ঢাকা শহরে সহজে ইনকাম/আয়ের কয়েকটি সহজ উপায় নিয়ে আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করব। লেখাটি সবচেয়ে সহায়ক হবে যারা ঢাকায় লেখাপড়া করার পাশাপাশি কোনো আয়ের উৎস খোঁজেন তাদের জন্য। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সাত কলেজের সিংহভাগ শিক্ষার্থী গ্রাম থেকে রাজধানীতে পাড়ি জমায়। পড়াশোনার পাশাপাশি তাদের মনে একটু হলেও চিন্তা থাকে, কিছু আয় করে এই কঠিন শহরে নিজেই নিজেকে চালিয়ে নেয়ার জন্য। সেইসকল শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে একটু হলেও আজকের এই আলোচনা সহায়তা করবে।
আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ স্যারের একটি উক্তি আছে!
“মফস্বল সবসময় রাজধানীর দিকে যাত্রা করে“
আসলেই তাই।
গ্রাম থেকে রাজধানীতে এসে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেয়া জীবনের প্রথম সাঁতার শেখার মতোই একটা কঠিন ব্যাপার। যদিও বা প্রথম প্রথম একটু কষ্ট হবে কিন্তু শিখে গেলে মনে হবে সারাদিন পানিতেই ভেসে থাকি।
সে যাক! এবারে আলোচনার মূল বিষয়ে আসি।
পড়াশোনার পাশাপাশি ঢাকা শহরে পার্ট টাইম, ফুল টাইম অথবা কম ইনভেস্টে কোনো লাভজনক ব্যাবসা সহ বিশ্বাসযোগ্য আয়ের উৎস পেতে কে না চায়?
ঢাকা শহরে শুরুতে খুব সহজেই করা যায় এমন দশটি কাজের আইডিয়া আজকে আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করব।
১। টিউশনি।
আমার প্রথম আইডিয়া শুনে অনেকে রেগে যাবেন কিন্তু ভাই এই টানাটানির বাজারে ঢাকা শহরে বিনা ইনভেস্টে এই একমাত্র ইনকামের পথ। অবশ্য দূর্লভও বটে।
তবে টানা একমাস হাজার খানিক টাকার হ্যান্ডবিল ছাপিয়ে আপনার আশেপাশের পাড়া-মহল্লা ছেয়ে দেবেন। ঢাকাস্থ বন্ধুদের বলবেন, তাদের ফ্ল্যাটের কারো টিউশান মাস্টার লাগবে কি না।
আপনার ভেতরে কোনোরকমের ইগো থাকা যাবে না।
শহরে থাকার প্রথম শর্ত হলো চক্ষু লজ্জা ত্যাগ করা।
দেখবেন দশ পনের দিনের ভেতরে দুই তিনটা টিউশনি পেয়ে যাবেন। তা দিয়ে আপনার সারা মাস আরামচে কেটে যাবে।
২। অর্গানিক ফুড সাপ্লাই।
আপনার গ্রামে বা অঞ্চলে কোন ধরনের ফল-ফসল বেশি হয়? এগুলোর একটি লিস্ট করুন। আর লিস্টের সকল দ্রব্য অবশ্যই ভেজাল মুক্ত হতে হবে।
এর মধ্যে দুধ, কলা, আম, কাঁঠাল, লিচু, তরমুজ, বাঙ্গি, মধু, গুড় সহ সব রকমের জিনিস হতে পারে।
গ্রামের চেয়ে এগুলো ঢাকায় অনেক ভালো দামে বিক্রি হয়।
আপনি অনলাইনে আপনার ফেসবুক আইডি থেকে প্রচার করে, অথবা হ্যান্ডবিল ছাপিয়ে মাস খানিক বিক্রির প্রচার করলে বিক্রি বাড়বেই বাড়বে। এতে কোনো ভুল নেই।
আর এর জন্য খুব বেশি দিনও ধৈর্য ধরতে হবে না।
আমার বাড়ি নাটোর জেলায় হওয়ায় প্রতি বছরে গুড়ের সিজিনে প্রচুর পরিমাণে গুড় সাপ্লাই দিই। আর আম এর সময়তো কথাই নেই। এই দুই সিজিনের ইনকাম দিয়ে আমার সারা বছর ধুমচে কেটে যায়।
