বলাই বাহুল্য, আলু প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
বাঙালির রান্নাঘরে কিছু থাকুক বা না-থাকুক, আলু থাকবেই।
এটি মাছ, মাংস, ডিম, সবজি সব কিছুর সাথেই রান্না করা যায়।
আলুর উপকারিতা শুধুমাত্র কোনো একটি বিশেষ ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়।
রান্না থেকে রূপচর্চা, মানুষের জীবনে সর্বক্ষেত্রে আলুর নানা রকমের উপকারিতা রয়েছে।
আলু খেলে কি হয় তা বিস্তারিতভাবে জেনে নিন।
স্বাস্থ্যের জন্য আলুর উপকারিতা –
আলুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে মিনারেল, ভিটামিন ও কার্বোহাইড্রেট যার ফলে স্বাস্থ্যের ওপর আলুর নানা রকম ইতিবাচক প্রভাব পড়ে থাকে। মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর আলুর উপকারিতাগুলি নিচে আলোচনা করা হল।
1) রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যে কম সোডিয়ামযুক্ত খাদ্য খাওয়া প্রয়োজন।
কিন্তু তার সাথে প্রয়োজন বেশি পরিমাণে পটাসিয়াম। আলুতে এই দুটি জিনিসই সঠিক পরিমাণে আছে বলে রক্তচাপ সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায় ।
2) হার্টের জন্য- আলুতে রয়েছে ফাইবার, পটাসিয়াম, ভিটামিন সি ও ভিটামিন বি ৬ যার ফলে কোলেস্টরল নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। কোলেস্টরল নিয়ন্ত্রণ হলে হার্টও সুস্থ থাকে ।
3) ক্যান্সার থেকে মুক্তি- আলুতে রয়েছে ফোলেট যা ডি.এন.এ. তৈরী ও মেরামত করতে সাহায্য করে।
এর ফলে যেসব কোষগুলি ক্যান্সারের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে, সেগুলি নষ্ট হয়ে যায়।
এছাড়া আলুতে থাকা ফাইবার কোলন ক্যান্সার মুক্ত করতে সাহায্য করে।
4) হাড়ের স্বাস্থ্য- আলুতে থাকে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও জিঙ্ক, এই সবকটি উপাদান হাড়ের
স্বাস্থ্যের জন্যে উপযুক্ত। ফলে আলু শরীরের গঠন মজবুত করতে সাহায্য করে।
এছাড়া আলুতে রয়েছে ফসফরাস যা অস্টিওপরোসিস নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে ।
5) হজম ক্ষমতা- শরীরে সঠিক পরিমাণে ফাইবার প্রবেশ করলে হজম করার ক্ষমতা বাড়ে ও পাচনতন্ত্র সঠিককভাবে চলতে থাকে ।
6) কিডনি স্টোন থেকে মুক্তি- হজম ক্ষমতা ও পাচনতন্ত্র সঠিক থাকলে শরীরে জলের পরিমাণও সঠিক থাকে। এর ফলে কিডনিতে স্টোন হওয়ার সমস্যা রোধ করা যায় ।
7) দাঁতের সমস্যা- দাঁত বা মাড়ির সমস্যার ক্ষেত্রে ভিটামিন সি বেশ উপযুক্ত। তাই এক টুকরো আলু দিয়ে রোজ দাঁত পরিষ্কার করলে দাঁতের নানা সমস্যা থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
8) পেটের সমস্যা- পেটের নানারকম সমস্যা যেমন ডায়রিয়া, ডিসেন্ট্রি বা হজম সমস্যা দেখা গেলে আলু সেদ্ধ করে খেলে বেশ খানিকটা উপকার পাওয়া যায়।
9) শরীর ফুলে যাওয়া- আলুতে যে পরিমাণ ফাইবার ও এন্টি-অক্সিডেন্ট থাকে তা শরীরের ইলেক্ট্রোলাইসিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এর ফলে গা, হাত, পা বা শরীরের কোনো অংশ ফুলে যাওয়া থেকে অনায়াসে মুক্তি পাওয়া যায় ।
10) মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য- মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্যে কার্বোহাইড্রেট, পটাসিয়াম ও গ্লুকোজ খুব জরুরি। এর সব কটি উপাদান একসাথে আলুতে থাকার ফলে মস্তিষ্ক স্বাস্থ্যকর রাখতেও আলুর ভূমিকা রাখে।
11) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা- আলু, বিশেষত মিষ্টি আলু ভিটামিন এ ও এন্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর। তাই এই আলু নিয়মিত খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
12) ওজন নিয়ন্ত্রণ করা- আপনি যদি আপনার ওজন সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে চান তাহলে প্রতিদিন আপনার
খাদ্য তালিকায় অল্প পরিমাণ আলু যোগ করতে ভুলবেন না। আলুতে অতি কম পরিমাণে
ফ্যাট থাকে যার ফলে পেট ভরা সত্ত্বেও ওজন বেশি বাড়ে না।
