রাজি আছ? উত্তরে যুবকটি দৃঢ়ভাবে জানালো যে, সে যেকোনো চাকরি করতে রাজি আছে। তখন কিউরেটর সাহেব বললেন— আচ্ছা ঠিক আছে, তুমি ভেতরে আস; তোমার সাথে কথা আছে। এই বলে তিনি তাকে ভেতরে তার অফিসে নিয়ে গেলেন। খুব সমাদর করে বসালেন। অফিসে সিকিউরিটি গার্ড আর পিয়ন ছিলো। সিকিউরিটি গার্ডকে গেটে যেতে বলে পিয়নকে চা-নাস্তা দিতে বললেন।
চা-নাস্তা খাওয়ার পর কিউরেটর সাহেব বললেন— শোন, তোমার ভাগ্য খুব ভালো। আজকেই এখানে একটা চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তুমি আমাদের এখানে ‘বাঘের পদে’ চাকরি করতে পার।
‘বাঘের পদে’! যুবক খুব আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলো?
হ্যাঁ, বাঘের পদে। কিউরেটর ফিসফিস করে নিচুগলায় রহস্যময় কণ্ঠে বললেন— আসলে আমাদের এই চিড়িয়াখানার বাঘটা গতকাল রাতে মারা গেছে। আমরা দর্শনার্থীদের বলেছি, বাঘটা অসুস্থ। তাই তাকে চিড়িয়াখানার পশু হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু দর্শনার্থীদের এসব বলে কতদিন আর আটকিয়ে রাখা যাবে? তাছাড়া ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট কী জবাব দেব, সেই চিন্তাতেও আমি বাঁচি না। এখন বাবা তুমি এই বাঘের পদের চাকরিটা নিয়ে আমাকে বাঁচাও!
বাঘের চাকরি? সেটা কিরকম? অবাক হয়ে যুবক জিজ্ঞেস করে।
চিড়িয়াখানার কিউরেটর গলা নামিয়ে ফিসফিস করে নিচুগলায় বলেন— যে বাঘটা মারা গেছে তার খাবারের মাংসের জন্য সরকারিভাবে মাসে বিশ হাজার টাকা বরাদ্দ আছে। যদি তুমি রাজি থাকো, তাহলে তোমাকে ঐ বিশ হাজার টাকা দিতে পারি। সেক্ষেত্রে তোমাকে প্রতিদিন খুব ভোরে মানুষজন আসার আগেই চিড়িয়াখানার একটা গোপন ঘর আছে, সেখানে আসতে হবে। আমাদের লোক গোপনে তোমাকে ঐ বাঘের চামড়াটা খুব কায়দা করে পরিয়ে দেবে। তুমি বাঘ সেজে সারাদিন খাঁচায় থাকবে। সন্ধ্যার পর দর্শনার্থীরা সবাই যখন চলে যাবে, তখন রাতে আমাদের লোক তোমার শরীর থেকে বাঘের চামড়া খুলে দেবে। তুমি তখন বাড়ি চলে যাবে। এই হলো বাঘের চাকরি! শুধু সাবধান থাকতে হবে দর্শনার্থীরা যেনো কোনভাবেই এটা টের না পায়। আর খুব ভোররাতে যখন তুমি এখানে আসবে তখন খাবার বা পানি এইসব কিছুই খাবে না।কারণ, সারাদিন কোনোরকম টয়লেট করা যাবে না। চাইলে তুমি রোজা রাখতে পারো। যদি এইসব শর্ত মেনে চাকরি করো, তাহলে বাঘের খাবারের জন্য যে বিশ হাজার টাকা বরাদ্দ আছে, সেই টাকাটা তুমি বেতন হিসেবে পাবে। এতে তোমার চাকরিও হলো, আবার আমার চাকরিও রক্ষা পেল। কেননা, এই বাঘ মারা যাবার কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানতে পারলে আমারও খবর আছে! তাই তুমি যদি এই বাঘের চাকরি করো, তাহলে তোমারও লাভ, আমারও লাভ। এখন তুমি বলো, করবে এই বাঘের চাকরি?
