আমাদের সড়কে যে সকল দুর্ঘটনা ঘটে, তার অধিকাংশই ঘটে আইন না মেনে চলার কারণে। এই নিয়ে কত আন্দোলন, অবরোধ আরও কত কি? তারপরও দেখা যাচ্ছে যত্রতত্র আইন না মেনে গাড়ি চালানো। আসলে এর কারণ কি? মানুষ গাড়ি চালানোর সময় আইন মানছে না কেন? প্রত্যেকটা মানুষই ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনকে বাহবা জানাচ্ছে, আবার নিজেই যখন ড্রাইভিং সিটে বসছে, তখন আইনের খেলাপ করছে। এর মূল কারণ হলো অজ্ঞতা। আমাদের দেশের অনেকে গাড়ি চালানো শেখে ঠিকই কিন্তু গাড়ি চালানোর আইন-কানুন সম্পর্কে কিছুই জানে না। তাদের জন্যই আমার আজকের এই পোস্ট।—-ড্রাইভিং শেখার সাথে সাথে এর আইন-কানুন সস্পর্কেও জ্ঞাত হোন, অন্যকেও জ্ঞাত করুন, সড়ক দুর্ঘটনা এড়ান. . . .
মোটরগাড়ি চালাতে গেলে, প্রথমে কতকগুলো সাধারণ আইন-কানুন মানতেই হবে। এগুলি না মানলে, তা আইনতনঃ দন্ডনীয় অপরাধ বলে গণ্য হয় এবং এর জন্য ফাইন (জরিমানা) অথবা প্রয়োজন হলে কারাদন্ড পর্য়ন্ত হতে পারে। তাই এই সব বিষয়ে সাবধান হওয়া উচিত।
সাধারণ আইনঃ
১. সবার আগে মোটরগাড়ি রেজিস্ট্রি করাতে হবে। গাড়ি রেজিস্ট্রি না করে রাস্তায় বের করা উচিত নয়। এ জন্য বি.আর.টি.এ অফিসে যেতে হবে।
২. গাড়ি রেজিস্ট্রি হয়ে গেলে অফিস থেকে দুইটি নাম্বারপ্লেট দিবে, যা গাড়ির সামনে ও পেছনে যথাস্থানে লাগাতে হবে।
৩. আঠারো বছরের কম বয়ষ্ক কোন লোক কখনও গাড়ি চালাতে পারবে না। এটা বে-আইনী কাজ। যদি ট্যাক্সি চালাতে হয় তাহলে চালকের বয়স অন্ততঃ কুড়ি বা তার বেশি হতে হবে।
৪. পথে গাড়ি চালাতে গেলে যদি পথের নিয়ম ভঙ্গ করা হয় তাহলে বিভিন্ন ধরণের নিয়মের জন্য প্রকারভেদে ১০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা পর্য়ন্ত জরিমানা হতে পারে। তাই সবসময় প্রতিটি নিয়ম মেনে গাড়ি চালানো উচিত। রাস্তা পার হওয়া, গাড়ির গতি, ট্রাফিক নির্দেশ, সংকেত প্রভৃতি সব নির্দেশ সর্বদা মেনে চলতে হবে। এইসব নিয়ম ভঙ্গ করলে, সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ গাড়ির নম্বর নিয়ে কেস ফাইল করবে।
৫. ড্রাইভারকে গাড়ি চালাবার সময় সর্বদা মানুষ, জন্তু, অন্য গাড়ি প্রভৃতির দিকে নজর রেখে চালাতে হবে।
-এতে ভুল-ত্রুটি হতে তা অমার্জনীয় অপরাধ বলে গণ্য হবে।
লাইসেন্স সংক্রান্ত আইনঃ
১. কোন ড্রাইভারকে গাড়ি চালাতে গেলেই, সঙ্গে গাড়ির লাইসেন্স এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে হবে। লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানো বে-আইনী ও অপরাধ বলে গণ্য হয়।
২. একজনের লাইসেন্স নিয়ে আর একজন গাড়ি চালাতে পারবে না। যদি পুলিশ কোনও সময় লাইসেন্স দেখতে চায়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে তা দেখাতে হবে। তাই ড্রাইভারের কাছে সবসময় লাইসেন্স রাখা কর্তব্য।
৩. কখনো লাইসেন্স হাতছাড়া করতে নেই। যদি কখনো কোন পুলিশ অফিসার লাইসেন্স নিয়ে নিতে চান, তাহলে অবশ্যই তার কাছ থেকে রসিদ চেয়ে নিতে হবে।
৪. লাইসেন্স প্রাপ্ত ড্রাইভারকে নীচের নিয়ম-কানুন মেনে গাড়ি চালাতে হবে।
(ক) সর্বদা পথের বিধি মেনে গাড়ি চালাতে হবে।
(খ) কখনো মদ বা মাদক দ্রব্য খেয়ে গাড়ি চালাতে পারবে না।
(গ) কোন দুষ্কার্য়ে সহায়তা করার উদ্দেশ্যে গাড়ি চালাতে পারবে না।
(ঘ) নির্দেশ ছাড়া পথ পার হতে পারবে না।