13) কোলেস্টরল- আলুতে থাকা ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, মিনারেল ও পটাসিয়াম কোলেস্টোরল নিয়ন্ত্রণ করতে বেশ সাহায্য করে। এর ফলে হার্ট সুস্থ থাকে ।
14) ঘুমের সমস্যার সমাধান- শরীরে সঠিক পরিমাণে পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম
ও ক্যালসিয়াম আপনার শরীরকে ভারসাম্য ও আরাম প্রদান করে যার ফলে আপনার স্নায়ু শান্ত হয় ও
আপনি নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারেন। তাই অনিদ্রা বা কম ঘুমের সমস্যা থাকলে আলু খেলে উপকার হতে পারে ।
15) পি.এম.এস- মহিলাদের মাসিক হওয়ার ঠিক আগের মুহূর্ত গুলিতে মিষ্টি খাওয়ার একটা প্রবণতা তৈরী হয়।
আলুতে রয়েছে সঠিক পরিমাণে প্রাকৃতিক মিষ্টি পদার্থ, ফাইবার ও এন্টি-অক্সিডেন্ট যা ওই সময় মেজাজ খিটখিটে হওয়ার থেকে মুক্তি দেয়।
এছাড়া শরীরে তখন কম পরিমাণে এস্ট্রোজেন থাকার ফলে হরমোনের নানারকমের সমস্যা দেখা দেয়। এই সময়তেও আলু খাওয়ার উপকারিতা স্বাস্থ্যের জন্য প্রবল ।
ত্বকের জন্য আলুর উপকারীতা-
ত্বকের জন্যেও আলুর নানা রকমের উপকারিতা প্রমাণিত হয়েছে। ত্বকে ট্যান, চোখের তলার কালি থেকে শুরু করে ত্বক থেকে
বয়সের ছাপ দূর করা বা ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি সবেতেই আলুর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ত্বকের ক্ষেত্রে আলু খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন।
1) মুখে বয়সের ছাপ কমানো- আলুতে রয়েছে নানা রকমের পুষ্টিকর উপাদান, নানা মিনারেল ও ভিটামিন যা ত্বকের জন্য উপকারী। আলু বেটে সেই রস মুখে লাগালে মুখ থেকে বয়সের ছাপ, রিংকেল দূর হয়।
2) চোখের তলায় কালি বা ফোলা ভাব কমানো- চোখের তলায় কালি বা ফোলাভাব কমানোর শ্রেষ্ঠ উপকরণ হল আলু।
প্রতিদিন দু টুকরো আলু নিয়ে চোখের ওপরে লাগিয়ে বেশ খানিকক্ষণ রেখে দিতে হবে।
তারপর ভালো করে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। নিয়মিত ব্যবহার করলে চোখের তলার কালি থেকে দ্রুত মুক্তি পাওয়া যাবে।
3) ট্যান বা সানবার্ন- ট্যান বা সানবার্ন আমাদের প্রত্যেকের সমস্যা। আলুর সাহায্যে সহজেই কড়া ট্যান দূর করা যায়।
ভালো করে একটি আলু থেতো করে বা গ্রেট করে রস বের করে মুখে এবং যেসব জায়গায় ট্যান পড়েছে সেখানে লাগাতে হবে।
কয়েকবার ব্যবহারে সহজেই ট্যান বা সানবার্ন দূর হবে।
4) ত্বকের কালো ছোপ- ত্বকে কালো ছোপ বা দাগ পড়লে তা সহজেই আলুর সাহায্যে দূর করা যায়।
একটুখানি বেসন ও মধুর সাথে কয়েক ফোটা আলুর রস মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরী করুন। এরপর সেটা সারা মুখে লাগিয়ে খানিকক্ষণ শুকিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। অনায়াসে ফল পাবেন।
5)কের কোমলভাব- আলুর মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক ব্লিচ উপাদানগুলি ত্বককে কোমল করে তোলে ও মুখের খসখসে ভাব মিটিয়ে ত্বককে সুন্দর ও মোলায়েম করে তোলে।
8) ত্বকে কোলাজেন বাড়ায়- কোলাজেন ত্বকের গঠন তৈরী করে কোষগুলিকে শক্ত করে বেঁধে রাখে।
এর ফলে ত্বক ঝুলে যায়না ও টানটান থাকে। আলুর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন, মিনারেল ও
পটাসিয়াম যা একসাথে ত্বকের কোলাজেন গঠন করতে সাহায্য করে। ফলে ত্বক থাকে লাবণ্য উজ্জ্বল ও তারুণ্যে ভরপুর।
চুলের জন্য আলুর উপকারীতা-
স্বাস্থ্য ও ত্বক ছাড়াও চুলের জন্যও আলু ভীষণভাবে উপকারী। নিচে তা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হল:
1) চুল পড়ার সমস্যার সমাধান- আলুতে রয়েছে ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, জিঙ্ক, নিয়াসিন ও আয়রন
যা চুল পড়ার সমস্যা দূর করে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। এছাড়া চুলে খুশকির সমস্যা হলে বা শুস্কতা দেখা গেলে তা দূর করতেও আলু বেশ সাহায্য করে।
2) পাকা চুলের সমস্যা- বাজারে পাওয়া যে কোনো চুলের ডাই-এর তুলনায় আলুর খোসা
অনেক বেশি উপযুক্ত পাকা চুলের সমস্যা দূর করতে। আলুর খোসায় যে স্টার্চ থাকে তা পাকা চুল নিয়ন্ত্রণ করে।