হতভম্ব যুবক কিছুক্ষণ ভাবলো, তারপর উপায়ন্তর না দেখে রাজি হয়ে গেলো। কেননা, অনেক ইন্টারভিউ দিয়েও যখন তার কোনো চাকরি হচ্ছে না, তখন বিশ হাজার টাকার এই বাঘের চাকরিটা তার কাছে খুব লোভনীয় বলে মনে হলো।
যুবক রাজি হওয়াতে চিড়িয়াখানার কিউরেটর খুব খুশি হয়ে বললেন, এই তো বাঘের বাচ্চার মতো সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছ। ঠিক আছে কালকে তুমি খুব ভোরে ফজরের আজানের আগে একটু রাত থাকতেই চলে এসো। আমরা তোমাকে বাঘ সাজিয়ে খাঁচায় ঢুকিয়ে দেবো।
পরদিন খুব ভোরে ঐ যুবক চিড়িয়াখানায় গিয়ে হাজির হলো। কিউরেটরের লোকজন তাকে বাঘের চামড়া দিয়ে নিখুঁতভাবে বাঘ সাজিয়ে বাঘের খাঁচায় ঢুকিয়ে দিলো।
খাঁচার ভেতর সে একপাক ঘুরেই দেখে পাশের খাঁচায় বিশাল এক সিংহ মামা বসে আছে। সিংহ মামা তাকে দেখে উঠে দাঁড়িয়ে তার খাঁচার লোহার শিকে নাক ঘষতে লাগলো। ভয়ে তার আত্মা উড়ে গেলো। তার মনে হতে লাগলো, এই বুঝি সিংহ মামা লোহার শিক ভেঙে তাকে খেতে আসলো। সে ভয়ে সিংহ মামার দিক থেকে পেছন ফিরে খাঁচার আরেক দিকে চলে এলো। সেখানে কয়েকটি বাচ্চা ছেলেমেয়ে বাঘমামা বাঘমামা বলে তাকে ডাকছে। সে সিংহের কথা ভুলে থাকার জন্য বাচ্চাগুলোর সামনে নানান অঙ্গভঙ্গি করতে লাগলো। তার অঙ্গভঙ্গি দেখে বাচ্চাগুলো তো মহাখুশি! দেখতে দেখতে সেখানে বাচ্চাদের ভিড় জমে গেলো। সে মহানন্দে বাচ্চাদের আনন্দ দিতে লাগলো। সে হয়ে গেলো এক আনন্দিত বাঘ।
আনন্দিত বাঘের কথা দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়লো। দূরদূরান্তের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন আনন্দিত বাঘ দেখতে বাচ্চাকাচ্চার দল বিশাল ভিড় জমাতে লাগলো চিড়িয়াখানায়। বাচ্চাকাচ্চার দল চিড়িয়াখানার আর কোথাও যায় না। সবাই এসে ভিড় জমায় আনন্দিত বাঘের খাঁচার সামনে। আর সেও মহানন্দে বাচ্চাকাচ্চার দলকে আনন্দ দেয়া অবশ্য কর্তব্য বলে মনে করলো। দেখতে দেখতে চিড়িয়াখানার আয় ডাবল হয়ে গেল। তার বেতনও দ্বিগুণ হয়ে গেলো। তার খুশি আর দেখে কে!
কিন্তু একদিন আনন্দিত বাঘের লাফঝাঁপে হঠাৎ সিংহ মামা আর তার খাঁচার মাঝের লোহার শিকের পার্টিশনের মাঝে যে ছোট গেটটা আছে, সেটা দড়াম করে খুলে গেল আকস্মিক ধাক্কা লেগে। সে দেখলো, খোলা দরজা দিয়ে সিংহ মামা তার খাঁচার ভেতর ঢুকছে। তা দেখে তার আত্মা ভয়ে উড়ে গেলো। সে ভয়ে চোখ বন্ধ করে দু’হাত জোড় করলো সিংহের দিকে। কিন্তু অনেকক্ষণ ধরে সিংহ মামা কোনো সাড়াশব্দ না করায় সে ভয়ে ভয়ে চোখ খুলে দেখে, সিংহ মামাও তার দিকে দু’হাত জোড় করে আছে। জানে পানি পেয়ে সে সিংহ মামাকে বললো— মামা, আপনিও কি জুলজি’তে এমএসসি?
সিংহ মামা গম্ভীর গলায় বললো— হ্যাঁ ব্যাটা, আমিও জুলজি’তে এমএসসি।
……………………★★★……………….………
মজার গল্প
সরস গল্প
হাসির গল্প