(ঙ) ট্রাফিক নিয়ম-কানুন সব মেনে চলতে হবে।
(চ) গাড়িতে কখনো অবৈধ জিনিসপত্র বহন করবে না।
বিশেষ নিয়মাবলীঃ
মোটরগাড়ির ড্রাইভারকে যে সব নিয়ম মেনে চলতে হবে তা এখানে বলা হচ্ছে।
১. গাড়ির হর্ণ, ব্রেকি, গিয়ার ও স্টিয়ারিং ঠিক থাকা চাই। তা না হলে গাড়ি বের করা যাবে না।
২. রাতের বেলা গাড়ি চালাতে গেলে গাড়ির আলো ঠিকমতো থাকতে হবে।
৩. সূর্য় অস্ত যাবার আধা ঘন্টা পর থেকে ও ভোর হবার আধাঘন্টা আগে পর্য়ন্ত গাড়ির হেডলাইট জ্বালাতে হবে।
৪. যে গাড়ি যতটা মাল অথবা যাত্রী বহন করার উপযোগী ঠিক ততটা মাল অথবা যাত্রী নিতে পারবে। অতিরিক্ত মাল বোঝাই অথবা যাত্রী নিয়ে গাড়ি চালানো যাবে না। এটা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ।
৫. বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী সবসময় গাড়ি পথের বামদিক দিয়ে চালাতে হবে।
৬. যদি রাস্তা ক্রস করতে হয় তবে অবশ্যই সিগন্যাল দিয়ে তারপর ক্রস করতে হবে।
৭. যেখানে যতটা স্পিডে গাড়ি চালাবার নির্দেশ আছে, সেই গতিতেই গাড়ি চালতে হবে। যেমন- কোন স্কুল-কলেজের সামনে অথবা হাসপাতালের সামনে গতিসীমা সর্ব্বোচ্চ ২০ কিলোমিটার/ঘন্টা উল্লেখ থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে সেই রাস্তায় ২০ কি.মি./ঘন্টার বেশি গতিতে চালানো যাবে না।
৮. যদি কোন দুর্ঘটনা ঘটে, তাহলে পালিয়ে যাবার চেষ্টা করা উচিত নয়। আইন হলো, আঘাতপ্রাপ্ত লোককে গাড়িতে তুলে নিকটবর্তী ডাক্তারখানা বা হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। নিকটবর্তী থানাতে দুর্ঘটনার কথা জানিয়ে দিতে হবে। এরূপ করলে ড্রাইভারের শাস্তি কম হয় বা কোন শাস্তিই হয় না- কিন্তু পালিয়ে গেলে শাস্তি বেশি হয়।
৯. পার্বত্য এলাকায় কখনো খারাপ বা অসুবিধাযুক্ত গাড়ি চালানোর নিয়ম নেই। যদি বিশেষ প্রয়োজন হয়, নিকটবর্তী থানা থেকে অনুমতি নিতে হবে।
১০. গাড়িটি যদি বাস হয়, তাহলে আরোহীর সুযোগ-সুবিধা দেখতে হবে। চলন্ত অবস্থায় যদি গাড়ির মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ হয় (যাত্রীর সঙ্গে কন্ডাকটর বা হেলপার অথবা যাত্রীদের নিজেরদের মধ্যে) তাহলে তৎক্ষনাৎ গাড়ি রাস্তার পাশে থামিয়ে দিতে হবে এবং আপোষে তার মীমাংসা করার চেষ্টা করতে হবে। যতক্ষণ ঝগড়া না থামবে ততক্ষণ গাড়ি ছাড়া যাবে না।
১১. ড্রাইভারের পাশে মাত্র একজন সহকারী বা আরোহী বসার নিয়ম আছে। তার বেশি লোক ড্রাইভারের পাশে বসানো উচিত নয়।
১২. গাড়ি চালানোর সময় ড্রাইভার পাশের যাত্রীর সাথে কথা বলা বা খোশ-গল্প করতে পারবে না। এতে ড্রাইভার অন্যমনষ্ক হয়ে দূর্ঘটনা ঘটতে পারে।
১৩. কোন অবস্থাতেই মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে গাড়ি চালানো উচিত নয়। আজকাল অনেক দূর্ঘটনা মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে গাড়ি চালানোর ফলে ঘটছে। গাড়ি চালানো অবস্থায় যদি ইমার্জেন্সি কোন ফোন আসে যা রিসিভ করতেই হবে, তবে সিগন্যাল দিয়ে গাড়ি রাস্তার পাশে থামিয়ে কথা বলা শেষ করে তারপর গাড়ি চালাতে হবে।
১৪. গাড়ি চালাতে হলে সর্বদা ইন্ডিকেটর সিগন্যাল ব্যবহার করতে হবে, প্রয়োজনে হাতের সাহায্যেও সিগন্যালের ব্যবহার করতে হবে।
১৫. অযথা রাস্তার মাঝখানে কখনো গাড়ি পার্কিং করা যাবে না।