আশা করি সবাই ভালো আছেন। তো শুরু করছি নতুন বাসার অলৌকিক ঘটনা ৪ (শেষ পর্ব):
আমিতো অবাক, রাফিও কি তাহলে দেখেছিল ওই অদ্ভূত জিনিস টা, আমি কিছুই বলতে পারলাম না,,
রাফি: আমি সেদিন দেখেছিলাম একটা অদ্ভূত মানুষের অবয়ব। মানুষ যে ছিলো না এটা তো চোখ বন্ধ করেই বলে দেয়া যায়,,,
আমি: তবে কি ছিলো?
রাফি: তার মানে তুইও দেখেছিস,,,
আমি: একবার না, দু’বার।
রাফি: আমাকে বললি না কেন?
আমি: মনে করে ছিলাম আমার দেখার ভুল, কাউকে বললে শুধু শুধু হাসাহাসি করবে,, তাই নিজের মধ্যেই রাখছি। কিন্তু জিনিস টা কি,,,
রাফি: তা তো বলতে পারি না,, কিন্তু এটা জানি,, জিনিস টা তোদের এই বাড়ির আশেপাশেই থাকে,,
আমি: তুই কিভাবে জানিস?
রাফি: আমাদের বাড়িতে গিয়েছিলি তো, তোকে নিয়ে তো ছাদে উঠেছিলাম, কিছু লক্ষ্য করেছিলি?
আমি: কি লক্ষ্য করবো,,, লক্ষ্য করার কি আছে,,,
রাফি: আমাদের ছাদ থেকে তোদের ছাদ স্পষ্ট দেখা যায়।
আমি: তাতে কি?
রাফি: আমার বোনকে তোর সাথে বিয়ে দিলে,,আমার বোনকে দেখতে হলে তোর বাসায় আসতে হবেনা, আমি ছাদে উঠেই দেখতে পারবো!!!
আমিতো লজ্জা পেয়ে গেলাম!!!
আমি: কিসব যে বলিস,,,,(মুখে হাসি নিয়ে)
রাফি: ঢঙ্গ করিস না তো,,, আসল কথা শোন,, এখন তোদের বাসার ছাদে যদি কেউ রাতে ঘুরাঘুরি করে,, আমরা কিন্তু দেখতে পারি। মাঝে মাঝেই দেখি ওই জিনিস টা, তোদের বাসার ছাদে হাটাহাটি করে,,,
আমি: আমিও কিন্তু রাতে শব্দ পাই যে রাতে কেউ কিছু করছে ছাদে,,, কিন্তু এভাবে এর কত দিন,,, এর রহস্য তো জানতেই হবে,,
রাফি: তবে কি করা যায়,,,,
আমি: একটা কিছু প্ল্যান করতে হবে,, তুই বরং আজকে রাতে আমাদের বাসায় থাক,,, আজকে তুই আমি একসাথে ছাদে যাবো, শব্দ পাবার সাথে সাথে।
রাফি: ভয় পাবি না তো আবার,,,
আমি: আমি আর ভয়!!! কোনো চান্সই নাই,,,
রাফি: তবে রাতের খাবার খেয়ে আমি তাড়াতাড়ি চলে আসবো,,
আমি: ইয়ে মানে,, রিয়া কেও আনতে পারিস চাইলে,,,
রাফি: কেন?
আমি: না এমনি বললাম আর কি,, ওর একটু এডভেন্চার হতো,, ওই আর কি,,,
রাফি: আচ্ছা( হাসতে হাসতে)
রাতে যথারীতি রাফি আর রিয়া চলে এলো,,, রাত তখন বেশি না,, সাড়ে ৯ টা,,,
রিয়া: রূপক ভাইয়া,,, আর কতক্ষন চুপচাপ বসে থাকবো,,, আমার তো ঘুম এসে যাবে,,,,
আমি: ঐ, তুমি আমাকে এতো ভাইয়া ভাইয়া করো কেন,,, নাম ধরে ডাকলেই তো পারো,,, রূপক বলবা,,,
রিয়া:(রাফির দিকে একটু তাকিয়ে আমাকে বললো,,,) লজ্জা লাগে,,,
রাফি: তোদের লজ্জা আছে নাকি,,, বাবা কে বলবো রিয়া,, তোর বিয়ে দিয়ে দিতে,,
আমিতো লজ্জায় শেষ,
রিয়া: ভালোই হবে,,,( আসতে আসতে)
আমি: এখন কি করা যায়,, সময়তো যাচ্ছে না,,,
রিয়া: চলেন, এক গেম লুডু হয়ে যাক,,, দেখবেন সময় চলে যাবে,,,,
রাফি: ভালো কথা,,, চল লুডু খেলি,,
আমরা লুডু খেলায় ব্যস্ত হয়ে পরলাম,,, কথা ছিল এক গেম মাত্র,,, কিন্তু গেম খেললাম ৩ টা,,, সবাই ভুলেই গেলাম যে কেন আজকের আড্ডা,,,
ঘটনা শুরু হলো ১২ টা ২৫ মিনিটে,,,
রিয়া: রূপক ভাইয়া ভালো হবে না কিন্তু, আমার চুল ধরে টান দিলেন কেন!!!!
