একদা ছিলো দুজন স্বামী, স্ত্রী। স্বামী টা কিছু সরল মনের। স্বামীর নাম ছিল বজু। স্বামী বলে আর গান করে যে, শুনে যাও তাড়াতাড়ি বজুর মনে ফুর্তি বারি চেয়ে থাকে দূর আকাশে বজু যাবে চাঁদের দেশে।
স্ত্রী এসে বলে কিগো আকাশ পানে তাকিয়ে কি ভাবছো শুনি। দেখ, দেখ বউ চাঁদটা আজ কতো বড়। স্ত্রী বলে সে হবেই তো আজ না পূনীমা। স্বামী বলে ও মা তুমি কতো কিছু যানো বউ তুমি চাঁদ দেখেই বলে দিলে পূনীমা আমিতো ভাবছিলাম আজ বুঝি আমাবর্ষা।
আমি বোকা বজু কিছু টি জানিনা। স্ত্রী বলে আমাদের চন্দ্র জান আকাশে পৌঁছে গেছে জানতো। কতো বড় সাফল্য আমাদের বিজ্ঞানী দের বলো তো।
স্বামী বলে এসব কি বলছো বউ কে চাঁদে গিয়েছে? স্ত্রীরী বলে বিক্রম আর বৈজ্ঞান। স্বামী বলে ওমা ওরা বুঝি পাখি উড়তে, উড়তে চাঁদে পৌঁছে গিয়েছে। ইস আমার যদি ডানা থাকতো আমিও উড়ে, উড়ে চলে যেতাম চাঁদের দেশে।
স্ত্রী বলে কি যে বলো তুমি উড়ে, উড়ে যাবে কেনো। আমাদের চন্দ্র জান চাঁদে পৌঁছেছে। চাঁদে জানোতো এক দিকে আলো অন্যদিকে সব সময় অন্ধকার। স্বামী বলে ওমা ওরা টছ নিতে ভুলে যায়নি তো না হলে অন্ধকারে তো কিছু দেখতেই পাবে না।
ইস আগে জানলে আমার পুরনো টছ টা দিয়ে দিতাম ওদের। চারটি ব্যাটারি আছে কিন্তু একবার চালালে চাঁদের আমাবর্ষা জায়গাটা পূনীমা হয়ে যাবে। স্ত্রীরী বলে উহু সত্যি বুদ্ধি বটে তোমার টছ জ্বালিয়ে আমাবর্ষা কে পূনীমা বানাবে।
স্বামী বলে আমিও যাবো মামা বাড়ি। স্ত্রী বলে মামা বাড়ি কোথায় তোমার মামা বাড়ি মালদাতে। স্বামী বলে বজুর বউ বজু বলতে পারলে না তো। স্ত্রী বলে কেনো আমি তো জানি তোমার মামা বাড়ি মালদাতে।
তুমিই তো বলছিলে তবে কখনো তো যাইনি আমরা। আর মামারা তো কেউ নেই এখন। স্বামী বলে কেনো চাঁদ মামা আছে না চাঁদই তো হচ্ছে আমার মামা বাড়ি।বিক্রম, বৈজ্ঞান যখন গেছে তখন আমি ও যাবো মামা বাড়ি। তবে হ্যাঁ টছ টা নিয়ে যাবো কিন্তু। স্ত্রী বলে ওমা তুমি চাঁদে যাবে, কি করবে চাঁদে গিয়ে?
