“জাতি, উন্নতি, দুর্নীতি” শব্দ তিনটির আক্ষরিক বা ছান্দিক মিল থাকলেও পারস্পারিক যোগসূত্র সাধনে মানবতার জন্য কখনো সফলতা আবার কখনো ভয়াবহ বিফলতা বয়ে আনতে পারে। জাতির জন্য “উন্নতি” শব্দটি যেমন অপরিহার্য তেমনি ভাবে জাতির জন্য দুর্নীতি নামক প্রচ্ছন্ন শব্দটি অত্যন্ত ভয়াবহ ও মারাত্মক এবং অবশ্যই অবশ্যই তা পরিত্যাজ্য।
“নীতি দিয়ে উন্নতি করো দুর্নীতি দিয়ে নয়” এই স্লোগানটি যদি আমাদের সমাজে বাস্তবায়ন করা হয় তাহলে জাতি অন্ধকার গ্লানি থেকে চিরমুক্তি পাবে। মানুষ কখনো “দূর্নীতি” শব্দ পেটে নিয়ে জন্মায় না বরং দূর্নীতির পেটে সিদ্ধ হয়েই নতুনরূপে আবির্ভূত হয়। নীতি ও দূর্নীতি শব্দ দুটি পারস্পরিক সাংঘার্ষিক হলেও দূর্নীতির আধিক্যে মানুষের মানবীয় গুন নীতির শোচনীয় পরাজয় ঘটে। পরাজয় ঘটে মানবতার, পরাজয় ঘটে জাতীয়তার।
আজ সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দূর্নীতির চাদর সুবিস্তৃত যার কারনে জাতি তার পরিচয় “উন্নতি” দিয়ে পরিচিত হতে চাই। এ কেমন প্রহসন?? কী হবে তার ফলাফল?? কী হবে তার পরিণতি?? স্পষ্ট কথা ফলাফল হবে অনিবার্য ধ্বংস তা আজ হোক বা দুদিন পরে হোক।
জাতি ও নীতির পারস্পরিক যোগসূত্রের সমন্বয় সাধন ব্যতীত জাতি তার প্রকৃত উন্নতি সাধন করতে পারে না।এজন্য প্রয়োজন নীতি ও নৈতিকতার সত্যনিষ্ঠ যথাযথ মূল্যায়ন ও সমন্বয় সাধন। একটি উদাহরণ – কেউ যদি সকালে পান্তা ভাত ও কাঁচা পেয়াজ দিয়ে পেটপুরে ভাত খেয়ে কিছুক্ষণ পরে একটা দীর্ঘ ঢেকুর তোলে তাহলে উক্ত ঢেকুরে কখনো মাংসের ঘ্রাণ আসবে না কাঁচা পেয়াজেরই গন্ধ আসবে।
তদ্রুপ “দূর্নীতি” তে আশ্রিত হয়ে উন্নতির জয়গান গেয়ে নিজেকে পরিচয় করালে লোকে তাকে নীতিবান বলবে না বরং তাকে দূর্নীতিবাজই বলবে।
কোথায় গেলো মানবতা?? কোথায় গেলো নীতি – নৈতিকতা??
জাতির প্রকৃত উন্নতি তখনই সম্ভব হবে যখন নীতি – নৈতিকতাকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে দূর্নীতিকে বিদায় দেবে ও ন্যায়- নিষ্ঠা প্রতিষ্ঠিত হবে। আজকের সিদ্ধান্ত পরবর্তী দিনের ফলাফল, আজকের কর্ম পরবর্তী দিনের ফল, এই কথায় যদি আমরা বিশ্বাসী হই তাহলে সমাজের গুরুত্বপূর্ণ লোকেরা কখনো দুর্নীতির আশ্রয় গ্রহণ করে সমাজ পরিচালনা করতে পারে না।
আমি চিরদিন থাকবো না তবে আমার কর্ম চিরদিনই পৃথিবীতে থেকে যাবে। আমি হয়তোবা সত্য বুঝেও সত্যনিষ্ট সমাজ ও বাস্তবতা মেনে নিতে পারছি না তবে এটা জাতির জন্য জরুরি সেটা অস্বীকার করা যাবে না। আমি অক্ষম তাই বলে সক্ষমতাকে হার মানানো যায় না কারন নীতির জয় সুনিশ্চিত।
দেশটার কথা যখনই চিন্তা করি মনটা খারাপ হয়ে যায়। দেশের জনগণ দিন দিন হিংস্র হয়ে যাচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করার জন্য মানুষ মানুষকে যখন তখন খুন করে ফেলছে, সহজেই! এই দেশের মানুষের রক্তে রক্তে দূর্নীতির বীজ রোপন হয়ে গেছে। এই বীজ ঠিক কতো বছর পর আমাদের রক্ত থেকে বিদায় হবে কে জানে! প্রতিটি সেক্টরে দূর্নীতি যা বারবার নিজেকে থমকে দেয়।
ন্যাপলিয়ন বলেছিলেন, “তোমরা আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদের একটা শিক্ষিত জাতি উপহার দেব।” তিনি এই সময়ে বাংলাদেশে জন্মালে বলতেন, “আমাকে একজন দূর্নীতিমুক্ত মা দাও, আমি তোমাদের একটি দূর্নীতিমুক্ত জাতি উপহার দেব!”। একটা বাচ্চা পৃথিবীতে আসার পর সকল মা তার সন্তানের দূর্নীতি নয় সুনীতি শিক্ষা দিন এই প্রত্যাশা সবার কাছে।
আসুন জাতির কথা চিন্তা করে দূর্নীতিকে বিদায় দিই ও সুনীতিকে আকড়ে ধরে জাতির জন্য ভালো কিছু করি। তাহলে বিজয় হবে মানবতার, বিজয় হবে মনুষ্যত্বের।
( ইদ্রিস আলী )