আমি: আমি আবার কখন তোমার চুল ধরলাম,, আজব!!!
রাফি: তোরা চুপ কর,, ঘটনা শুরু হয়ে গেছে,,,
আমি আর রিয়া চুপ,, আমি রিয়ার দিকে আর রিয়া আমার দিকে তাকিয়ে আছি,,,
রিয়া: আমরা এখন কি করবো, আমরা কি ছাদে যাবো?
আমি: যাবো তো অবশ্যই,, কিন্তু একটু পর,,, দেখি না ভূত বাবাজি আর কি কি করে,,,
রাফি: আমি ৩ টা ম্যাচ বক্স আনছি,,, হাতে রাখ একটা করে,,, যখন দেখবি সমস্যা হয়ে যাচ্ছে তখনই আগুন জ্বালাবি,,,,
আমি: আচ্ছা,,,
প্রথমে দেখলাম পায়ের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে ছাদ থেকে,, পরে মনে হলো একজন না,,, অনেক মানুষের পায়ের শব্দ,,,
আমরা ৩ জন আস্তে আস্তে ছাদের সিঁড়িতে গেলাম,,, তারপর দেখি আওয়াজ নেই,,, তারপর তাড়াতাড়ি ছাদে উঠলাম,,, দেখি কেউ, কিচ্ছু নেই,,, হঠাৎ মনে হলো আওয়াজ আসছে,, কিন্তু নিচে থেকে,,, পরে মনে হচ্ছে আমাদের ঘর থেকে, যে ঘর থেকে আমরা মাত্র আসলাম,, রিয়া ভয়ে আমার হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে,,,
তারপর রুমের দরজার কাছে আসলাম,, তখনও আওয়াজ আসছিলো,, যখনই দরজায় হাত রাখি তখনই সব কিছু স্তব্ধ,,,
আমরা আমার রুমে ঢুকলাম,,, সব স্বাভাবিক,,, তখন আমার চোখ গেলো জানালায়,,, দেখি ওই সোনালি অবয়ব বাড়ির দক্ষিণ কোণের কুয়ার পাশে দাঁড়িয়ে,,, এক মনে কি যেন দেখছে,,
আমরা সবাই আস্তে আস্তে ওই দিকে গেলাম,,, ওখানে গিয়ে দেখি অবয়ব নাই,, উধাও,,,
চারপাশে আমি আর রাফি কিছু পাওয়া যায় কিনা খুজছিলাম,,, ঠিক তখনই দেখলাম,,, রিয়া এক জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে,,, তারপর সামনে তাকিয়ে দেখি,,, রিয়ার সামনে এক বীভৎস কালো মূর্তি,,, যেটাকে দেখে আমার আর রাফির অবস্থাই খারাপ,,
সেই লম্বা কালো মূর্তি রিয়ার দিকে হাত বাড়াচ্ছে,,, আর রিয়া হয়তো হিতাহিত জ্ঞান হারিয়েছে,,,
আমি রিয়াকে একটান দিয়ে ওই জায়গা থেকে সরিয়ে ফেলার সাথে সাথে ওই কালো মূর্তি হাওয়ায় মিশে গেলো,,,,
রিয়াকে নিয়ে আমি মাটিতে পরে যাই,, পরে বুঝলাম মেয়েটা অত্যন্ত ভয়ে জ্ঞান হারিয়েছে,,
তাড়াতাড়ি ওই জায়গা থেকে রিয়া কে কোলে তুলে রুমে নিয়ে আসি,,, অনেক্ষন পর রিয়ার জ্ঞান ফিরে,,, সে ভয়ে কিছুই বলতে পারে না,,,
সকালে মামাকে আসতে বলি,, মামাকে সব বলি,,, মামা তারপর লোক লাগিয়ে ওই বন্ধ কুয়া টা পরিষ্কার করায়,,, কুয়া থেকে আশ্চর্য রকমের একটি হাঁড়ি বের হয়,,, এক হুজুর বলে ছিলো এই হাড়িতে নাকি অনেক জীন আটকে রাখা হয়ে ছিলো,,,,
পরবর্তীতে আর কিছুই হয় নি,,, আর ওই সোনালী বর্ণের অবয়ব আর দেখা যায় নি,,, আর কালো মূর্তিও না,,,,
আর রাফি এখনো আমার বন্ধু,, এবং আত্মীয়,,,, মানে রাফি মজার ছলে বললেও তার কথা রাখছে,,, রিয়া এখন আমার স্ত্রী,,,, বিয়ে হয়ে গেছে,,, কিন্তু আমাদের পড়াশোনা এখনো শেষ হয় নি,, রিয়া এবার ভার্সিটি প্রথম বর্ষে ,,, আর আমি একই ভার্সিটি তে তৃতীয় বর্ষে,,,,,
ভালো ওই চলছে আমাদের,,,,,
(সমাপ্ত)