স্বামী বলে সে অনেক কাজ বুঝলে। প্রথমেই চাঁদের বুড়ি যে বসে বসে চরকা কাটে তাকে খুঁজে বার করব। স্ত্রী বলে তা ভালো চাঁদ থেকে ফেরার সময় সেই চাঁদের বুড়ি কে নিয়ে এসো কিন্তু। আমি রোজ তার সাথে গল্প শুনবো।
স্বামী বলে আচ্ছা বউ তুমি যখন বলছো বুড়ি মাকে তাহলে নিয়েই আসবো। তুমি গল্প শুনবে আর আমি তাকে চরকা কেটে দেবো। স্ত্রী বলে আচ্ছা তাই হবে এবার শোনো কাল সকালে একবার মাছের বাজারে যেয়ো। বড় দেখে এক জোড়া ইলিশ মাছ কিনে আনবে ।
আমি ইলিশ বাপা বানিয়ে বারি নিয়ে যাবো। বাবা ইলিশ বাপা খেতে খুব ভালো বাসে। স্বামী বলে ওমা তাই বুঝি সেকি শশুর বাবা ইলিশ বাপা খেতে ভালো ভাসেন হাঁ। ঠিক আছে আমি এক জোড়া ইলিশ মাছ কিনে আনবো।
স্ত্রী বলে তবে দেখো বড় দেখে টাটকা তাজা মাছ আনবে। এখন কিন্তু বাজারে বরফ দেওয়া পুরনো মাছ ও আসছে। স্বামী বলে তুমি চিন্তা করো না বউ আমি পাকা মাছ আনবো দেখো। বরফ দেওয়া আইসক্রিম ইলিশ আনবো না। কাঠি দেওয়া না আর কাঁপে বরা ও না।
স্ত্রী বলে আহ্ হাঁ বরফ দেওয়া মাছ আবার আইসক্রিম হয় না কি। তুমি বরফ ছাড়া কাঁচা ইলিশ আনবে। স্বামী বলে আচ্ছা বউ আমি কাঁচা সবুজ দেখে মাছ আনবো। পেকে গেলে তো হলুদ হয়ে যাবে যেমন কাঁঠাল হয়। কাঁচা থাকলে ইতোর আর পেকে গেলে কাঁঠাল। দেখেছো বউ আমি কতো জানি।
স্ত্রী বলে হায় আমার কপাল কোথায় ইলিশ মাছ আর কোথায় কাঁঠাল। আচ্ছা ঠিক আছে তুমি বাজারে মানিক দাদার দোকান থেকে মাছ নিয়ো ওর কাছে ভালো মাছ থাকে। তবে একটু দাম বেশি বলে দর দাম করে কিনবে বুঝলে।
স্বামী বলে ও বউ এসব কি বলছো আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না দর দাম করে কিনবো কেমন করে। মাছ দর করবো না দাম করবো। স্ত্রী বলে মানিক দাদা দেখবে দাম বেশি বলবে তুমি তখন একটু কম করে বলবে বুঝেছ।
স্বামী হ্যাঁ হ্যাঁ বউ খুব বুঝেছি কম করে বলবো। স্ত্রী বাঁ ঠিক বুঝেছ যেমন যদি বলে এক কিলো ইলিশ হাজার টাকা তখন কম করে বলবে।
স্বামী ঠিক পারবো আমি বলবো কম করতে। এক কিলো মাছ হাজার বললে বলবো না, না কম করতে হবে আদা কিলো মাছ হাজার টাকা দেবো। স্ত্রী বলে ওরে বাবা কি বলছো তুমি তাহলে তো ঠকে যাবে। পরিমান না দাম কম করতে বলবে।
স্বামী বলে ও বউ খুব ভুল হয়ে গিয়েছিল দাম কম করতে বলবো। তা কতটা কম করতে বলবো। স্ত্রী বলে একটু বেশি কম করতে বলবে। ও একটু বাড়িয়ে বলবে তুমি আবার একটু কম বলবে। এভাবে দর দাম করে কিনবে বুঝলে। স্বামী বলে ঠিক বুঝেছি বাকিটা কাল বাজারে গিয়ে বুঝবো।
শশুর বাবাকে আমি কাঁচা ইলিশ খাওয়াবো হাঁ ইস কাঁচ মাছ খাবে বুড়ো বিড়াল নাকি এ বলে বজু হাসে। বজু সকালে উঠে গান করে। সাত সকালে তরি গড়ি বজু দেখ বাজারে যায় কিনবে তাজা বড় ইলিশ শশুর মশাই খাবেন হাঁ।
তার পরে বজু বাজারে গিয়ে দোকান ধারাকে বলে। এই যে মানিক দাদা এসে গিয়েছি খুব খুশি হয়েছ নিশ্চয়ই। মানিক বলে বজু দাদা যে তোমার হাতে আজ প্রথম বরণ করবো। কি নেবে বলো। বজু বলে কাঁচা বালিশ দেও তো। দোকান দার অবাক হয়ে বলে কি দেবো। বজু বলে ও না, না বালিশ নয়, বালিশ নয় তাজা ইলিশ দেও পাকা হলে নেবো না কিন্তু।