আরো অন্যান্য আয় তো আছেই।
৩। প্রাণ আরএফএল এর আউটলেটে সেলসম্যান।
যারা পার্ট টাইম জব খোঁজেন তাদের জন্য এটি সবচেয়ে ভালো হবে।
(প্রতি মঙ্গলবারে মিডিল বাড্ডা, হোসেন মার্কেটে) প্রাণ-আরএফএলের অফিসে এক ঘন্টার একটি পরিক্ষা হয় সেলসম্যান নিয়োগের জন্য।
আপনারা যারা ঢাকায় কিছুদিন ঘোরাফেরা করেছেন তারা অবশ্যই টেস্টিট্রিট, মিঠাই- এর আউটলেট গুলো দেখেছেন প্রতিটি মোড়ে মোড়ে। এই আউটলেট গুলোতে নিয়মিত সেলসম্যান প্রয়োজন হয় তাদের।
আর জবটি পার্ট টাইম। সপ্তাহে ছয়দিন ডিউটি।
সকালের শিফট সকাল ৮ টা থেকে দুপুর ২ টা এবং বিকেলের শিফট— ২ টা থেকে রাত দশটা।
আপনি যে কোনো এক শিফটে ডিউটি করতে পারবেন।
যাদের এ ব্যাপারে আরো জানা প্রয়োজন তারা কমেন্ট বক্সে জানাবেন, আমি বিস্তারিত বলে দেব।
বেতন আসবে প্রায় আট হাজার টাকার মত।
৪। আপনার গ্রামে টি শার্ট, প্যান্ট, শার্ট পাইকারি সাপ্লাই।
ফ্যাক্টরি তে ভরা এই শহরে আপনার গ্রামের সব গার্মেন্টস দোকানদারেরা প্রতি মাসে শহরে আসে মাল কিনতে।
আপনি আপনার গ্রামের দশটা দোকান হাত করবেন।
তাদের যা যাবতীয় মাল লাগে, পাইকারি দরে আপনি আপনার লাভ রেখে দিয়ে দেবেন।
ঢাকায় একটু খোঁজাখুঁজি করলেই হাজার হাজার পাইকারি দোকান পাবেন, সেখান থেকে লেটেস্ট মডেলের মাল গুলো বাছাই করে গ্রামে পাঠাবেন।
প্রথম দিকে ১৫-২০ হাজার টাকা দিয়ে এই ব্যাবসা শুরু করতে পারেন। পরে বুঝে গেলে এবং লাভ হলে পুঁজি বাড়াবেন।
এতে আপনার এলাকার দোকানদারদের ভোগান্তি কমবে, এবং আপনারও ইনকাম হবে।
৫। রাইডার৷
আপনার নিজস্ব একটা মোটরসাইকেল থাকলে খুব ভালো হতো তাই না? পাঠাওয়ে রাইড শেয়ার করে স্বাধীন ভাবে চলতে ফিরতে পারতেন।
কিন্তু আপনার গাড়িও নেই আর এই মুহুর্তে কেনার সামর্থ্যও নেই।
অতএব এই চিন্তা বাদ দিন।
হাজার চারেক টাকার মধ্যে একটি পুরোনো সাইকেল কিনে নিন এবং ফুডপান্ডা সহ ভরি ভরি কোম্পানি আছে শহরে। যেগুলোতে প্রচুর ডেলিভারি ম্যান প্রয়োজন। সেগুলো অনলাইনে খুঁজে ডেলিভারি ম্যান হিসেবে কাজে লেগে পড়ুন। এভাবে কিছু দিন চলতে চলতে নিজের টাকা দিয়ে মোটরসাইকেল কিনতে পারবেন।
মোট কথা হলো ভাই— পারব কি পারব না এগুলো ভেবে সময় নষ্ট করার চেয়ে কিছু করতে লেগে পড়ুন।
সফলতা আসবেই।
আর ঢাকা শহরে থাকতে গেলে চক্ষুলজ্জা, লোক লজ্জার ভয়, চোখ মুখ থেকে ঝেড়ে ভাগাড়ে ফেলে দিন। নয়তো দুইদিন পর লঞ্চ অথবা ট্রেন ধরে বাড়ি ফিরে চলে যেতে হবে।
এই শহরে টিকে থাকতে হবে ধাক্কাধাক্কি করে।
নইলে টেকা বড়ো দায়।
যে আইডিয়া গুলো শেয়ার করেছি— এগুলো সব পড়াশোনার পাশাপাশি করতে পারবেন।
বর্তমানের অনলাইনে আউটসোর্সিং, ফ্রিল্যান্সিং এর অনেক পথ অনেকে দেখাবে।
সেগুলোও ভালো। তবে সেই ধৈর্য্য আপনার না থাকলে ওপরে বলা কাজ গুলোর যেকোনো একটি করে দেখতে পারেন।
লাভবান হবেন ইনশাআল্লাহ।