Cheap price backlink from grathor: info@grathor.com

নিজের জীবনের জানা চরম সত্য কথা

 

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
আসসালামু আলাইকুম বন্ধুরা। আশা করছি আপনারা সবাই ভালো আছেন আল্লাহর অশেষ রহমতে আমিও ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ।আমি আজ আমার জীবনের কিছু কথা আপনাদের সাথে শিয়ার করতে চাই।
আমার দাদার বাবা ছিলেন ব্রিটিশ আমলের এক অত্যাচারী জমিদার। আমার মায়ের মুখ থেকে যতটুকু শুনেছি যে তিনি গরীব কৃষকদের থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ খাজনার থেকেও অধিক পরিমাণ খাজনা আদায় করতেন। এরকম জুলুম আবার সবার সাথে করতেন না বরং যেসকল কৃষকদের ঘরে সুন্দরী ও যুবতী স্ত্রী কিংবা মেয়ে আছে তাদের সাথেই এরকম করতেন। তিনি ছিলেন খুবই ধূর্ত প্রকৃতির লোক তিনি জানতেন যে অসহায় কৃষকরা খাজনা পরিপূর্ণভাবে আদায় করতে না পারলে তখন তাদের নিকট যাই চাওয়া হোক না কেন দিতে বাধ্য থাকিবে। তার জমিদার বাড়ির বড় একটি কামরা ছিল যেখানে তিনি সেসব অসহায় যুবতীদের নিয়ে আনন্দ ফুর্তি করতেন এবং বাংলা মদ সেবন করতেন। তার মোট সেরা সেরা সুন্দরী ৭জন স্ত্রী ছিল। তারা ছিলেন কেউবা গরীব কৃষকদের স্ত্রী কিংবা মেয়ে। যদি কোন কৃষক তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতো পরদিন তাকে আর খুজে পাওয়া যেতনা। তাই ভয়ে গ্রামের কৃষকরা মুখ বুঝে তার অত্যাচার সহ্য করে যেতেন দিনের পর দিন । তার প্রথম ছয়জন স্ত্রীর কারোরই কোন সন্তান ছিলনা কারণ তারা চাননি এই অত্যাচারী জমিদারের বীর্য দিয়ে কোন সন্তান জন্মদিতে কেননা রক্তের সম্পর্কে কিছুটা মিল থাকবেই। আমার দাদা ছিলেন ছোট স্ত্রীর একমাত্র ছেলে সন্তান। শুনেছি দাদা যেদিন জন্ম নেন সেদিন নাকি দাদার বাবা পুরো গ্রামের যত গরীব কৃষক ছিলেন সবাইকে ঘটা করে শিন্নি খায়েছিলেন। কিন্তু এই সামান্য খাবারের বিনিময়ে কী আর গ্রামবাসীরা সব ভুলে যাবে? কারণ তার অত্যাচারে তারা হারিয়েছে নিজের স্ত্রী ও মেয়েদেরকে। আমার দাদা ছিলেন জমিদার বংশের একমাত্র উত্তরাধিকারী। প্রথম ছয় স্ত্রী চান নি এই জালিমের সন্তান তাদে গর্ভে আসুক। ছোটবেলা থেকেই আমার দাদা তার বাবার অতি আহ্লাদে এবং বিভিন্ন অপকর্ম দেখে দিন দিন তার বাবার থেকেও দুর্ধর্ষ হয়ে উঠেছিল। গ্রামের মধ্যে যত অপকর্ম হতো তা আমার দাদার দ্বারাই সংঘটিত হতো।

হঠাৎই দাদার বাবার এক আশ্চর্যজনকভাবে মৃত্যুবরণ করেন। জমিদার বাড়ির পঁচা ডোবায় তার লাশ পাওয়া গিয়েছিল। গ্রামবাসী সেদিন নাকি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেছিল এমন একটি শয়তানের নিকৃষ্ট সেই মৃত্যুতে। কিন্তু তবুও তাদের স্বস্তির নিশ্বাস ফেলার মতো অবস্থা ছিল না। কারণ ছোট খেলোয়ারের হয়তো সমাপ্তি ঘটেছে কিন্তু বড় খেলোয়ার এখনো রয়ে গেছে। দাদার বাবার মৃত্যুর কয়েক বছর পরই মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার দাদা ছিলেন এক তাগড়া যুবক। কিন্তু তিনিও তার বাবার মতোই ধূর্ত আর ভীতু ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিকে যখন পাকবাহিনী দেশে তান্ডব চালাচ্ছিল তখন দাদা নিরুপায় হয়ে পাক বাহিনীর সাথে হাত মিলিয়েছিলেন এবং নিজ বাড়িতে এনে তাদের পেট পুড়ে খাওয়াতেন এমনকি গ্রামের সুন্দরী তরুণীদের জোড়পূর্বক ধরে এনে পাকবাহিনীর খায়েশ মেটানোর দায়িত্বে ছিলেন। যখন বাঙালীর বিজয়ের দিন ক্রমেই ঘনিয়ে এসেছিল তখন দাদা আবার উল্টোপথে মোড় নিলেন। এমনকি নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা ঘোষণা দিতেও ভুললেন না। গ্রামবাসী তার রাজাকারী কর্মকান্ড নিজের চুখে দেখেও কিছু বলতে পারেনি। কারণ তারা তখনো ছিল তার শিকলে বন্ধি।

কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের পর আর আগে মতো তার কর্তৃত্ব ছিল না। তখন তিনি আর বেশি অপকর্মও গ্রামে চালাতে পারতেন না। কারণ গ্রামের যুবক যোদ্ধাদের রক্ত ছিলো গরম। তাই গ্রামবাসী তাকে আগের মতো ভয় পেতোনা। কিছু করলেই গ্রামের মানুষ এক হয়ে রুখে দাড়াতো। আমার দাদা তিনটি বিয়ে করেছিলেন যার মধ্যে আমার বাবা ছিলেন ছোট ঘরের একমাত্র সন্তান। তাই আদর স্নেহটাও একটু বেশি ছিল। একবার দাদা গ্রামে অপকর্ম করার পর পুলিশের হাতে হয়রানির স্বীকার হন। তখন থেকেই তার মধ্যে এক ধরণের আক্রোশের জন্ম নেয়। তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন ছেলেদের মধ্যে একজনকে তিনি পুলিশ বানাবেন এবং থানা থাকবে তার হাতের মুঠোয়। তাই আট ছেলের মধ্যে অতি আদরের ছোট ছেলে অর্থাৎ আমার বাবাকে শহরে পড়ালেখার জন্য পাঠিয়ে দেন। একমাত্র বাবা বাদে কেউই এই বংশে কখনো বই কী জিনিস তা চিনে না। মায়ের সাথে বাবার পরিচয় কলেজ লাইফেই। তখন থেকেই তারা একে অপরকে ভালোবাসতে শুরু করেন। আমার মা ছিলেন খুবই বাস্তবধর্মী একজন মহিলা। তিনি বাবাকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন যে পৃথিবীতে যারা সকল শ্রেণীর মানুষদের সাথে থাকবে তারাই সার্থক। বাবার পুঁথিগত বিদ্যা থেকে জ্ঞানার্জন এবং মায়ের অনুপ্রেরণা ও ভালোবাসাই একসময় বাবার মাইন্ড সেট আপ পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়। বাবা বুঝতে পেরেছিলেন যে দাদা তাকে পুলিশ বানাতে চায় কেবল নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য যাতে শত অপকর্ম করেও গ্রামে তার কর্তৃত্ব বজায় থাকে।

একসময় নানা বাড়িতে বাবা মায়ের বিয়ে হয় কারণ এতে দাদার সম্মতি ছিল না। বাবার সাথে দাদার শেষ উক্তিটি ছিল,,

তোর মতো হারামজাদারে কী আমি এই কারণে পড়ালেখা করতে পাঠাইছি? তোর পিছনে টাকা খরচ না কইরা যদি শুয়োর পালতাম তাইলেও অনেক ভালো হইতো। যাহ তোর মতো হারামজাদা আমার দরকার নাই। আমার সামনে যদি পরোস তাইলে ডাইরেক কবরে ঢুকাইয়া দিমু।

বাবা সেদিন ত্যাজ্য হওয়ার কারণে নিজের চোখ থেকে কিছুটা অশ্রু বিসর্জন দিয়েছিলেন। কিন্তু আমার মা খুব বুদ্ধিমত্তার সাথে বাবাকে বুঝিয়েছেন,

অন্ধকার জগৎ থেকে আলোতে ফিরে আসতে হলে যদি আপনজনকে বিসর্জন দিতেও হয় তবুও সেটা চিরজীবন সার্থকতার একটি ছাপ রেখে যাবে। এটাই হলো বড় পাওয়া।

মাঝে মাঝে আমিও নিজেকে গর্বিত মনে করি এমন একজন মা কে পেয়ে যে একটি পুরুষকে অন্ধকার জগৎ থেকে আলোর পথে ফিরিয়ে এনেছে।

আজকের আর লিখছি না।আমি যতটুকু জানি আপনাদের কে জানালাম। ভুল হলে ক্ষমা করবেন আর ভালো লাগলে লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার করতে ভুলবেন না। এতক্ষণ আমার সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
আল্লাহ হাফেজ।

Related Posts

7 Comments

Leave a Reply

Press OK to receive new updates from Firstsheba OK No