মানিক বলে এই দাদা আমার দোকানে সব ইলিশ মাছ কাঁচা। ওসব বাসি বরফ দেওয়া মাছ পাবে নাকো আমার কাছে। বজু বলে তা ভালো আবার বরফ দিলে তা আইসক্রিম মাছ হয়ে যাবে। মানিক বলে তা কোনটা দেবো এই দেখ পেট মোটা মুখ সরু এঁকে বলে রুপালি শস্যে।
বজু বলে ও তাই বুঝি পেটটা এতো মোটা কেনো আমার মতো পেটু বুঝি। মানিক বলে আরে না, না দাদা একটু ডিম আছে। বজু বলে না দাদা বউ আমাকে মাছ নিতে বলেছে ডিম নিতে নয়। কাল তো ডিম আর ঝোলের ভাত খেয়েছি। আছ শশুর বাবার জন্য মাছ নিয়ে যাবো হাঁ।
মানিক বলে আরে দাদা ইলিশ মাছ ডিম পারতে তো নদীতে ঢুকে ডিম থাকলেই মাছের স্বাদ হয়। বজু বলে ও তাই বুঝি। আমি তো বজু তাই অতো শত বুঝিনা। মানিক বলে তুমি চোখ বন্ধ করে নিয়ে যাও।
বজু বলে চোখ বন্ধ করে নিলে মাছের দাম দিবো কি করে। তোমার মাছের দাম বেশি আমার বউ কিন্তু দর, দাম শিখিয়ে দিয়েছেন হাঁ। মানিক বলে এসময় কি আর বেশি নিবো অন্য লোক আসার আগে কম দামে নিয়ে নাও।
পরে এই দামে দিতে পারবো না হাঁ। বজু বলে তা কতো দাম দিবো শুনি। মানিক বলে এক কিলো হাজার টাকা। বজু বলে বউ ঠিক বলেছিলো এক কিলো হাজার টাকা আমাকে দাম, দর করে নিতে বলেছে। আমি পাঁচশো টাকা দিবো। মানিক বলে হাজার টাকার মাছ পাঁচশো টাকা ন, না হবে না।
বজু বলে তাহলে আমি চললাম অন্য দোকান থেকে নেবো। মানিক বলে না, না তুমি আটশো টাকা দেও। বজু বলে না ভেবেছ আমাকে ঠকাবে আমি আদা দেব মানে চারশো টাকা দেবো।
মানিক বলে বলছো কি বজু দাদা এইযে বললে পাঁচশো দিবে। এখন আবার বলছো চারশো আচ্ছা তুমি ওই ছয়শো টাকা দেও। যা লোকসান হবার হবে। প্রথম পরাই বলে কথা।
বজু বলে তুমি কি বললে ছয়শো তাহলে আমি তিনশো টাকা দেবো। দিলে দেও নাহলে এই চললাম। মানিক বলে ওরে দাদা তুমি তো আমাকে মেরেই ফেলবে। অন্য কাষ্টমার এসে বলে কিরে মানিক আজ কতো দিচ্ছ ইলিশ।
মানিক বলে এইরে অন্য লোক চলে আসছে এখন কি যে করি। প্রথম পরাই না করলেই নয়। মানিক বলে এই যে বজু দাদা তোমাকে চুপি, চুপি বলছি শোন তুমি তিনশো টাকাই দেও। কাউকে বলবে না কিন্তু।
বজু বলে না, না কাউকে বলবো কেনো। তবে এক কিলো দেরশো টাকা দিবো। সে কথা অন্য কাষ্টমার শুনে বলে কি বললে বজু কতো করে মাছ কিনছ। মানিক বলে আরে না, না বজু দাদাকে মাছ বিক্রি করছি না। আগে পেত তাই এখন এমনি দিছি।
টাকার হিসাব পরে হবে কি তাইতো বজু দাদা। তা এমনি দেবে তবে দাও তাহলে তবে ঠকালে না তো। মানিক বলে না না ঠকাবো কেন তুমি মাছ নিয়ে যাও পরে বৌদি থেকে টাকা আনবো। বজু বলে সে ভালো আমার বউ তো অনেক বুদ্ধি ঠিক হিসাব করে টাকা দিয়ে দেবে।
এরপর বজু মাছ নিয়ে বাসায় গিয়ে বউ বউ কারে ডাকতে লাগলো। এরপর বলতে লাগলো এই দেখো মাছ নিয়ে এসেছি। বউ বলে বা কি সুন্দর মাছ নিয়ে এসেছো তুমি। একেবারে টাটকা মাছ বেশি দাম নেই নি তো।
বজু বলে না বউ মানিকদা দাদা তো টাকাই নিল না আমার কাছ থেকে তবে পরে আসবে বলেছে। বউ বলে ঠিকই আছে পরে আমি হিসাব করে টাকা দিয়ে দেবো। বজু বলে দেখেছো বউ টাটকা মাছ নিয়ে এসেছি এবার তুমি পাকা হাত দিয়ে রান্না করে ফেলো।
বউ বলে হ্যাঁ গো পাকা হাত দিয়ে কেমন রান্না করি ইলিশ ভাপা সবাই হাত চেটে খাবে। বজু বলে সবাই হাত চেটে কাঁচা মাছ খাবে ওগুলো বিড়ালের মত এ বলে বজু হাসে। বজুর বউ বললে সত্যি গো তোমার জবাব নেই।